স্বাধীনতার চেতনা বেঁচে থাকুক অন্তরে

দেশ, দেশের মানুষ, দেশের ইতিহাস সম্পর্কে ধারণা দিতে শিশুকে ঐতিহাসিক স্থানগুলোতে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।

তৃপ্তি গমেজবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 March 2022, 06:41 AM
Updated : 26 March 2022, 06:55 AM

ঐতিহাসিক স্থানগুলোতে বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি সে স্থানের পটভূমি বা ইতিহাস সম্পর্কে সন্তানকে জানানোর মধ্য দিয়ে তার মাঝে দেশ প্রেম ও জ্ঞানের আলো জ্বালানো সম্ভব।

সন্তানকে নিয়ে মাঝেমধ্যেই অনেকে বাইরে বেড়াতে যান বা কোনো রেস্তোরাঁতে খাওয়াতে। এর ফলে সন্তান যেমন খুশি তেমনি বাবা-মায়ের সঙ্গে সন্তানের সম্পর্ক আরও উন্নত হয়।  

পাশাপাশি যদি ঐতিহাসিক স্থানগুলোতে যেমন- জাদুঘর, বধ্যভূমি, বিভিন্ন গ্যালারি ইত্যাদি স্থানে নিয়ে যাওয়া হয় তাহলে শিশু যেমন ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবে, দেশের প্রতি ভালোবাসা বাড়বে এবং জ্ঞানের আলোও বিকশিত হবে।

বাংলাদেশ গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের শিশু বিকাশ ও সামাজিক সম্পর্কে বিভাগের অধ্যাপক রুমানা বাসার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শিশুর মনে আগ্রহ সৃষ্টি তার শিক্ষণকে দ্রুত ও স্থায়ী করে।“

তাই, ছোট থেকেই দেশ, মুক্তিযুদ্ধ ও শহীদদের প্রতি শিশুর ভালোবাসার বীজ বপন করতে হবে। জানাতে হবে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ধারণ করছে বধ্যভূমিগুলো। আছে স্মৃতিসৌধ ও জাদুঘর। তাই সন্তানকে এবার স্বাধীনতা দিবসে এমন কোনো স্থানে নিয়ে যেতে পারেন।

ঢাকায় বেশকিছু বধ্যভূমি রয়েছে। এর মধ্যে রায়ের বাজার বধ্যভূমি, মিরপুর বধ্যভূমি যা শহীদ বুদ্ধিজীবী গোরস্থানে নামে পরিচিত, (মিরপুর১১), নুরী মসজিদ পার্শ্বস্থ বধ্যভূমি, মিরপুর জল্লাদখানা বধ্যভূমি, (পাম্প হাউস মিরপুর), হরিরামপুর বধ্যভূমি, বাংলা কলেজ বধ্যভূমি, শিয়ালবাড়ি বধ্যভূমি, মুসলিম বাজার বধ্যভূমি, ঢাকা ইত্যাদি অন্যতম।

এছাড়াও, রয়েছে আদাবর গণকবর, মোহাম্মদপুর থানা বধ্যভূমি, রোকেয়া হল গণকবর, ইটখোলা বধ্যভূমি, (রায়েরবাজার)।

বধ্যভূমিতে ঘটে যাওয়া ঘটনার বিবরণী শিশুকে দেশ ও শহীদের প্রতি সম্মান এবং ভালোবাসা জাগাতে সহায়তা করবে।

স্মৃতিচারণ করে গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের ছাত্রী এলিজা বলেন, “ছোট বেলায় আমরা ছোট মামার সঙ্গে বধ্যভূমি ও জাদুঘরে যেতাম। ছোট থেকেই স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘটনাগুলো শুনতাম, এগুলো মনে অদ্ভুতভাবে দেশ ও শহীদদের প্রতি ভালোবাসা জাগাতো। এখন আর সেভাবে যাওয়া হয়ে ওঠে না, তবে চেষ্টা করি জাতীয় দিবসগুলো যথা সম্ভব সঠিকভাবে পালন করার। শহীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করার।”

রাজধানীর মিরপুরবাসী বেসরকারি স্কুল শিক্ষক কামরুল হাসান বলেন, “আমি সময় পেলেই আমার মেয়েকে মিরপুরের জাদুঘরগুলোতে নিয়ে যাই। সেখানকার জিনিস দেখে ওর মনে নানান প্রশ্ন জাগে। আমিও চেষ্টা করি তার উত্তর দিতে। এবার স্বাধীনতা দিবসে মেয়েকে বধ্যভূমিতে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা আছে।”

যে কোনো দেশ ও সংস্কৃতিকে জানতে জাদুঘর পরিদর্শন করা প্রয়োজন। ঢাকায় বেশ কিছু জাদুঘর রয়েছে। যেখানে গেলে শিশু আনন্দ পাবে এবং অনেক কিছু সম্পর্কে জানতে পারবে।

জাদুঘরের নাম উল্ল্যেখ করতে গেলে- শাহবাগে অবস্থিত বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, শিক্ষা চিরন্তন, বাংলা একডেমী জাদুঘর ইত্যাদির কথা না বললেই নয়।

ঢাকার আগারগাঁওয়ে রোববার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর পরিদর্শন করেন কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূত। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

এছাড়াও দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে সচেতনতা তৈরিতে আছে শিশু জাদুঘর। বাংলাদেশ সামরিক জাদুঘর, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর, বঙ্গবন্ধু ও চার নেতা কারা স্মৃতি জাদুঘর, স্বাধীনতা জাদুঘর।

সেগুনবাগিচার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউট ভাষা জাদুঘর, ভাষা শহীদ আবুল বরকত স্মৃতি জাদুঘর ও সংগ্রহশালা, বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বিমান জাদুঘর ইত্যাদি শিশুর মনে কৌতূলহ সৃষ্টি করার পাশাপাশি জ্ঞানের পরিধি ও দেশপ্রেম জাগ্রত করতে সহায়তা করবে।

তাই এই স্বাধীনতা দিবসে সময় করে সন্তানকে নিয়ে ঐতিহাসিক ও দর্শনীস্থানে বেড়িয়ে আসতে পারেন। স্বাধীনতার গৌরবের অর্ধশত বার্ষিকী শিশুর মনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।