না শুনে বলার ভুলে সম্পর্কে মেঘের ঘনঘটা

অনুভূতি প্রকাশে যদি হয় ভুল তবে মন আরও বিগড়াবে, হবে সব ভন্ডুল।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 May 2021, 07:46 AM
Updated : 13 May 2021, 07:46 AM

প্রেমিক-প্রেমিকা, স্বামী-স্ত্রী কিংবা যে কোনো সুন্দর সুস্থ সম্পর্কের চাবিকাঠি হচ্ছে সঠিক যোগাযোগ।

আর এই ‘সঠিক’ বিষয়টাতেই যদি থাকে ভুল, তবে সঙ্গীর সঙ্গে তিক্ততা দিন দিন বাড়তেই থাকে।

ভাবছেন ভুলটা কোথায়?

সেগুলোই বরং জেনে নেওয়া যাক ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের আলোকে।

পাল্টা জবাব না খুঁজে সঙ্গীর কথায় মনযোগ দিন

তিক্ত আলোচনার সময় সঙ্গীর কথাতে কতটুকু মনযোগ থাকে? নাকি তার যুক্তির বিপক্ষে যুক্তি দাঁড় করাতেই ব্যস্ত থাকে মন? সেটা কি ঠাণ্ডা মাথায় কখনও ভেবে দেখেছেন?

যদি সঙ্গীর অভিযোগ বা কথা নাই শোনেন তবে ঝগড়া একটা ‘যুদ্ধ’ হয়েই থেকে যাবে, সমাধানে ধারে কাছে যাবে না কখনও।

যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস ভিত্তিক বিয়ে ও পারিবারিক-বিষয়ক নিবন্ধিত পরামর্শক শিরিন পেইকার বলেন, “এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে সঙ্গী আপনার কাছে দুর্বোধ্যই থেকে যাবে। একজন মানুষকে প্রকৃত অর্থে আপন করে নিতে হলে তার চাওয়া পাওয়াগুলো শুনতে হবে, সেগুলোকে মূল্যায়ন করতে হবে, তার প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে।”

“শুরুতে হয়ত সঙ্গী যা বলছে তাই একটু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে তার কথা তাকেই শোনানো হবে। তবে সময় যত গড়াবে, যত অনুশীলন বজায় রাখবেন ততই তাকে অনুভব করতে শিখবেন। আর সঙ্গীর কথায় কান না দিয়ে মন যদি অন্য কোথাও উড়ে বেড়ায়, তবে মনকে বশে আনুন, মনযোগ দিন সঙ্গীর কথায়।”  

আবেগ নিয়ন্ত্রণ

পেইকার বলেন, “মানুষ যখন উত্তেজিত থাকে তখন নিজেকে সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারে না। রাগের মাথায় মানুষ অপরকে কটাক্ষ করে, নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করে এমনকি নিজে বাঁচতে অপরকে আক্রমণ করে। তাই রাগের মাথায় সঙ্গীর সঙ্গে তর্কে যাওয়া কখনই উচিত হবে না। কিছুক্ষণ সময় নিয়ে নিজে শান্ত হন, ঘটনাটা নিয়ে ভাবুন। এবার আবেগ নয় বিবেক দিয়ে সিদ্ধান্ত নিন।”

তিনি আরও পরামর্শ দেন, “এরপরও যদি আলোচনা বিগড়ে যায়, তবে প্রয়োজনে আবার সময় নিন। তবে এসময় সরে আসার আগে মৌখিকভাবে বলে আসতে হবে আপনি শান্ত হওয়ার জন্য সময় নিচ্ছেন, আলোচনা থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন না।”

রক্ষণশীল মনভাব

“পরস্পরের মধ্যে বোঝাপড়ার করার ক্ষেত্রে আরেকটি বড় সমস্যা হল যখন মানুষ নিজের মতামতকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য অপরপক্ষের মতকে অস্বীকার করে। অথচ নিজেদের মতের অমিল হওয়া পেছনের কারণটা নিয়ে মাথায় ঘামায় না, অপরপক্ষের পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করেনা। আমরা ধরে নেই সঙ্গী যদি আমার কথা মেনে নেয় তবেই আমি জিতে গেলাম, তবে এমন মনভাব একেবারেই ভুল।” বললেন পেইকার।

তার মতে, “এখানে ঝগড়ায় শেষ পর্যন্ত কে ঠিক আর কে বেঠিক সেটা মুখ্য নয়, পরস্পরের প্রতি ভালোবাসাটা আসল। ঝগড়ায় জয়ী হতে গিয়ে যদি সঙ্গীর ভালোবাসা হারান, তার হতাশার কারণ হয়ে যান, তবে দিনশেষে আপনিই জীবনসঙ্গী হারাচ্ছেন। তাই সঙ্গীর মনের অবস্থাটা বোঝায় মনযোগ দিতে হবে।” 

কলহ এড়াতে হতাশা লুকানো

সঙ্গীর কোনো আচরণ অপছন্দ তবে তর্ক বাঁধার ভয়ে মুখ বুজে সহ্য করে যান।

পেইকার বলেন, “আপাত দৃষ্টিতে তা সহজ এবং মহৎ মনে হতে পারে। তবে এই চেপে রাখা হতাশা ক্রমেই আপনার মনে পাহাড় সমান হতে থাকবে। অপরদিকে কিছুই না বলার কারণে আপনার সঙ্গীর কোনো ধারণাই নেই যে মনের অজান্তে সংসার ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে। তাই সঙ্গীর বুঝে নেওয়া অপেক্ষার না থেকে নিজের মতামত তাকে সরাসরি জানান। অবশ্যই নরম ভঙ্গিতে জানাতে হবে।”

চাহিদাগুলো এড়িয়ে সমস্যার সমাধান চাওয়া

সঙ্গী যখন রাগ, অস্বস্তি, দুঃখ প্রকাশ করে তখন স্বভাবতই আমরা চাই তার সমস্যা সমাধান করতে, কারণ তাদের অস্বস্তি আমাদেরও অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

এসময় আমরা তাকে বিভিন্ন উপদেশ দেই। তবে সমস্যা হল বেশিরভাগ সময় সঙ্গীর চাহিদা তখন উপদেশ কিংবা তার সমস্যার সমাধান নয়। বরং সে চায় সহানুভূতি, শুনতে চায় তার অস্বস্তি অস্বাভাবিক নয়।

তাই এসময় উপদেশ না দিয়ে সঙ্গীকেই প্রশ্ন করতে হবে তোমার কী চাই? আমি কি কিছু করতে পারি?

পেইকারের মতে এটাই হবে আদর্শ সমাধান। 

জীবনকে ভাগাভাগি না করা

যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো’র ‘সার্টিফায়েড সেক্স থেরাপিস্ট’ জেনিফার লিটনার বলেন, “যে দম্পতি নিজেদের মধ্যে জীবনের গল্পগুলো ভাগাভাগি করেন না, নিজেদের চাহিদা, সীমাবদ্ধতাগুলো নিয়ে আলোচনা করেন না, তাদের সম্পর্কে বরাবরই কোথায় যেন একটা দূরত্ব থেকেই যায়।”

“আর এসব কথা সবসময় সোজা সরল হওয়া উচিত। আপনি যা বলতে চাইছেন তাই একজন স্বাভাবিক মানুষ বুঝবে, অন্য কিছু মনে করার অবকাশ রাখা চলবে না।”

কথা বলার সুযোগ কেড়ে নেওয়া

নিজের মনের কথাগুলো বলার সময় সঙ্গী যদি আপনাকে থামিয়ে দেয় তবে সেটা সম্পর্কের ভবিষ্যতের জন্য বড় ধরনের হুমকি।

লিটনার বলেন, “একজন মানুষ যখন কথা বলে তখন স্বাভাবিক ভদ্রতা হল তার কথা শোনা, তার মতামতটা বোঝার চেষ্টা করা। আর সেই মানুষটা যদি জীবনসঙ্গী হয় তবে তার কথার গুরুত্ব কয়েকগুন বেশি।”

“তাই পরস্পরের মন বুঝতে হলে একপক্ষকে যেমন মন খুলে মনের কথা বলতে হবে, তেমনি অপরপক্ষকে তা মনযোগ দিয়ে শুনতে হবে। তবেই মনের মিল হবে।”

আরও পড়ুন