পরিপাক-রস নিঃসরণকারী গ্রন্থি অগ্ন্যাশয়ে ক্যান্সার হলে লক্ষণ দেখা দেয় দেরিতে।
যে কারণে পাকস্থলীর কাছাকাছি থাকা এই গ্রন্থির ক্যান্সারকে নীরব ঘাতক বলা হয়।
‘আমেরিকান সোসাইটি অফ ক্লিনিকাল অনকোলজি’য়ের তথ্যানুসারে, “যুক্তরাষ্ট্রের সবচাইতে বেশি প্রাণঘাতি ক্যান্সারের তালিকায় ‘প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সার’ বা অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার চতুর্থ।”
যুক্তরাষ্ট্রের ‘দ্য ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ হেল্থ’য়ের মতে, “২০২২ সালে এই পর্যন্ত শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৬২,২১০ জন, যার মধ্যে ৪৯,৮৩০ জন ইতোমধ্যেই প্রাণ হারিয়েছেন।”
নীরবে মৃত্যু ডেকে আনে এই রোগ
‘আমেরিকান সোসাইটি অফ ক্লিনিকাল অনকোলজি’র বরাত দিয়ে ইনসাইডার ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, অগ্ন্যাশয়ে ক্যান্সারের প্রাথমিক অবস্থায় কোনো উপসর্গ সৃষ্টি করে না। আর উপসর্গ না থাকার কারণে কোনো পরীক্ষাও নেই, যা প্রাথমিক অবস্থায় এই রোগ শনাক্ত করতে পারবে।
ক্যান্সার যখন ছড়িয়ে যায় তখন দেখা দেয় পেট ব্যথা, পেট ফুলে থাকা, খাওয়ার রুচি হারানো, জ্বর, অস্বাভাবিক ওজন কমে যাওয়া ইত্যাদি।
এই প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের এক রোগীর বর্ণনা দিতে গিয়ে জানায়, সম্প্রতি একজন ব্যক্তি গায়ে চুলকানি নিয়ে হাসপাতালে গিয়ে জানতে পেরেছেন তার অগ্ন্যাশয়ে ক্যান্সার হয়েছে।
যে হাসপাতালে তিনি যান সেখানকার জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. এরিকা কিউব বলেন, “কয়েক সপ্তাহ ধরেই রোগী চুলকানিতে ভুগছিলেন। তার ধারণা ছিল কোনো বিছুটি গাছের প্রতিক্রিয়া থেকে তার এই অবস্থা। কিন্তু ‘অ্যান্টিহিস্টামিন’ ও ‘স্টেরয়েড’ প্রয়োগ করার পরও কোনো উন্নতি হয়নি।”
রোগীকে নিয়ে তার চিকিৎসা করার বিষয়ে একটি প্রতিবেদন লেখেন ‘কলম্বাস ডিসপ্যাচ’ শীর্ষক পত্রিকায়।
ডা. কিউব আরও লেখেন, “অল্প খেয়েই তার পেট ভরে যাচ্ছিল। আর দিনের বেলাতে ঘুমানো শুরু করেছিলেন যা তার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা নয়। তিনি ছিলেন প্রচণ্ড ক্লান্ত। শারীরিক পরীক্ষায় দেখা যায় তার ত্বক ও চোখ হলুদাভ। অগ্ন্যায়শে ক্যান্সারের লক্ষণ এগুলো।”
অগ্ন্যাশয়ে হওয়া ক্যান্সার যখন ‘কমন বায়াল ডাক্ট’য়ের ওপর চাপ ফেলে এবং তা আটকে যায়, তখন সেখানে ‘বিলিরুবিন’ জমতে থাকে। এই ‘বিলিরুবিন’য়ের কারণেই ত্বক ও চোখ হলুদ হয়।
উপসর্গ দেখে রোগীর ‘সিটি স্ক্যান করা হয় এবং দেখা যায় ঘটনা ঠিক সেটাই।
ধূমপান অগ্ন্যাশয় ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়
ডা. কিউব বলেন, “রোগীর পরিবারে কারও এই রোগ ছিল না। তার জীবনযাত্রায় এমন কোনো বদভ্যাস ছিলনা যা এ্ রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এখন রোগীর চিকিৎসা হবে অস্ত্রোপচার এবং কেমোথেরাপি।”
রোগীর বয়স জানাননি এই চিকিৎসক।
আমেরিকান সোসাইটি অফ ক্লিনিকাল অনকোলজি’ বলছে, এই আক্রান্ত হওয়া ৯০ শতাংশেরই বয়স পঞ্চান্ন’র ওপরে হয়। তবে যে কোনো বয়সেই এই রোগ হওয়া সম্ভব। ধূমপান, মদ্যপান, স্থূলতা এই রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
প্রাথমিক অবস্থায় রোগ শনাক্ত করা গেলে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তা কেটে ফেলা সম্ভব।
এই চিকিৎসা পর রোগীর আগামী পাঁচ বছর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা প্রায় ৪২ শতাংশ। তবে অগ্ন্যাশয় থেকে অন্য অংশে ক্যান্সার ছড়িয়ে গেলে পাঁচ বছর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নেমে আসে ৩ শতাংশে।
আরও পড়ুন