মায়ের দুধেও মিলেছে মাইক্রোপ্লাস্টিক, উদ্বেগে গবেষকরা

৩৪ জন মায়ের বুকের দুধের নমুনা নিয়ে ৭৫ শতাংশ ক্ষেত্রে মাইক্রোপ্লাস্টিক পেয়েছেন গবেষকরা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Oct 2022, 02:56 PM
Updated : 10 Oct 2022, 02:56 PM

এবার মাইক্রোপ্লাস্টিক মিলল মায়ের বুকের দুধে, যা শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ে ভাবিয়ে তুলেছে গবেষকদের।

এভাবে রাসায়নিকের সংস্পর্শে আসা নবজাতকের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে। আর এ বিষয়ে দ্রুত বড় পরিসরে গবেষণা করা জরুরি বলে তারা মনে করছেন।

তবে বিজ্ঞানীরা এও মনে করিয়ে দিয়েছেন, মায়ের বুকের দুধই শিশুর জন্য সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর খাবার।

সন্তান প্রসবের সপ্তাহ খানেক পর ইতালির রোমে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ৩৪ জন মায়ের বুকের দুধ নমুনা হিসেবে নেওয়া হয়েছিল। ৭৫ শতাংশ নমুনাতেই মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে বলে গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।   

এর আগে নানা গবেষণায় মানুষের কোষ, পরীক্ষাগারে রাখা প্রাণী এবং সামুদ্রিক প্রাণিজগতে মাইক্রোপ্লাস্টিকের বিষক্রিয়ার নুমনা দেখা গেছে। তবে মানব শরীরে এর প্রভাব কতটা, তা এখনও অজানাই রয়ে গেছে।

প্লাস্টিকে অনেক সময় ফথ্যালেটসের মত ক্ষতিকারক রাসায়নিক থাকে। বুকের দুধে ফথ্যালেটসের ‍উপস্থিতি আগেও পাওয়া গিয়েছিল।

এবারের গবেষণায় অংশ নেওয়া মায়েরা খাবার ও পানীয়র জন্য কী পরিমাণ প্লাস্টিক প্যাকেট ব্যবহার করছেন, সেই হিসাব রাখা হয়। খাবারের পাশাপাশি ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার অন্যান্য পণ্যে যেসবে প্লাস্টিকের উপস্থিতি রয়েছে তারও তালিকা করা হয়।

কিন্তু এসবের সঙ্গে বুকের দুধে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতির স্পষ্ট কোনো যোগসূত্র দেখতে পাননি গবেষকরা।

এখন তাদের অভিমত, পরিবেশের সবখানে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি মানুষকে এর সংস্পর্শে আসা অনিবার্য করে তুলছে। আগামীতে এ নিয়ে বিষদ গবেষণা হলে তবেই ঝুঁকি সম্পর্কে জানা যাবে। 

নারীর প্লাসেন্টা বা গর্ভফুলে মাইক্রোপ্লাস্টিক পেয়েছিল ইতালির এক গবেষক দল। সেটা ২০২০ সালের ঘটনা।

”আর তাই বুকের দুধে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া আমাদের উদ্বিগ্ন করেছে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকা নবজাতকদের নিয়ে”, বললেন ইতালির ইউনিভার্সিটি পলিতেকনিকা ডেলে মারচের ডা. ভ্যালেন্তিনা নতারস্তিফানো।   

তিনি বলেন, “গর্ভাবস্থায় ও শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানোর সময় এমন কিছুর সংস্পর্শে আসার পথ বন্ধ করার উপায় খুঁজে বার করা কঠিনই হবে।

“যদিও মাইক্রোপ্লাস্টিক থাকার কারণে যে ক্ষতি হবে, তার থেকে মাতৃদুগ্ধের উপকারিতা ঢের বেশি। আমাদের গবেষণার কারণে সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ানো কমিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না। বরং দূষণ কমাতে আইন প্রণয়নে রাজনীতিকদের চাপে রাখতে গণসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।”

আরেক গবেষণা বলছে, বোতলে করে দুধ খাওয়ানো হলে এক দিনেই লাখ লাখ মাইক্রোপ্লাস্টিক যাচ্ছে শিশুর শরীরে। এমনকি গরুর দুধেও মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। 

বিপুল পরিমাণে প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলা হচ্ছে পরিবেশে। মাইক্রোপ্লাস্টিকের দূষণ ছড়িয়ে পড়েছে পুরো পৃথিবীতে; এভারেস্টের চূড়া থেকে সাগর তলেও।

এর সূক্ষ্ণ কণা খাবার ও পানীয়ের সঙ্গে শরীরে যাচ্ছে। এমনকি শ্বাস-প্রশ্বাসের মধ্যে দিয়েও মিশে যাচ্ছে শরীরে। এসব কারণে শিশু ও বড়দের মলেও মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া যাচ্ছে। 

মায়ের দুধ নিয়ে করা গবেষণাটি পলিমারস জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, এই মাইক্রোপ্লাস্টিক পলিইথিলিন, পিভিসি এবং পলিপ্রোপাইলিন দিয়ে তৈরি। পণ্যের প্যাকেজিং করতে এসবের ব্যবহার দেখা যায়।

দুই মাইক্রনের কম ও ছোট প্লাস্টিক কণা নিয়ে গবেষণা করা না গেলেও এগুলোর উপস্থিতির বিষয়ে গবেষকরা নিশ্চিত হতে পেরেছেন বলে জানিয়েছে গার্ডিয়ান।

এই স্বল্প পরিসরের গবেষণায় নির্দিষ্ট করে মাইক্রোপ্লাস্টিকের ঝুঁকি জানা সম্ভব হয়নি জানিয়ে ডা. ভ্যালেন্তিনা নতারস্তিফানো বলেন, “গর্ভবতী নারীদের জন্য আমাদের পরামর্শ থাকবে- প্লাস্টিক মোড়কে থাকা খাবার ও পানীয়, মাইক্রোপ্লাস্টিক রয়েছে এমন রূপচর্চার সামগ্রী, টুথপেস্টে এবং সিনথেটিক কাপড় এড়িয়ে চলুন।”

গত মার্চে নেদারল্যান্ডসের ভিরিজে ইউনিভারসিতেইত অ্যামসটারডামের অধ্যাপক ডিক ভেথাকের অধীনে একদল গবেষক মানুষের রক্তে মাইক্রোপ্লাস্টিক পেয়েছিল।

অধ্যাপক ডিক ভেথাক বলেন, “মায়ের বুকের দুধে মাইক্রোপ্লাস্টিক রয়েছে তা নতুন গবেষণায় প্রাথমিকভাবে প্রমাণ মিলেছে। এখন আরও বেশি নমুনা নিয়ে ও ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে পরীক্ষা করে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া জরুরি।”

তার ভাষায়, ”আমরা শুধু মাত্র আইসবার্গের চূড়া দেখতে পাচ্ছি। ক্ষুদ্র ন্যানো প্লাস্টিকের ব্যবহার সবখানেই রয়েছে এবং তা আরো বেশি বিষাক্ত। এখনি অবশ্য মাতৃদুগ্ধে ন্যানোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি বিশ্লেষণ করা অসম্ভবই।

”মাইক্রোপ্লাস্টিকের ঝুঁকি নিয়েও এখন কোনো ধারণা নেই আমাদের এবং শিশুদের শরীরে এর প্রভাব কী হতে পারে তাও জানা নেই।”

নবজাতক, ছোট শিশুরা যেহেতু রাসায়নিক ও ক্ষুদ্রকণার সংস্পর্শে আসার ঝুঁকিতে রয়েছে, তাই স্বাস্থ্য নিয়ে গবেষণাকেই প্রাধান্য দেওয়ার পরামর্শ দিলেন এই অধ্যাপক।