”ছাত্র-জনতার সাম্প্রতিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে স্বাধীন সাংবাদিকতার ক্ষেত্র তৈরির আশা জেগেছে। আবার সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনা পুরনো উদ্বেগকে নতুন করে হাজির করেছে,” বিবৃতিতে বলেছে সংগঠনটি।
Published : 25 Aug 2024, 12:36 AM
ছাত্র-জনতার প্রবল গণ আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সুযোগে একটি গোষ্ঠী ‘ভিন্নমত দমনের’ অপচেষ্টা করছে অভিযোগ করে সম্প্রচার মাধ্যমের সাংবাদিকদের সংগঠন ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার (বিজেসি) বলেছে, যা সাংবাদিকতার ‘স্বাধীনতাকে’ নতুন করে ঝুঁকিতে ফেলেছে।
শনিবার সংগঠনটির দপ্তর বিভাগ থেকে পাঠানো বিবৃতিতে সাম্প্রতিক কিছু ঘটনাপ্রবাহের উদাহরণ তুলে ধরে সাংবাদিকের নিরাপত্তা ও কাজের উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
সংগঠনটি বলেছে, "বিগত শাসনামলে নিপীড়নমূলক আইন ও কর্তৃত্ববাদী আচরণ, মালিকানার ধরন ইত্যাদি নানা কারণে টেলিভিশন সাংবাদিকতা বাধাগ্রস্ত ও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। ছাত্র-জনতার সাম্প্রতিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে স্বাধীন সাংবাদিকতার ক্ষেত্র তৈরির আশা জেগেছে। আবার সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনা পুরনো উদ্বেগকে নতুন করে হাজির করেছে।
"অভ্যুত্থানের সময় পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বহু সাংবাদিক হতাহত হয়েছেন। অথচ বিজয়ের পর থেকে সর্বশেষ ১৯ অগাস্ট পর্যন্ত বেশ কয়েকটি টেলিভিশন ভবনে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। অনেক সাংবাদিক আক্রান্ত হয়েছেন, মিডিয়া হাউস দখলের জেরে চাকরি হারাতে হয়েছে অনেককে।"
এছাড়া নানারকম ’মনগড়া তালিকা’ করে সাংবাদিকদের দেখে নেওয়ার ‘হুমকি দেওয়ার’ কথা তুলে ধরে বিবৃতিতে বলা হয়, ”এ রকম পরিস্থিতি সাংবাদিক সমাজের মধ্যে একটা ভয়ের পরিবেশ তৈরি করেছে, যা বর্তমান সরকারের গণমাধ্যমের স্বাধীনতার অঙ্গীকারকে চ্যালেঞ্জ করছে।”
বিবৃতিতে বিজেসি বলেছে, "একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদ ও বিশেষ প্রতিনিধি ফারজানা রূপাকে সম্প্রতি আটক করার পর তাদের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের এবং রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। আটকের দিন দায়ের করা মামলার এজাহারে তাদের নাম ছিল না। অসংখ্য ‘অজ্ঞাত আসামির’ মধ্যে তাদের নাম ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এই দু’জন সাংবাদিকতার অপব্যবহার বা কোনো দুর্নীতি করে থাকলে তার বিচার হতে পারে।
"কিন্তু দেখা যাচ্ছে, অপছন্দের কাউকে ফাঁসাতে গত শাসনামলে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত মানবাধিকারবিরোধী হয়রানিমূলক ব্যবস্থার প্রয়োগ এখনও অব্যাহত রয়েছে। শুধু তাই নয়, আদালত প্রাঙ্গণে তারা শারীরিক আক্রমণেরও শিকার হয়েছেন। রিমান্ড শুনানির সময় তাদের পক্ষের আইনজীবীকে হেনস্তা এবং এজলাস কক্ষে একাত্তর টিভির রিপোর্টার ইশতিয়াক ইমনকে মারধর করা হয়।"
বিবৃতিতে বলা হয়, "সবশেষ ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে গুলিতে শিক্ষার্থী নাঈম হাওলাদার নিহতের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় শেখ হাসিনাসহ একাধিক সাবেক মন্ত্রী-এমপি, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতা, পুলিশ ও র্যাব কর্মকর্তার সঙ্গে সাতজন সাংবাদিককেও আসামি করা হয়েছে।"
বিজেসি এ পরিস্থিতির অবসান ঘটিয়ে সাংবাদিকের নিরাপত্তা ও কাজের উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
সাংবাদিক শাকিল আহমেদ ও ফারজানা রূপা যেন তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের ব্যাপারে আইনি সহযোগিতা পেতে পারে তা নিশ্চিত করতেও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছে সংগঠনটি।
পাশাপাশি এক যুগ ধরে ঝুলে থাকা সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার দ্রুত বিচার দাবি করেছে বিজেসি।