মানসিক সুস্থতায় ‘নার্সিসিস্ট’ থেকে দূরে থাকুন

তবে কীভাবে বুঝবেন পাশের মানুষটি চরম ‘নার্সিসিস্ট’।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Feb 2022, 11:51 AM
Updated : 26 Feb 2022, 11:56 AM

‘নার্সিসিস্ট’ শব্দটি অনেকটা ‘অসামাজিক’ শব্দের মতো— যা বলতে গেলে অনেকাংশ সময় অপব্যবহার করা হয়। অনেকেই নার্সিসিস্ট বলতে এমন মানুষদের বোঝেন যারা কেবল নিজেদের নিয়েই কথা বলতে পছন্দ করেন। যা সব ক্ষেত্রে ঠিক নয়।

বরং নার্সিসিজম হল একটি ব্যক্তিত্বের ব্যাধি যা কারও সামগ্রিক এবং ধ্রুবক স্ব-গুরুত্বের অনুভূতির মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয়।

ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে এই বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের থেরাপিস্ট লেসলি ডোয়ারেস বলেন, “অনেক সময়, লোকেরা বিশ্বাস করতে পারে না যে, একজন আত্মকেন্দ্রিক ব্যক্তির মাঝে সহানুভূতির অভাব রয়েছে। তাদের আচরণ অন্যদের মনে দ্বিধা সৃষ্টি করতে পারে। এরা খুব অমায়িক আচরণ করে। তবে এর বিনিময়ে কিছু প্রত্যাশা থেকে থাকে। এমন মানুষদের থেকে নিরাপদ দূরে থাকাই উচিত।”

ছয় প্রকার ‘নার্সিসিস্ট’ থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন মানসিক চিকিৎসকরা। যাদের সঙ্গে সম্পর্ক থাকলে হয়ত আপনার জীবন হতে পারে বিষাক্ত। অথবা আপনি নিজেই এই পর্যায়ে পড়েন কিনা তাও যাচাই করে নিতে পারেন।

বিষাক্ত নার্সিসিস্ট

বিষাক্ত নার্সিসিজমের একটি পরিসীমা রয়েছে এবং এর কোনোটিই ভালো নয়।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্লিনিকাল সাইকোলজিস্ট জন মায়ার বলেন, “একজন বিষাক্ত নার্সিসিস্ট অন্যদের জীবনে ক্রমাগত নাটকীয়তা সৃষ্টি করে এবং খুব খারাপ সময়, কষ্ট ও ধ্বংসের কারণ হয়।”

কোনো বন্ধু যদি ক্রমাগত আপনার সব কাজের ওপর খবরদারী করে ও সব মনযোগের কেন্দ্রে থাকতে চায় এবং তা না হলে ভালো ব্যবহার করে না তারা ‘টক্সিক নার্সিসিস্ট’।

এছাড়াও অন্যান্য সমস্যা যেমন- চাকরি থেকে বরখাস্ত করানো, শারীরিকভাবে লাঞ্ছনা করা, সম্পর্ক অবসানের কারণ ইত্যাদিও টক্সিক নার্সিসিস্ট’য়ের লক্ষণ।

সাইকোপ্যাথিক নার্সিসিস্ট

ভীষণ অস্থির, আক্রমণাত্মক ইত্যাদি আচরনের বৈশিষ্ট্য থাকা ব্যক্তিকে সাইকোপ্যাথিক নার্সিসিস্ট বলা যেতে পারে।

এরা এমন এক ধরনের বিষাক্ত নার্সিসিস্ট, যারা প্রায়শই হিংস্র আচরণ করে থাকেন এবং পরে তাদের আচরণের জন্য কোনো অনুশোচনা দেখায় না।

‘সিরিয়াল কিলার’রা মূলত এই ধরনের নার্সিসিস্ট বলে জানান, ডা. মায়ার।

ক্লজেট নার্সিসিস্ট

অন্যান্য ধরনের নার্সিসিস্টদের তুলনায় এরা বেশি কৌশলী হয়। কারণ তারা নিজেদের রোগ সম্পর্কে স্পষ্ট জানেন না।

ডা. মায়ারের মতে, “একজন ক্লজেট নার্সিসিস্ট হলেন সেই ব্যক্তি যিনি অন্যদের বা সমাজের ওপর নিজের ব্যক্তিত্ব চাপান না কিন্তু দৃঢ়ভাবে নার্সিসিজমের বৈশিষ্ট্যগুলিতে বিশ্বাস করেন।”

এর অর্থ অনেক কিছু হতে পারে। যেমন- নিজেকে যোগ্য বোধ করা, প্রশংসা করার জন্য সবসময় অন্য লোকেদের প্রয়োজন, সাফল্য নিয়ে ব্যস্ত থাকা, অন্যদের প্রতি ঈর্ষান্বিত হওয়া এবং অন্যদের প্রতি সহানুভূতির অভাব।

ক্যালিফোর্নিয়ার মানসিক-চিকিৎসক আলিসা রুবি ব্যাশ বলেন, “তারা একটু বেশি সহনির্ভর এবং এমন ভান করার চেষ্টা করে যে, তারা সত্যিই নিঃস্বার্থ। এমন কারও সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করতে চায় যে তাকে সবসময় প্রশংসা করবে।”

প্রদর্শনীবাদী বা এক্সিবিশনিস্ট নার্সিসিস্ট

“এরা স্বভাবে ক্লোজেট নার্সিসিস্টের বিপরীত। এরা অন্যকে জানাতে পছন্দ করেন যে এরা নার্সিসিস্ট,” বলেন, ডা. মায়ার।

এই ব্যক্তি অন্যদের থেকে সুবিধা নেয় এবং প্রায়শই উদ্ধত এবং অহংকারী আচরণ করেন৷

এরা সবসময় সকলের কেন্দ্রে থাকতে পছন্দ করেন।

ব্যাশের মতে, “কেন্দ্রে না থাকলে তারা নিজেদের বেশ অবহেলিত মনে করেন।”

বুলিং নার্সিসিস্ট

এই ধরনের ব্যক্তির দুটি ভয়ানক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। কটাক্ষ করা এবং আত্ম-শোষণ।

বুলিং নার্সিসিস্টরা অন্য লোকেদের ছোট করে নিজেদের সেরা প্রমাণ করতে পছন্দ করে বলে জানান ডা. মায়ার।

এরা সবসময় জয়ী হওয়ার চেষ্টা করেন। এজন্য নানান রকমের পথ খুঁজে বেড়ায়। নিজেকে সেরা বোঝানোর জন্য অন্যকে কটাক্ষ করে ছোট প্রমান করতে চান।

প্রলুব্ধকারী নার্সিসিস্ট

এরা একটি জটিল ধরনের নার্সিসিস্ট- এরা প্রলোভনকারী।

“যৌন বা প্রেমের বিজয়ী হতে অন্যের সামনে নিজেকে দুর্দান্ত বা সেরা হিসেবে পটিয়সী তারা।” বলেন ডা. মায়ার।

এরা নিজের স্বার্থের জন্য অন্যের প্রশংসা করে। আর প্রয়োজন শেষ হলে যে কোনো সময়ই ছেড়ে চলে যেতে পারে।

কোন ধরনের নার্সিসিস্ট থেকে দূরে থাকা উচিত?

ডোয়ারেস বলেন, “যে কোনো ধরনের নার্সিসিস্ট জীবনে থাকাই বেশ যন্ত্রণাদায়ক। তবে ‘টক্সিক নার্সিসিস্ট’ আশপাশে থাকা যে কোনো রকমের ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই এদের থেকে দূরে থাকা ভালো।”

ব্যাশের মতে, “অন্যান্য নার্সিসিস্টরা নিজেজের নিয়েই বেশি ব্যাস্ত থাকে ফলে এরা টক্সিক নার্সিসিস্টদের মতো অতটা ক্ষতিকারক নয়।”

নানান রকমের নার্সিসিস্টদের ভীড়ে নিজেকে নিরাপদ রাখতে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। কাদের সঙ্গে মেশা হচ্ছে, তাদের মনোভাব কেমন ইত্যাদি বিবেচনা করে সঙ্গ নির্বাচন করা উচিত।

আরও পড়ুন