তিনি বলেন, এভাবে জনগণের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার ক্ষমতা দখল করে থাকার পাঁয়তারা করছে।
সোমবার দিল্লিতে পার্লামেন্টে সরকারকে এ বিষয়ে বিরোধীদলের নেতাদের তোপের মুখে পড়তে হয়েছে।
দিল্লি রওয়ানা হওয়ার আগে এক সংক্ষিপ্ত সংবাদ সম্মেলনে মমতা অভিযোগ করে বলেন, যারা ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টিকে (বিজেপি) ভোট দেয়নি তাদের চিহ্নিত করে বিচ্ছিন্ন করে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে।
“তারা ভারতীয়দের তাদের নিজদেশেই শরণার্থী বানিয়ে ছেড়েছে।”
“অনেক মানুষকেই বিদেশি হিসেবে চিহ্নিত করে বিতাড়নের কথা বলা হচ্ছে। তাদের মধ্যে অনেক শিশু ও নারী রয়েছে.. যাদের অনেকে বাঙালি, বিহারি, হিন্দু, মুসলিম এবং তারা অবশ্যই ভারতীয়।”
সোমবার ভারতের ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেন্স (এনআরসি) আসাম রাজ্যে নাগরিকপঞ্জির সংশোধিত খসড়া তালিকা প্রকাশ করে। উত্তর-পূর্ব আসামের ৪০ লাখের বেশি বাসিন্দা ওই তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন। যা নিয়ে রাজ্যে উত্তেজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
আসামে মোট তিন কোটি ২৯ লাখ বাসিন্দা নাগরিকত্বের আবেদন করেছেন, যার মধ্যে দুই কোটি ৮৯ লাখের তালিকায় ঠাঁই হয়েছে।
অবৈধ বাংলাদেশিদের চিহ্নিত করে তাদের ফেরত পাঠানোর লক্ষ্যেই এএনআরসি’র নাগরিকপঞ্জি চূড়ান্ত করা হচ্ছে বলে এর আগে জানিয়েছিল আসাম সরকার।
নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য বাসিন্দাদের আবেদনপত্রের সঙ্গে ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের আগে থেকে রাজ্যে বসবাস করছেন এমন প্রমাণপত্র দিতে হচ্ছে।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি প্রকাশিত প্রথম তালিকায় মাত্র এক কোটি ৮০ লাখ মানুষের নাম ছিল। সংশোধিত তালিকায় আরো এক কোটির বেশি নতুন নাম যোগ হয়েছে।
তবে সোমবার প্রকাশিত তালিকাটিও চূড়ান্ত নয়; যাদের নাম নেই তারা আপিল করার সুযোগ পাবেন বলে জানায় আসাম সরকার। এ তালিকা ধরে এখনই কাউকে গ্রেপ্তার বা বিতাড়নও করা হবে না।
সর্বশেষ তালিকা থেকে যারা বাদ পড়েছেন তারা যথাযথ প্রমাণ নিয়ে আগামী ৩০ অগাস্ট থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আবেদন করতে পারবেন।
নাগরিকপঞ্জি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করবেন জানিয়ে মমতা আরো বলেন, “আমি দলের কয়েকজন এমপি’কে আসাম পাঠাচ্ছি। প্রয়োজন পড়লে আমিও সেখানে যাব।
“বিভেদ সৃষ্টি করে শাসনের এই কৌশলে জনগণ আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে...এটি মানবতাকে ধ্বংস করে দেবে।”
বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসীদের চিহ্নিত করতে এনআরসি ১৯৫১ সালে প্রথমবার আসামের নাগরিকপঞ্জি প্রকাশ করে।
এরকম বড় একটি পদক্ষেপ নেওয়ার আগে আসাম সরকারের প্রতিবেশী পশ্চিম বঙ্গ সরকারের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত ছিল বলে মনে করেন মমতা।
তিনি বলেন, “প্রতিটি রাজ্যে অন্য রাজ্য থেকে আসা লোকজন বাস করে। গুজরাট বা মহারাষ্ট্রের অনেক মানুষও আমাদের এখানে বাস করছে।”
ওদিকে, সোমবার পার্লামেন্টে মমতা ছাড়াও, প্রধান বিরোধীদল কংগ্রেস, সিপিএম ও সমাজবাদী দল এই তালিকার বিরুদ্ধে বক্তব্য দেয়।
তাদের বক্তব্য, এটি ‘মানবাধিকার ও মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারকে বিপন্ন করেছে।”
জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ বলেন, “কিছু মানুষ অকারণে আতঙ্কজনক পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করছে। এটি একটি খসড়া তালিকা, চূড়ান্ত কিছু নয়।”
তিনি সব রাজনৈতিক দলের প্রতি এরকম একটি ‘সংবেদনশীল বিষয়ে আতঙ্ক না ছড়ানোর’ অনুরোধ করেছেন।
“এটি নিয়ে রাজনীতি করা উচিত হবে না।”