ভারতের ভোট: প্রথমবারের ভোটাররাই ভবিষ্যৎ

ভারতে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে নির্ণায়ক হয়ে উঠতে পারেন সদ্য ভোটাধিকার পাওয়া তরুণ-তরুণীরা৷ পশ্চিমবঙ্গে এমন ভোটারের সংখ্যা অনেক৷

>>শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়, ডয়চে ভেলে বাংলাবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 March 2019, 03:47 AM
Updated : 21 March 2019, 03:47 AM

১১ এপ্রিল থেকে ১৯ মে মোট সাত দফায় ভোট হবে ভারতের লোকসভার ৫৪৩টি আসনে৷ ভোট দেবেন ৮৪ কোটি ৩০ লাখ ভোটার, যাদের মধ্যে দেড় কোটি এবারই প্রথম ভোটার হয়েছেন।

এই নতুন ভোটারদের বয়স ১৮-১৯ বছর৷ দেড় কোটি সংখ্যাটা নেহাত কম নয়৷ জনমত সমীক্ষায় সে কারণেই বারবার উঠে আসছে এই নবীন ভোটারের আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা৷

নতুন ভোটারের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি পশ্চিমবঙ্গে, ২০ লাখ ১০ হাজার৷ তারপরেই আছে উত্তরপ্রদেশ, সেখানে ১৬ লাখ ৭০ হাজার, মধ্যপ্রদেশে ১৩ লাখ ৬০ হাজার৷

বিদায়ী সরকারের কাজে কতটা সন্তুষ্ট তারা? নতুন সরকারের কাছে প্রত্যাশাই বা কী? কারা সরকারে স্থিতাবস্থার পক্ষে? কারা পরিবর্তন চাইছেন?  এসব প্রশ্ন ভোটের আগে বারবার উঠে আসছে সংবাদ মাধ্যমে৷

পুরো ভারতের নবীন ভোটারদের প্রতিক্রিয়া দেখলে একটি বিষয় সবার ক্ষেত্রেই স্পষ্ট হয়, এরা সবাই ভবিষ্যতের কর্মসংস্থানের সম্ভাবনার কথা ভাবছেন৷ উচ্চশিক্ষার সুযোগ-সুবিধা নিয়েও তাদের প্রত্যাশা আছে৷

পাশাপাশি সমাজে নারীর সুরক্ষার বিষয়টি নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন৷ দেশে যে ধর্মীয় উত্তেজনা, সাম্প্রদায়িক টানাপড়েন রয়েছে- তা নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে অনেকের৷

অবশ্য নবীন ভোটারদের সবাই যে সমাজ, সময়, চলতি রাজনীতি নিয়ে খুব সচেতন, তেমনটাও বলা যাচ্ছে না৷

ডয়চে ভেলের পক্ষ থেকে কথা বলা হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের এমন তিনজনের সঙ্গে, যারা এবারই প্রথম ভোট দেবেন৷

এদের একজন কলকাতার বাসিন্দা সৃঞ্জিতা, পড়েন কলেজে৷ তিনি স্পষ্ট করেই বললেন, কেন্দ্রে  বিজেপি আর রাজ্যে  তৃণমূল- পরস্পরের প্রতিপক্ষ এই দুই রাজনৈতিক দলের কারো ভূমিকাতেই তিনি খুশি নন৷

কাজেই তিনি হয়ত ‘নান অফ দ্য অ্যাবাভ' লেখা ঘরে ভোট দেবেন৷ কোনো প্রার্থীর পক্ষেই যাবে না তার রায়৷

সৃঞ্জিতা নিজে যেহেতু সরাসরি সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত নন, মূল ইস্যুগুলো তার নজর এড়িয়ে গিয়ে থাকতে পারে।

যেমন তিনি বললেন, ‘‘আমি যেহেতু পশুপ্রেমী, যেমন (গরুকে) গোমাতা হিসেবে দেখেছে, এবং ওদের আলাদা করে (দেখভাল করার) ব্যবস্থা করেছে, আমি খুব খুশি এটা নিয়ে৷ অন্য জীবজন্তুর জন্যও এই জিনিসটা করা উচিত৷ কুকুর, বেড়াল, এদেরও যত্ন নেওয়া উচিত৷”

সৃঞ্জিতার কথাতেই স্পষ্ট যে, গোমাতা সংরক্ষণের পেছনে যে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি, সেটা তার সরল চোখে ধরা পড়েনি৷ তিনি একে সামগ্রিকভাবে পশু-পাখির যত্ন হিসেবেই দেখছেন৷ এ কারণে তার মনে হয়, এমন যদি কোনো দল থাকত, যারা পরিবেশ বা জীবজন্তুর সুরক্ষা, সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করে, তা হলে তিনি তাদেরই ভোট দিতেন৷

মফস্বলের বাসিন্দা অনন্য মনে করেন, তিনি মোটামুটিভাবে রাজনীতি-সচেতন। অর্থাৎ, রাজনীতির খবর রাখেন; খবরের কাগজ, টিভিতে নজর থাকে৷ কিন্তু সক্রিয় রাজনীতি থেকে তিনি দূরে থাকেন৷

এক মাস পরে নিজের ভোটটি কাকে বা কোন দলকে দেবেন, তা এখনো ঠিক করে উঠতে পারেননি অনন্য৷ তিনি সোজাসুজিই বলেছেন, এসব ব্যাপারে মাথা ঘামানোর ‘সময় হয় না'৷

ভারতের বিপুল সংখ্যক নতুন ভোটারের মধ্যে অনন্য ব্যতিক্রম নন, বরং তার বাস্তবতাই বেশিরভাগ তরুণ ভোটারের বাস্তবতা।

সদ্য উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়া বা সম্প্রতি কলেজে ভর্তি হওয়া, বৃত্তিমূলক পড়াশোনার প্রবেশিকা পরীক্ষার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত বহু ছাত্র-ছাত্রী ভোট বা রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামান না আজকাল৷

অনন্য বলেছেন, নিজের ভোটটি দিতে তিনি কেন্দ্রে যাবেন। প্রার্থী নয়, দল দেখে ভোট দেবেন৷ কিন্তু এমন অনেকেই আছে, যাদের ভোট দেওয়ার বয়স হলেও ভোট দেবেন না। এমনকি ভোটার পরিচয়পত্র পর্যন্ত বানানোর চেষ্টা করেননি৷ এদের সবার বক্তব্য অনন্যর মতই– ‘সময় নেই'।

পড়ালেখা বা ভবিষ্যতের ভাবনায় মগ্ন থাকলেও অনেকেই আবার রাজনৈতিক চিন্তাভাবনার দিক দিয়ে বেশ স্পষ্ট। এ বিষয়ে তাদের প্রকাশও বেশ স্বচ্ছন্দ৷ কলেজছাত্রী মধুমতী এরকমই একজন।

এই নতুন ভোটার ডয়চে ভেলেকে বললেন, ‘‘এখন ভোট ব্যাপারটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নেগেটিভ ভোটিং৷ আমি রাহুলকে ভোট দিচ্ছি মানে এই নয় যে রাহুলকেই ভোট দিচ্ছি৷ হয়ত মোদীকে চাইছি না বলেই রাহুলকে ভোট দিচ্ছি৷ রাজ্য হোক, কেন্দ্র হোক, এই নেগেটিভ ভোটিং ব্যাপারটা হয়৷''

একই ধরনের কথা বলেছিলেন সৃঞ্জিতা৷ কিন্তু কোনো প্রার্থীকেই তার পছন্দ নয়, ভোটের সময় সেটা জানান দেওয়ার চেয়েও বেশি পরিণতমনস্ক চিন্তা নিঃসন্দেহে এই প্রবণতাকে ব্যাখ্যা করতে পারা যে, কেউই ভালো নয়, কিন্তু দুজনের মধ্যে যিনি একটু কম খারাপ, তিনি ভোটটা পাবেন৷ এভাবেই নিজের রাজনৈতিক অবস্থান নিশ্চিত করবে আগামী প্রজন্ম৷