এনডিটিভি জানিয়েছে, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে এই আহ্বান জানায়।
সেখানে বলা হয়, “ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে পাকিস্তান একতরফা কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে আমরা খবর পাচ্ছি।”
পাকিস্তান যে যুক্তিতে এসব পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছে তার সঙ্গে ‘বাস্তবতার মিল নেই’ দাবি করে বিবৃতিতে বলা হয়, “আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে একটি উদ্বেগজনক চিত্র তারা বিশ্বকে দেখাতে চায়, আর এটাই তাদের উদ্দেশ্য।”
নরেন্দ্র মোদীর সরকার কাশ্মীরের ভারত নিয়ন্ত্রিত অংশের বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা রদ করে কেন্দ্রের শাসন জারি করার পর তাকে ‘অবৈধ’ দাবি করে পাকিস্তানের তরফ থেকে সম্ভব সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিল ইমরান খানের সরকার।
এর অংশ হিসেবে ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বন্ধের পাশাপাশি কূটনৈতিক সম্পর্ক সীমিত করার ঘোষণা দেয় পাকিস্তান। ভারতের রাষ্ট্রদূতকেও পাকিস্তান থেকে বহিষ্কার করা হয়।
পাশাপাশি দুই দেশের বিভিন্ন চুক্তি পর্যালোচনা করে দেখা, কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের বিষয়টি জাতিসংঘে তোলা, ১৪ অগাস্টে পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবসকে কাশ্মীরিদের জন্য সৌহার্দ্য দিবস ঘোষণা এবং ভারতের স্বাধীনতা দিবস ১৫ অগাস্টকে ‘কালো দিবস’ হিসাবে পালনের ঘোষণা দেওয়া হয় ইসলামাবাদের পক্ষ থেকে।
ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ দাবি করে, আবার দুই দেশই কাশ্মীরের একটি অংশের নিয়ন্ত্রণ করে।
ভারতের সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদে জম্মু ও কাশ্মীরকে নিজেদের সংবিধান ও আলাদা পতাকা রাখার স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছিল। স্থায়ী বাসিন্দাদের বাইরে কেউ কাশ্মীরের জমির মালিকও হতে পারতেন না।
ওই অনুচ্ছেদের কারণে এতদিন ভারতের সব আইন জম্মু ও কাশ্মীরের ওপর খাটতো না। পররাষ্ট্র নীতি, প্রতিরক্ষা এবং যোগাযোগ বাদে অন্য সব বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের যে কোনো আইন বা পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করতে হলে জম্মু ও কাশ্মীরের আইনসভার মতামত নেওয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল।
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ গত ৫ অগাস্ট পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রপতির আদেশে সংবিধানের ৩৭০ ধারা রদ করার কথা জানান। পরদিন রাজ্যসভায় বিল পাসের মধ্য দিয়ে জম্মু ও কাশ্মীর থেকে লাদাখকে আলাদা করে ফেলা হয়। জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ এখন আলাদা দুটো কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল, যেখানে ভারতের সংবিধান পুরোপুরিভাবে প্রযোজ্য হবে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) দীর্ঘদিন ধরেই কাশ্মীরের এ বিশেষ মর্যাদা তুলে নেওয়ার পক্ষে প্রচার চালিয়ে আসছিল।
নতুন এ পদক্ষেপ ১৯৮৯ সাল থেকে ওই এলাকায় উত্থান ঘটা সশস্ত্র বিদ্রোহীদের প্রভাব কমিয়ে নয়াদিল্লির শাসন আরও পোক্ত করবে বলেও আশা ক্ষমতাসীনদের।
অন্যদিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের শঙ্কা, এর মধ্য দিয়ে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা রদ করার মাধ্যমে ভারত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরের জনসংখ্যাতাত্ত্বিক চেহারা পরিবর্তনের সুযোগ পাবে।
পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়ার জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, “৩৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে যা হচ্ছে তা পুরোপুরি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। ভারতের সংবিধান সার্বভৌম। এ অঞ্চলে আতঙ্কজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে- এমন একটি ধারণা প্রচার করে এই সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপ করার কোনো চেষ্টা সফল হবে না।”
বিবৃতিতে বলা হয়, “পাকিস্তান যে পদক্ষেপ নিয়েছে তাতে ভারত সরকার মর্মাহত। ভারত ওই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানাচ্ছে, যাতে কূটনৈতিক যোগাযোগের স্বাভাবিক পথ খোলা থাকে।”