ঈদে ঘরেও আসুক নতুনত্ব

বিছানার চাদর, টেবিল ক্লথ, সোফার কুশন আর পর্দার দর কষাকষি আয়োজন।

মামুনুর রশীদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 April 2022, 01:36 PM
Updated : 24 April 2022, 01:36 PM

ঈদকে সামনে রেখে নিজেকে তো সবাই সাজান। আর ঘর নতুন করে সাজাতে চাইলে দরজা–জানালার পর্দা, বিছানার চাদর, সোফার কভার পরিবর্তন করার চাইতে ভালো আর কি হতে পারে।

এই তিনটি জিনিস একবারে বদলে ফেললে পুরো বাসার চেহারাই বদলে যায়।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানানো হলো এগুলো দরদাম সম্পর্কে।

পর্দার ধরন ও দরদাম

পর্দার ধরন ও দরদাম সম্পর্কে বিস্তারিত জানান ইসলামপুরে নবাববাড়ি এলাকার ফেব্রিক্স প্লাজার মায়ের দোয়া এন্টারপ্রাইজ দোকানের ইশতিয়াক বেগ। 

রেডিমেইড পর্দার সাইজ হয় মূলত দুইটি, চার কুচি আর ছয় কুচি। তবে এই চার বা ছয় কুচির পর্দাতেও কাপড়ের পরিমাণে তারতম্য থাকে।

যেমন- চার কুচির পর্দা লম্বায় হয় সাত ফিট আর চওড়া সাড়ে তিন ফিট। তবে ছয় কুচির পর্দা লম্বায় সাত ফিট, চওড়া পাঁচ ফিট আবার লম্বায় সাত ফিট, চওড়া ছয় ফিট দুই রকম হয়।

প্রধানত ছয় কুচির ভালোমানের পর্দাগুলোর প্রতিটি কুচির ওপর একই ডিজাইন আনতে গিয়ে কাপড়টা চওড়ায় বেশি হয়। চায়না পর্দাগুলোতেই এই মাপ বেশি দেখা যায়।

সিংহভাগ পর্দার কাপড় হল সুতি কিংবা সার্টিন। বাংলাদেশি কাপড়ের পর্দার দাম হয় কম। দামের হিসাবের পরেই আসে ভারতীয় কাপড়ের পর্দাগুলো।

আর দামিগুলো চীন থেকে আসে, বলা হয় চায়না কটন। এই কাপড়গুলো বেশ ভারি হয়।

দেশি কাপড়ের পর্দার দাম হবে ১২০ টাকা থেকে ৪৫০ টাকা। ভারতীয় কাপড়ের পর্দার দাম হবে ৩০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা। চায়না কটনের দাম শুরু হয় ৭৫০ টাকা থেকে, সর্বোচ্চ ২ হাজার ৩শ’ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

এই ডিজাইনের পর্দা চার কুচি কিংবা ছয় কুচি নিতে পারবেন। কাপড় যত ভালো দামের পার্থক্যটা ততই বেশি।

এছাড়াও ভেলভেট কাপড়ের পর্দার দাম আরও বেশি। চার কুচি ৯শ’ থেকে ১ হাজার ৮শ’ আর ছয় কুচি ১ হাজার ২শ’ থেকে ২ হাজার ৫শ’ টাকা পর্যন্ত দাম হয়। 

টিস্যু কাপড়ের পর্দাও পাওয়া যাচ্ছে। কোনোটায় এমব্রোয়ডারি, কোনোটায় হাতের কাজ, কোথাও আবার টিস্যু কাপড়ের মাঝে ভেলভেট কাপড়ের ডিজাইন। দাম বিভিন্ন। 

যেকোনো পর্দাতেই চাইতে নিজের পছন্দ মতো লেইস লাগিয়ে নিতে পারবেন। সেক্ষেত্রে পর্দা প্রতি ৫০ থেকে ৮০ টাকা খরচ বাড়বে।

পর্দা বানিয়ে নিতে চাইলে দামের হিসাব হবে কাপড়ের গজ, রিং, বর্ডার, বকরোম ইত্যাদির হিসেবে।

এলাকা ইসলামপুর, যাত্রাবাড়ি, নিউমার্কেট, খিলগাও তালতলা, কৃষি মার্কেট ইত্যাদি প্রায় সবখানেই পর্দা পাবেন।

পুরো বাসার পর্দা একবারে যদি কেনেন তবে ইসলামপুর যাওয়া ভালো। সব মিলিয়ে ২০ পিস বা তারও বেশি পর্দা কিনলে পাইকারি দামে কেনা যাবে। আর কালেকশন এখানেই সবচাইতে বেশি।

বিছানার চাদর ও বালিশের কভার

ইস্টার্ন মল্লিকা’র আট তলায় ‘ফাতেমা বাটিক অ্যান্ড নিউ ট্রেডার্স’য়ের বিক্রয় প্রতিনিধি কাশেম মোল্লা বলেন, “চাদরের মাপ হয় তিনটা, ‘সিঙ্গেল’, ‘কিং’ আর ‘কুইন’। সব চাদরের সঙ্গে দুটি মাথার বালিশের কভার পাওয়া যাবে।”

কিছু চাদরের সঙ্গে কোল বালিশের কভার থাকে। বেশিরভাগ চাদরের সঙ্গে আসলে বালিশের কভারের কাপড় দেওয়া থাকে, ক্রেতাকে বানিয়ে নিতে হয়। তবে হাতের কাজ করা বা বিশেষ ডিজাইনের চাদরের সঙ্গে কভারগুলো বানানো পাওয়া যায়।

“হোম টেক্সের চাদর বরাবরই ক্রেতাদের চাহিদার মধ্যমনি। কারণ দামটা প্রায় সকলেও সাধ্যের মধ্যে, রং টেকসই হয় আর কাপড়ের মানও ভালো থাকে। বাজারে ৫শ’ টাকাতে হোম টেক্স’য়ের চাদর বিক্রি হয়। তবে সেটা আদৌ হোম টেক্স’য়ের কিনা তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়।

“আমাদের কাছে হোম টেক্স’য়ের চাদর শুরু হয় নুন্যতম ৯৫০ টাকা থেকে সর্বোচ ১ হাজার ৮শ’ ৫০ টাকা,”বলেন কাশেন মোল্লা।

তিনি আরও জানান, টাইডাই করে তৈরি করা চাদরগুলোকে অনেকেই বাটিকের চাদর বলে চেনেন। হোম টেক্স’য়ের কাপড় হলে দাম হয় ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫শ’ টাকা। তবে ২৫০ টাকাতেও বাটিকের চাদর আছে।

হাতের কাজ করা চাদরের দাম শুরু হয় নুন্যতম ৩ হাজার টাকা থেকে, উপরে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্তও ঠেকতে পারে।

‘প্রিমিয়াম’ বিছানার চাদর হল আসলে চায়না থেকে আসা বিছানার চাদরগুলো। এতে বাড়তি সংযোজন হিসেবে থাকে ‘কম্ফোর্টার’য়ের জন্য কাপড়। যা আমাদের দেশের মানুষ সাধারণত আরেকটি চাদর হিসেবেই ব্যবহার করেন।

বালিশের কভার থাকে দুই থেকে তিনটি। এগুলোর দাম হয় ২ হাজার ৫শ’ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত।

টেবিল ক্লথ

নিউ মার্কেটের ‘উজ্জ্বল অ্যান্ড ব্রাদারস’ দোকানের মালিক আব্দুল রাজ্জাক হাওলাদার জানান, রেডিমেইড’য়ের মধ্যে চার কোনাকার, আয়তাকার, গোলাকার টেবিল ক্লথ পাওয়া যায়। ডাইনিং টেবিল, টি টেবিল, রিডিং টেবিল ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের টেবিলের জন্য রেডিমেইড টেবিল ক্লথ পাওয়া যায়।

প্লাস্টিক, রেক্সিন, নেটের কাপড়, ফাইবার ইত্যাদি নানান ধরনের টেবিল ক্লথ রয়েছে।

দাম ২৫০ টাকা থেকে ৭শ’ টাকা। আর রোল থেকে কেটে নিয়ে খরচ হবে গজ হিসেবে।

সর্বনিম্ন ৮০ টাকা গজ থেকে শুধু করে ৩শ’ টাকা গজের টেবিল ক্লথ আছে।

আরও আছে টেবিল ম্যাট। ছয় পিসের প্লেট ম্যাট আর এক পিস রানার দিয়ে মেলানো হয় সেট। আলাদাও পাওয়া যায়।

প্লাস্টিকেরগুলো ৮শ’ টাকা থেকে শুরু। আর কাপড়েরগুলো ৫শ’ টাকা থেকে শুরু।

সোফার কভার ও ফোম

যাত্রাবাড়ি চৌরাস্তার বিক্রমপুর বেডিং হাউজের পারভেজ আহমেদ বলেন, “সবচাইতে কমদামি ফোমের কোনো ব্র্যান্ডিং নেই, কোনো গ্যারান্টিও নাই। মানের দিক থেকে কিছুটা ভালো ফোমের নাম  হয় ‘ইউরোপিয়ান গোল্ড ফাইভ জি’, গ্লোল্ডেন আকিজ’য়ের হাই গ্রেড, বসুন্ধরা ফাইভ জি, গাজি ফাইভ জি, গোল্ড প্লাস ফাইভ জি।”

ব্র্যান্ডের ফোমগুলো ৫০ থেকে ৬০ বছরের গ্যারান্টি দেয়। এদের মধ্যে গোল্ড প্লাস ফাইভ জি, ইউরোপিয়ান গোল্ড ফাইভ জি’, গ্লোল্ডেন আকিজ’য়ের হাই গ্রেড ভালোমানের। এগুলোর দশটির সেট অর্থাৎ পাঁচ সিটের সোফার ফোমের সেটের দাম যথাক্রম ৪ হাজার টাকা, ৪ হাজার ৮শ’ টাকা ও ৫ হাজার টাকা।

ভালো ফোম চেনার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে পারভেজ জানান, “কমদামি ফোমের ওপর চাপ দেওয়ার পর চাপ তুলে নিলেও সেখানে একটা গর্ত রয়ে যায় বা ফোমটা ওই জায়গায় দেবে যায়। কিন্তু ভালোমানের ফোমে যত জোরেই চাপ দিন না কেনো তা দেবে যাবে না। ফোমের এক কোনা ধরে যদি তা শূন্যে তুলে ধরা হয় তবে ফোম ছিঁড়ে যাবে না। আবার ফোমের চারকোনা ভাঁজ করে মাঝখানে নিলেও তা ফেটে যাবে না। এই তিন পরীক্ষা করে ভালো ফোম বেছে নিতে পারবেন।”

“সোফার কভারও আমরা ১০ পিসে সেট হিসেব করি। ২ হাজার টাকা থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত হয় এই সেটগুলোর দাম। কভারের ভেতরে ফোমের ওপর মার্কিন কাপড়ের একটি প্রলেপ দেই আমরা।