আমাদের দেশে রেফ্রিজারেইটর বলতে সাধারণত ফ্রিজ বোঝায়। যেটাতে সাধারণ মানুষ খাবার বা সবজি হিমায়িত করে সংরক্ষণ করেন।
Published : 28 Dec 2014, 04:45 PM
বাসাবাড়িতে রেফ্রিজারেইটর থাকা মানে বাড়তি রান্নার চাপ মুক্ত। প্রতিদিন বাজার করারও দরকার পড়ে না।
তবে খাবার, শাকসবজি, মাছ-মাংস ইত্যাদি খাবার সংরক্ষণ করা হয় বলে রেফ্রিজারেইটর ময়লা হওয়া এবং এর মধ্যে বিভিন্ন খাবার সংরক্ষণের কারণে গন্ধ হওয়াও খুব স্বাভাবিক।
যেহেতু রেফ্রিজারেইটরে আমরা খাবার সংরক্ষণ করি তাই এর যথাযথ ব্যবহার ও যত্ন করা দরকার।
এ বিষয়ে কথা বলেন গার্হস্থ অর্থনীতি কলেজের ‘গৃহব্যবস্থাপনা ও গৃহায়ন’ বিভাগের প্রভাষক শারমিন সুলতানা।
রেফ্রিজারেইটরের সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে তিনি বেশি কিছু বিষয়ে লক্ষ রাখার কথা বলেন।
- ভোল্টেজ ওঠানামা করলে রেফ্রিজারেইটর নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই এটা ব্যবহারের ক্ষেত্রে স্ট্যাবিলাইজার ব্যবহার করা উচিত।
- বার বার রেফ্রিজারেটইরের দরজা খোলা উচিত না। তাছাড়া বেশি সময়ের জন্য দরজা খুলে রাখলেও ক্ষতি হতে পারে।
- বক্সে করে এবং ঢাকনা আটকিয়ে খাবার রেফ্রিজারেইটরে সংরক্ষণ করা উচিত।
- গরম খাবার রেফিজারেটইরে রাখা ঠিক না।
- বিভিন্ন কারণে এতে গন্ধ সৃষ্টি হতে পারে, এই গন্ধ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য পুরান খবরের কাগজ ভাঁজ করে ফ্রিজের এক কোণায় রেখে দিলেও উপকার পাওয়া যাবে।
- তাছাড়া রেফ্রিজারেটরের ভেতরে খাবার রাখার সময় দুটি পাত্রের মধ্যে অন্তত তিন থেকে চার সে.মি. জায়গা ফাঁকা রাখতে হবে, যাতে ঠান্ড হাওয়া সহজেই চলাচল করে সব খাবার সমান ঠান্ডায় রাখতে পারে।
রেফ্রিজারেইটর পরিষ্কার করার বিষয়ে কিছু টিপস দেন শারমিন। তা হল—
* পরিষ্কারের জন্য ডিটারজেন্ট ও বিভিন্ন ধরনের তরল সাবান ব্যবহার করা যেতে পারে।
* পরিষ্কারের দু’তিন ঘণ্টা আগে অবশ্যই ফ্রিজের বিদ্যুত সংযোগ বন্ধ করে দিতে হবে। এতে কোন দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকবে না, তাছাড়া যে সমস্ত ফ্রিজে বরফ জমে, সে সব ফ্রিজের বরফ পরিষ্কার করাও সহজ হবে।
* ফ্রিজ পরিষ্কার করার জন্য ভিতরের খাবার ও অন্যান্য দ্রব্য বের করতে হবে এবং সেই সঙ্গে সব ট্রে ও বক্স বের করতে হবে।
* বরফের কেইস, ডিমের কেইস, ট্রে, বক্স ইত্যাদি অংশগুলো ডিটারজেন্ট বা ক্লিনার দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে এবং অবশ্যই তা ভালোভাবে মুছে রাখতে হবে।
* রেফ্রিজারেইটরের দরজার রাবারের অংশটি শুকনা কাপড় দিয়ে মুছে নিতে হবে।
* ফ্রিজে তেল, চর্বি, মসলা, ময়লা পড়তে পারে। ফ্রিজে তরকারির তেল বা ঝোল পড়লে সঙ্গে সঙ্গে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
* তেল বা ঝোল পরিষ্কারের ক্ষেত্রে পাতলা নরম কাপড় ও নরম ব্রাশ ব্যবহার করা উচিত।
রেফ্রিজারেটর ব্যবহারে সাবধান ও যত্নশীল হওয়ার পরামর্শ দেন শারমিন সুলতানা। এ বিষয়েও খেয়াল রাখার জন্য কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করেন তিনি।
- রেফ্রিজারেইটরের দরজা খোলা ও বন্ধ করার সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
- রেফ্রিজারেটরের দরজায় লিক আছে কিনা তা জানার জন্য তিন টুকরা কাগজ দরজার ৩ কোণে দিয়ে তা বন্ধ করতে হবে। যদি কোন কোণা থেকে কাগজ পড়ে যায় তাহলে বুঝতে হবে ওই পাশে লিক আছে। আর তাহলে যত জলদি সম্ভব তা ঠিক করাতে হবে।
- রেফ্রিজারেইটরে এমনভাবে খাবার রাখা উচিত যেন বাটির কারণে ফ্রিজের বাতিটি আড়ালে না পরে।
- সবসময় তাক অনুযায়ী খাবার সাজিয়ে রাখা উচিত।
- কোন রকম খসখসে জিনিস যেমন- স্ক্রাবার, ধাতব বস্তু ও শক্ত ব্রাশ দিয়ে রেফ্রিজারেটর ঘষা বা পরিষ্কার করার ঠিক নয়।
আরও কিছু লক্ষণীয় বিষয়:
বাসা পরিবর্তনের সময় রেফ্রিজারেইটর ওপর-নিচে ওঠানামা করাতে হয়। এ ক্ষেত্রে রেফ্রিজারেইটর নাড়াচাড়া করার অন্তত তিন থেকে চার ঘণ্টা আগে বন্ধ করতে হবে। আর নতুন বাসায় সংস্থাপনের তিন থেকে চার ঘণ্টা পর তা চালু করতে হবে।
কারণ, রেফ্রিজারেটর নাড়াচাড়া করলে কম্প্রেসারের গ্যাস ওপরে উঠে যায়। তাই কম্প্রেসারের গ্যাস স্থিতিশীল হওয়ার জন্য কিছুটা সময় দিয়ে এরপর ফ্রিজ চালু করা উচিত।
ঘরে বিদ্যুতের সমস্যা দেখা দিলে, যেমন, বিদ্যুত বার বার আসা-যাওয়া করলে রেফ্রিজারেটর বন্ধ করে রাখা নিরাপদ।
বছরে একবার বৈদ্যুতিক সংযোগ বন্ধ করে রেফ্রিজারেইটরের পেছনে বা নিচে থাকা কয়েল পরিষ্কার করা যেতে পারে। ভ্যাকুয়াম ক্লিনার বা নরম ঝাড়ু দিয়ে কয়েলে লেগে থাকা ধুলো-ময়লা পরিষ্কার করতে হবে।
রেফ্রিজারেইটরের যে কোন সমস্যায় কারিগরের সাহায্য নেওয়া উচিত। এক্ষেত্রে যে প্রতিষ্ঠানের রেফ্রিজারেইটর সেখানে নিয়ে যাওয়াই ভালো।
প্রতীকী ছবির মডেল: বৈশাখি। ছবি: অপূর্ব খন্দকার।