সায়াটিকার ব্যথা, উপশম কোথা

এ ব্যাথা নিরাময়ে জাদুকরি কোনো উপায় নেই, তবে নিয়ম মেনে সঠিক ব্যায়াম দিতে পারে আরাম।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 August 2022, 09:08 AM
Updated : 26 August 2022, 09:08 AM

কোমরের নিচে ব্যথা তো আছেই, সায়াটিকা হলে নিতম্ব আর পায়েও ভীষণ প্রদাহ হয়।

প্রতিটি সায়াটিক স্নায়ু মেরুদণ্ড থেকে নিতম্বের পেশীর গভীরে ও পায়ের তলার পেশী পর্যন্ত বিস্তৃত। এ কারণে শরীরে সবচেয়ে দীর্ঘ এই স্নায়ুর ব্যথা ছড়িয়ে পড়ে সবখানে।

বাংলাদেশে একটু বয়স হলে, বিশেষ করে নারীদের প্রায়ই এমন কোমরের ব্যথায় ভুগতে দেখা যায়।

কেন এই স্নায়ুতে প্রদাহ হয় এবং সুস্থ থাকতে কী করণীয় সিএনএন তা তুলে ধরেছে এক প্রতিবেদনে।

ব্যথা নিরাময়ে কোনো জাদুকরি উপায় নেই

আঘাত পেলে ও অস্বস্তিবোধ থেকে সায়াটিক নার্ভ নিতম্বের এক পাশে ব্যথার অনুভূতি তীব্র করে তোলে। এতে করে দুই পায়ে দুর্বলতাও দেখা দিতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্তত ৪০ শতাংশ পূর্ণ বয়স্ক মানুষ সায়াটিকার সমস্যায় ভুগেছেন। আর সুচিকিৎসার অভাবে এই সমস্যা শরীরে স্থায়ীভাবে বাসা বাঁধে।

যাদের সায়াটিকার ব্যথা হয়, তাদের অনেকেই হয়ত নানাভাবে পরিত্রাণের উপায় খুঁজেছেন। তারপর অনেক রকম পরামর্শ পেয়ে দ্বিধায় পড়ে যান। আসলে সায়াটিকা হলে শরীরে অনেক রকমেরই উপসর্গ দেখা যায়, যার চিকিৎসাও হয়ত ভিন্ন ভিন্ন।

কোমরে লাম্বার স্পাইন থেকে স্নায়ুতে চাপ বাড়তে পারে। অথবা সায়াটিক স্নায়ু দেবে গেলে নিতম্বের পেশীতে চাপ বাড়তে থাকে।

ব্যায়ামে মিলবে আরাম

পায়ের তলার পেশীতে হয়ত শিরশির বোধ করছে, কিন্তু এমন হতে পারে যে ওই অসাড়তা আসলে ছড়িয়েছে মাজা থেকে। এ সময় কিছুটা আরাম বোধ করতে বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম করা দরকার; তাতে শরীরের সব জায়গার স্নায়ু ও পেশীতে প্রভাব পড়বে।

তবে শরীরচর্চা শুরু করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে। চিকিৎসক শরীরের কোনো অংশে মূল জটিলতা রয়েছে, তা পরীক্ষার মাধ্যমে চিহ্নিত করবেন।

আর শরীরচর্চার সময় যদি ব্যথা বেড়ে যায়, অবশ্যই ব্যায়ামের ওই বিশেষ কায়দাটি এড়িয়ে চলতে হবে।

লাম্বার স্পাইনের জন্য ব্যায়াম

সায়াটিকা যখন লাম্বার স্পাইন ও পেলভিস অর্থ্যাৎ নিতম্বের চারপাশে ছড়ানো হাড়ের কাঠামোর মধ্যে থাকে, তখন ওই অবস্থান পিঠের নিচের দিকের পেশীকে দৃঢ় রাখে; একই সঙ্গে পেলভিসের অবস্থানকেও ঠিক রাখে।

ওই অবস্থানে শরীরকে রাখতে ’সিটেড বেন্ট-নি ব্লক হোল্ড সায়াটিকা’ ব্যায়ামটি কাজে দেবে।

এজন্য একটি ইয়োগা মাদুর পেতে পিঠ সোজা রেখে বসতে হবে হাঁটু ভাঁজ করে। দুই হাঁটু ভাঁজ রাখা অবস্থায় সামনে পা ছড়িয়ে রাখা যাবে না এবং উরু যতটুকু সম্ভব পেটের কাছাকাছি আনতে হবে।

দুই হাঁটুর মাঝে ইট আকারের একটি ফোমের ব্লক বসাতে হবে। এবার নিঃশ্বাস ছাড়ার সময় হাঁটু দিয়ে ফোমের ব্লকে চাপ দিতে হবে যতটা সম্ভব। ওই সময় চাইলে দুই হাত দিয়ে হাঁটু ধরে রাখা যাবে। এ সময় শরীর বা পেটে কাঁপুনি অনুভব হতে পারে, তবে তাতে সমস্যা নেই। এভাবে পাঁচবার করে দুই দফা এই ব্যায়াম করা যাবে।

যাদের মাদুরে বসতে অসুবিধে হয়, তারা একটি চেয়ারে পিঠ সোজা রেখে বসবেন। সামনে হাঁটুর ফাঁকে ফোমের ব্লকটি বসিয়ে নিঃশ্বাস ছাড়ার সময় দুই হাঁটু দিয়ে ফোমে চাপ দেবেন।

এই ব্যায়ামে শরীরের নীচের অংশের পেশী ও উরুতে জোর বাড়বে এবং পেলভিসের অবস্থান ঠিক থাকবে।

উপকারিতা পেতে ব্যায়াম করার সময় অবশ্যই মনোসংযোগ করতে হবে। ব্যথা কমে আসতে থাকলে বুঝতে হবে এই ব্যায়াম কাজে দিচ্ছে। আর ভালো বোধ করলে প্রতিদিন দুই বেলা এভাবে ব্যায়াম চালিয়ে যেতে হবে।

কোমর ও নিতম্বের ব্যায়াম

মাজা শক্ত হয়ে গেলে কোমরে ব্যথা হবে। আর এর থেকে যদি নিতম্বের মাঝে পিরিফর্মিস পেশীতে টান পড়ে তবে সায়াটিকাও হবে।

এই দশাকে বলে পিরিফর্মিস সিন্ড্রোম; যা থেকে মুক্তি পেতে কাজে দিতে পারে ‘দ্য সিটেড হিপ-ওপেনিং টুইস্ট’ ব্যায়ামটি। এ ব্যায়াম পিরিফর্মিসকে নমনীয় করবে, তবে খুব ধীরে ও সতর্কতার সঙ্গে করতে হবে।

ইয়োগা মাদুরে বসে এক পা সামনে সোজা করে রাখতে হবে। যদি ডান পা সোজা করে রাখা হয় তবে বাম পা হাঁটু ভাঁজ করে ডান পায়ের উরুর উপর দিয়ে তুলে পায়ের পাতা মাদুরে রাখতে হবে।

এই অবস্থায় দুই হাত দিয়ে ভাঁজ করা হাঁটু জড়িয়ে ধরতে হবে। এসময় নিতম্বের নিচে আরাম বোধ হতে পারে।

ওই অবস্থায় থেকে শরীরের উপরের অংশকে বাঁ দিকে ধীরে ধীরে খানিক ঘুরিয়ে নিতে হবে। এভাবে থাকা অবস্থায় পাঁচবার স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ে এবার হাত পা স্বাভাবিক ভাবে রেখে বিশ্রাম নেওয়া যেতে পারে।

গা মালিশ করিয়েও অনেক সময় ব্যথা থেকে আরাম বোধ হতে পারে। তবে সায়াটিকা থেকে সুস্থ হতে সঠিক কায়দায় নিয়মিত ব্যায়াম খুবই জরুরি।