হিন্দু পণ্ডিতের কবিতায় মহানবীর প্রশস্তি

গরু জবাই থেকে শুরু করে বিভিন্ন আচার নিয়ে যখন ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা চলছে ভারতে, তখন ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর প্রশস্তি গেয়ে চলেছেন এক হিন্দু পণ্ডিত।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 May 2018, 05:59 AM
Updated : 27 May 2018, 06:11 AM

মুম্বাইয়ের যার কবিতায় উঠে এসেছে মহানবীর প্রশস্তি, সেই পণ্ডিত রাম সাগর পৃথ্বিপাল ত্রিপাঠীর পরিবার আবার রাম লীলা বিন্যাসের পৃষ্ঠপোষক, যারা অযোধ্যার রাম মন্দিরের ট্রাস্টি।

কিন্তু ৬৮ বছর বয়সী সাগর ত্রিপাঠী নিজেকে পরিচিত করেছেন ভিন্ন ভাবে, শায়রি বা কবিতার মাধ্যমে। তার কবিতায় আসছে স্রষ্টার প্রশস্তির সঙ্গে মুহাম্মদ (সা.) এর প্রশংসা।

কেন- উত্তরে সাগর ত্রিপাঠী টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন, “নবী মুহাম্মদ শুধু মুসলিমদের নন, তিনি বিশ্ব মানবতার। তাই তার কাছে করুণা চাওয়ায় কোনো ভুল নেই।”

ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হিসেবে নয়, মুহাম্মদ (সা.)কে সাগর ত্রিপাঠী দেখেন মানবতার প্রতীক হিসেবে, সাম্প্রদায়িকতার সম্প্রীতির প্রচারক হিসেবে।

টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, মুম্বাইয়ে যে ফ্ল্যাটে সাগর ত্রিপাঠী থাকেন, সেখানে তার অর্জিত বিভিন্ন পুরস্কারের সঙ্গে রয়েছে মুসলিমদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কুরআন, মুহাম্মদ (সা.) এর জীবনী। সেই সঙ্গে আছে হিন্দুদের পবিত্র গ্রন্থ গীতা ও রামায়ন। তার বসার ঘরে বিশাল সোফার পেছনে রয়েছে কিছু জায়নামাজ, যাতে তার মুসলিম ভক্তরা এলে নামাজ পড়তে পারেন।

রাম সাগর পৃথ্বিপাল ত্রিপাঠী। ছবি: টাইমস অব ইন্ডিয়ার সৌজন্যে

অযোধ্যার পণ্ডিত পরিবারের একজন হয়ে বাবরি মসজিদের স্থানে রাম মন্দির নির্মাণের বিষয়টিকে কীভাবে দেখেন- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “এটি এখন আদালতে বিচারাধীন বিষয়, আমি বেশি কিছু বলতে চাই না।

“তবে এটুকু বলতে পারি, যদি মানুষ তাদের অহমবোধ ছাড়ে, আর রাজনীতিকরা দূরে থাকে, তবে এই সমস্যার সমাধান সহজেই সম্ভব।”

উত্তর প্রদেশের সুলনতাপুর জেলায় জন্ম নেওয়া সাগর ত্রিপাঠীর কবি হয়ে ওঠা সহজ ছিল না। এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়ার পর পরিবার চাইছিল,  তাদের ছেলে হবে সরকারি কর্মকর্তা।

কিন্তু উর্দু কবি রঘুপতি সাহাই ফিরাকের প্রভাবে কবিজীবনই বেছে নেন সাগর ত্রিপাঠী।

“আমার মনে হয়েছিল, আমি বরং তার জন্য চা-পানি আনা নেওয়া করব, আর তার কবিতা শুনব,” হাসতে হাসতে বলেন সাগর ত্রিপাঠী।

তরুণ বয়সে মুম্বাইয়ে পাড়ি জমানোর পর অর্থ রোজগার ভালোই করেছিলেন তিনি।

“কিন্তু তার মধ্যেও আমি মনের মাঝে এক ধরনের শূন্যতা অনুভব করতাম, মনে হত কী যেন নেই, আমার সেই শূন্যতা ভরিয়ে দিয়েছে কবিতা।”

সাগর ত্রিপাঠীর প্রশংসা করে খ্যাতিমান উর্দু কবি আবদুল আহাদ সা‘জ টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন, “সমকালীন উর্দু মুশায়রা (কবিতার আড্ডা) জগতে সাগর সাহেব একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম, তার কাজ সত্যিই প্রশংসনীয়।”