শরীরের সকল অঙ্গের মতো মস্তিষ্কেরও যত্নের প্রয়োজন। ব্যায়াম, ঘুম, প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সবই মস্তিষ্কের জন্য জরুরি। আবার মানসিক আঘাত পেলে দ্রুত তা আমলে নেওয়া উচিত। অবহেলা করলে তা পরে গুরুতর সমস্যার দিকে মোড় নিতে পারে।
‘ট্রমাটিক ব্রেইন ইঞ্জুরি (টিবিআই)’ শারীরিক, মানসিক ও জ্ঞানীয় ক্ষমতার ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে।
কেমন অনুভূতি হতে পারে
সকল বয়সের মানুষের জীবনেই ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে পারে ‘টিবিআই’। তবে কিছু বয়সের মানুষ এই সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে প্রাণও হারাতে পারেন।
ইটদিস নটদ্যাট ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০২০ সালে শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই প্রায় ৬৪ হাজার মানুষের মৃত্যুর কারণ ছিল ‘টিবিআই’। প্রতিদিন ১৭৬ জন মারা গেছেন এই সমস্যার কারণে।
মাথায় আঘাত
‘ট্রমাটিক ব্রেইন ইঞ্জুরি’ বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ও মানসিক প্রভাবের কারণ হতে পারে। কিছু লক্ষণ আঘাত পাওয়ার পরপরই দেখা দেয়, কিছু আবার কয়েক দিন বা সপ্তাহ পরে দেখা দিতে পারে।
নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি’র ল্যাঙ্গন হেল্থ কনকাশন সেন্টার’য়ের সহ-পরিচালক, মাইগ্রেইন ও ব্রেইন ট্রমা নিউরোলজিস্ট ডা. শেয় দত্ত বলেন, “টিবিআই’কে দুই ভাগে ভাগ করা যায়, ‘মাইল্ড ট্রমাটিক ব্রেইন ইঞ্জুরি (এমটিবিআই)’ ও ‘মডারেট টু সিভিয়ার ট্রমাটিক ব্রেইন ইঞ্জুরি’।
এমটিবিআই’য়ের উপসর্গ হিসেবে দেখা দিতে পারে- মাথাব্যথা, বমিভাব ও বমি, অবসাদ, দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসা, মাথা ঘোরানো, শরীরের ভারসাম্য রাখতে না পারা, অনিদ্রা ইত্যাদি।
সঠিক যত্ন ও ‘ফিজিকাল থেরাপি’য়ের মাধ্যমে এই সমস্যাগুলো সেরে যায়।
‘মডারেট টু সিভিয়ার ব্রেইন ইঞ্জুরি’র লক্ষণগুলো মাথায় আঘাত পাওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যেই দেখা দেয়।
যেমন- কয়েক মিনিট থেকে ঘণ্টা পর্যন্ত জ্ঞান হারানো, ক্রমাগত মাথাব্যথা যা ক্রমেই বাড়তে থাকে, বার বার বমি হওয়া, শরীরের খিঁচুনি হওয়া, চোখের মনির প্রসারণ ইত্যাদি।
এই লক্ষণগুলো ইঙ্গিত করে যে মস্তিষ্কে মারাত্মক কোনো আঘাত লেগেছে, হয়ত রক্তপাত হচ্ছে।
মারাত্মক আঘাতের আরেকটি লক্ষণ হল- আঘাতের পর জ্ঞান না হারালেও দীর্ঘ সময় দ্বিধাগ্রস্ততা, মানসিক ভারসাম্যহীনতা বা ঘটনার আকস্মিকতায় বিভোর থাকা।
কোনো কিছু মনে করতে সমস্যা হতে পারে বা একেবারেই ভুলে যেতে পারে। যে কোনো কাজে মনযোগ দিতে তাদের সমস্যা হতে পারে। এই মানুষগুলোর মন মানসিকতায় পরিবর্তন দেখা দিতে পারে, তাদেরকে মনে হতে পারে আরও বিষণ্ন।
মস্তিষ্কের আঘাত বিনা চিকিৎসায় থেকে গেলে এর কারণে অনিদ্রা বেশি দেখা যায়। তবে অতিরিক্ত ঘুমালেও সেটা আশঙ্কার কারণ হতে পারে।
প্রায়ই মাথাব্যথা
মানসিক আঘাত থেকে মস্তিষ্কের ক্ষতি হওয়ার অতি সাধারণ লক্ষণ হল ঘন ঘন মাথাব্যথায় ভোগা।
ব্যথা পাওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে শুরু হয়ে কয়েক মাস পর্যন্ত ভুগতে হতে পারে। ‘ভার্টিগো’ বা মাথা ঘোরানো দেখা দিতে পারে।
আঘাতের কারণে সৃষ্টি হওয়া এই লক্ষণগুলোর কয়েকটি রোগীর মাঝে লম্বা সময় ধরে দেখা যেতে পারে। এই পরিস্থিতিকে বলা হয় ‘পার্সিস্টেন্ট পোস্ট-কনকাসিভ সিম্পটম্স’।
বিক্ষুব্ধ থাকা
টিবিআই’য়ের আশঙ্কাজনক লক্ষণগুলোর মধ্যে অন্যমত হল উগ্রতা বা যে কোনো অস্বাভাবিক আচরণ। কথা আটকে যাওয়া বা তাতে জড়তা আসার লক্ষণ পরে মোড় নিতে পারে ‘কোমা’ ও অন্যান্য গুরুতর সমস্যার দিকে।
অনুভূতিতে সমস্যা
মাথায় আঘাত পাওয়ার পরিণতি হিসেবে ইন্দ্রিয়ানুভূতিতে গোলমাল বাঁধতে পারে।
যেমন- চোখে ঝাপসা দেখা, কানের মধ্যে শব্দ হচ্ছে এমন মনে হওয়া, মুখে বাজে স্বাদ অনুভব করা, গন্ধ বোঝার ক্ষমতা হারানো ইত্যাদি।
আলো ও শব্দের প্রতি সংবেদনশীলতাও দেখা দিতে পারে।
করণীয়
এই ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে ডাক্তারের কাছে যাওয়া এবং আঘাতের পরিণতি সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া জরুরি।
চিকিৎসক রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনবেন, মাথার খুলির ভেতরের চাপ পরীক্ষা করবেন এবং মস্তিষ্কের পর্যাপ্ত অক্সিজেন ও রক্ত সরবরাহ হচ্ছে কি-না তা যাচাই করে দেখবেন।
‘নিউরোলজিক এক্স্যাম’ ও ‘ইমেইজিং টেস্ট’ করাতে পারেন চিকিৎসকরা। যেমন- ‘সিটি স্ক্যান’ বা ‘এমআরআই’।
চোখের নড়াচড়া, কথা বলা, শারীরিক নড়াচড়ার ক্ষমতা পরীক্ষা করা হবে।
‘এমটিবিআই’য়ের প্রধান চিকিৎসা বিশ্রাম। মাথাব্যথা থাকলে ওষুধ খেতে পারেন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে যতদিন না সুস্থ স্বাভাবিক হচ্ছেন।
আরও পড়ুন