`হৃদয়বিদারক’ ছবিতে একদিনেই উঠল ৩০ লাখ রুপি

বাবার মৃতদেহের পাশে কান্নারত এক ছেলের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর একদিনেই ওই পরিবারের জন্য ৩০ লাখ রুপির বেশি সাহায্য তুলেছে ভারতীয়রা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Sept 2018, 08:14 AM
Updated : 19 Sept 2018, 08:33 AM

টুইটারে ছবিটি সাত হাজারেরও বেশি বার শেয়ার হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

২৭ বছর বয়সী অনিল দিল্লিতে পরিচ্ছন্নতা কর্মীর কাজ করতেন। ড্রেনে নামতে গিয়ে শরীরে আটকানো দড়ি আকস্মিকভাবে ছিড়ে গিয়ে নিচে পড়ে মৃত্যু হয় তার।

সোমবার হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদক শিব সানি অনিলের লাশের পাশে তার ছেলের কান্নার ছবিটি টুইট করেন।

বাবার মৃতদেহের পাশে ১১ বছরের ছেলের কান্নার দৃশ্যটি তাকে ‘নাড়া দিয়েছিল’, বিবিসিকে জানান সানি।

“আমি একজন অপরাধ বিষয়ক প্রতিবেদক, বেদনাদায়ক অসংখ্য মুহুর্ত দেখেছি আমি; কিন্তু এটা এমন কিছু ছিল, যা আমি আগে কখনো দেখিনি,” বলেন তিনি।

অনিলকে দাহ করার আগ মুহুর্তে ওই ছবিটি তোলেন হিন্দুস্তার টাইমসের এ প্রতিবেদক।

“নর্দমা পরিষ্কার করা কর্মীদের মৃত্যুর বিষয়ে মনোযোগ বাড়াতে চেয়েছি আমি, এটি (ছবি) ওই পরিবারের দুর্দশার গল্প তুলে ধরেছে,” বলেন সানি।

এ প্রতিবেদক জানান, অনিলের পরিবার এতই দরিদ্র যে তাকে দাহ করার মতো টাকাও তাদের ছিল না, পরে প্রতিবেশীদের কাছ থেকে ধার নিয়ে সৎকার করতে হয়।

দিল্লির এ পরিচ্ছন্নতা কর্মীর চার মাস বয়সী সন্তানও সপ্তাহখানেক আগে নিউমোনিয়ায় মারা গেছে, জানান প্রতিবেশীরা। টাকা না থাকায় অনিল মৃত্যুপথযাত্রী সন্তানের জন্যও ওষুধ কিনতে পারেননি। তার সাত ও তিন বছর বয়সী দুটি মেয়েও আছে।

হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদক সানির ওই ছবি দৃষ্টি কাড়ে ভারতে কাজ করা এনজিও উদয় ফাউন্ডেশনের। তারা পরে ক্রাউডফান্ডিং প্ল্যাটফর্ম কেটোর মাধ্যমে পরিবারটির জন্য অর্থ সংগ্রহ শুরু করে; যার ফল হয় দুর্দান্ত।

“এটা অবিশ্বাস্য,” একদিনেই ৩০ লাখ রুপির বেশি সাহায্য আসার দিকে ইঙ্গিত করে বলেন সানি।

বলিউড অভিনেতারাও তার কাছে অনিলের পরিবারকে কী করে সাহায্য করা যায়, তা জানতে চেয়েছেন; দরিদ্রদের অনেকে অনিলের পরিবারকে এমনকী ১০ রুপি করেও সাহায্য করেছেন, জানান সানি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবি নিয়ে নানান জিজ্ঞাসা ও মন্তব্য দেখে অনিলের পরিবারের সঙ্গে ফের দেখা করেন হিন্দুস্তান টাইমসের এ অপরাধ বিষয়ক প্রতিবেদক। কথা বলেন অনিলের শোকার্ত ছেলের সঙ্গেও, বাবা ড্রেন পরিষ্কারে ঢুকলে যাকে অনেক সময়ই বাইরে দাঁড়িয়ে কাপড়চোপড় ও জুতা পাহারা দিতে হতো।

“বাবা প্রায়ই বলতো, আমার এখনো ড্রেনে ঢোকার সময় হয়নি,” ছেলেটি এমনটাই বলেছে বলে হিন্দুস্তান টাইমসকে জানিয়েছেন সানি।

‘হৃদয়বিদারক’ ছবিটির কারণে যে সাহায্য উঠেছে তা দিয়ে অনিলের ছেলেমেয়েরা স্কুলে যেতে পারবে বলেও আশাবাদী সানি।

“মানুষ যেভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, এবার বোধহয় তাদের ভবিষ্যৎ আছে,” বলেন এ সাংবাদিক।

পুলিশের তদন্তে ড্রেনে নামার সময় অনিলের শরীরে যে দড়ি পেঁচানো ছিল, সেটি তেমন শক্ত ছিল না বলে বেরিয়ে এসেছে। নামার সময় অনিল সতর্কতামূলক উপকরণ পরেননি বলেও জানিয়েছে তারা, খবর এনডিটিভির।

চলতি মাসে দিল্লিতে একটি নর্দমা শোধনাগার পরিষ্কার করতে গিয়েও ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। ওই ঘটনাতেও পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা সতর্কতামূলক উপকরণ না পরায় পুলিশ তাদের সুপারভাইজারকে গ্রেপ্তার করেছে।

প্রতি বছর ভারতে এভাবে গড়ে প্রায় ১০০ পরিচ্ছন্নতা কর্মীর মৃত্যু হয় বলে বিভিন্ন পরিসংখ্যানে ধারণা পাওয়া গেছে। প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা উপকরণ না দেওয়ায় এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের ইউনিয়নগুলোর।