ভারতের প্রধান বিচারপতির অভিশংসন চেয়ে রাজ্যসভায় প্রস্তাব

ভারতের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রর বিরুদ্ধে ‘ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্ব্যবহারের’ পাঁচ অভিযোগ এনে তার অভিশংসন চেয়ে রাজ্যসভায় প্রস্তাব তুলেছে কংগ্রেসসহ সাতটি বিরোধী দল।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 April 2018, 02:25 PM
Updated : 20 April 2018, 03:11 PM

শুক্রবার দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষ রাজ্যসভার চেয়ারম্যান ভেঙ্কাইয়া নাইডুর কাছে ৬৪ এমপির স্বাক্ষর সম্বলিত এই আবেদন জমা দেওয়া হয়েছে বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে।

ভারতের ইতিহাসে এখনও কোনো প্রধান বিচারপতিকে অভিশংসিত হতে হয়নি। বিরোধী দলগুলোর এই প্রস্তাবের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভাইস প্রেসিডেন্ট আইনি পরামর্শ নেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিচারক বিএইচ লয়ার মৃত্যু তদন্তের আবেদন খারিজ করে সুপ্রিম কোর্ট রায় দেওয়ার পরদিন বিরোধী দলগুলো এই পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে কংগ্রেসের দাবি, ওই রায়ের সঙ্গে তাদের এই প্রস্তাবের কোনো সম্পর্ক নেই।

ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির শীর্ষ নেতা অমিত শাহ ২০০৫ সালে গুজরাটের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড’ চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে একটি মামলা হয়েছিল নিম্ন আদালতে। ২০১৪ সালে ওই মামলার বিচার চলাকালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান বিচারক লয়া; দায়িত্ব নেওয়া নতুন বিচারক বিজেপিপ্রধানকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেন।

বিচারক লয়ার মৃত্যুর তদন্ত চেয়ে করা আবেদন বৃহস্পতিবার খারিজ করে দেয় দীপক মিশ্র নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চ।

বিচারপতি দীপকের অভিশংসন চেয়ে করা আবেদনে তার বিরুদ্ধে স্পর্শকাতর মামলাগুলো পছন্দের বেঞ্চে দেওয়াসহ পাঁচটি অভিযোগ করা হয়েছে।

গত জানুয়ারিতে সংবাদ সম্মেলন করে প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে একই অভিযোগ করেছিলেন দেশটির চার বিচারপতি, জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে দীপক মিশ্রর পরেই ছিল তাদের অবস্থান।

প্রধান বিচারপতিকে অভিশংসনের প্রস্তাবকারীদের মধ্যে কংগ্রেসের সঙ্গে মায়াবতীর বিএসপি, সমাজবাদী পার্টি, শারদ পাওয়ারের এনসিপি, সিপিআই, ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লীগ (আইইউএমএল) ও ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম) রয়েছে। বিরোধী দলগুলোর মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস, ডিএমকে ও লালু প্রসাদ যাদবের আরজেডি এই অভিশংসন প্রস্তাবের বিপক্ষে।

রাজ্যসভার সদস্য হলেও সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের স্বাক্ষর নেওয়া হয়নি আবেদনে। এ বিষয়ে কংগ্রেস নেতা কপিল সিবাল বলেছেন, “তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় আমরা ইচ্ছাকৃতভাবে তাকে এ বিষয়ে সম্পৃক্ত করিনি।”

রাজ্যসভার চেয়ারম্যান এই অভিশংসন প্রস্তাব গ্রহণ বা খারিজ করতে পারবেন। প্রস্তাবটি গৃহীত হলে প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে সুপ্রিম কোর্টের একজন জ্যেষ্ঠ বিচারপতি, হাই কোর্টের একজন বিচারক এবং একজন আইনবিদের সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি করা হবে।

ওই কমিটি অভিযোগের সত্যতা পেলে বিষয়টি পার্লামেন্টে আলোচনার জন্য তোলা হবে। এরপর পার্লামেন্টের উভয়কক্ষ রাজ্যসভা ও লোকসভায় দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে প্রস্তাবটি পাস হতে হবে।

পার্লামেন্টে পাস হওয়ার পর বিষয়টি প্রেসিডেন্টের কাছে উত্থাপিত হবে। তখন প্রধান বিচারপতিকে অপসারণের আদেশ দিতে পারবেন প্রেসিডেন্ট।

ভারতে এখন পর্যন্ত একবারই অভিশংসন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছিল। ১৯৯৩ সালে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ভি রামাস্বামীর বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটি হয়, লোকসভায় দুই-তৃতীয়াংশ ভোট না পড়ায় বেঁচে গিয়েছিলেন তিনি।