ফ্রেঞ্চ ফ্রাই খাওয়ার কুৎসিত প্রভাব

ওজন বাড়া ছাড়াও রয়েছে নানান ক্ষতিকর দিক।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Jan 2021, 12:09 PM
Updated : 13 Jan 2021, 12:09 PM

মুখরোচক এবং প্রায় সবার প্রিয় খাবারের তালিকায় ফ্রেঞ্চ ফ্রাই থাকবেই। খুব কম মানুষই আছেন যারা সুস্বাদু এই খাবারকে না বলতে পারেন। সমস্যা হল খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই নিয়মিত যারা ফ্রেঞ্চ ফ্রাই খাচ্ছেন, তাদের বিপদের পড়তেই হবে।

‘দ্য আমেরিকান জার্নাল অফ ক্লিনিকাল নিউট্রিশন’য়ে প্রকাশিত প্রায় সাড়ে চার হাজার প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে নিয়ে করা গবেষণা বলে, সপ্তাহের দুবার যারা ফ্রেঞ্চ ফ্রাই খাচ্ছেন তাদের অকাল মৃত্যুর আশঙ্কা দ্বিগুন বাড়ে।

গবেষকরা জানান, ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের আলু তেমন ক্ষতিকর নয়। বরং থলের বিড়াল হল যে তেলে আলুটা ভাজা হচ্ছে সেটা।

অন্য যেকোনো পদ্ধতিতে রান্না করা আলুর সঙ্গে অকাল মৃত্যুর সম্পর্কে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের আরও কিছু ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানানো হল স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটের প্রতিবেদন অবলম্বনে।

পেট ব্যথা: কার্বোহাইড্রেট ও প্রোটিনের তুলনায় চর্বি হজম হয় দেরিতে। আবার ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের রন্ধন পদ্ধতির কারণে এতে ক্যালরির মাত্রাও হয় বেশি। এই দুয়ে মিলে অনেক স্বাস্থ্যকর খাবারের তুলনায় লম্বা সময় ফ্রেঞ্চ ফ্রাই পেট থাকবে।

‘আল্ট্রাসাউন্ড ইন্টারন্যাশনাল ওপেন’ নামক সাময়িকীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে গবেষকদের দাবি, এই কারণেই ফ্রেঞ্চ ফ্রাই থেকে পেট ব্যথা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

ডুবো তেলে ভাজা খাবারের হজম পদ্ধতির ভিন্নতার কারণে বমিভাব, ডায়রিয়া, পেট ফোলাভাব ইত্যাদি সমস্যায় ভোগার সম্ভাবনাও থাকে।

মাথায় ঘোলাটেভাব: ডুবো তেলে ভাজার কারণে ফ্রেঞ্চ ফ্রাইতে প্রচুর ‘ট্রান্স ফ্যাট’ থাকে, যা ক্ষতিকর কোলেস্টেরল বাড়ায়। আবার উপকারী কোলেস্টেরল কমায়। এর পরিণতি হল হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়া।

জাপানে ১,৬০০ জন মানুষের অংশগ্রহণে ১০ বছরের গবেষণা অনুয়ায়ী, যাদের রক্তে ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রানস ফ্যাট’য়ের মাত্রা বেশি, তাদের ‘আলৎঝাইমার’স ডিজিজ’ ও ‘ডিমেনশিয়া’ বা স্মৃতিভ্রংশ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে ৭৫ শতাংশ। ‘নিউরোলজি’ নামক সাময়িকীতে গবেষণাটি প্রকাশিত হয়। 

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: ‘কারেন্ট ওপিনিয়ন ইন ক্লিনিকাল নিউট্রিশন অ্যান্ড মেটাবলিক কেয়ার’ শীর্ষক সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণা অনুযায়ী, খাদ্যাভ্যাসে চর্বিযুক্ত খাবারের প্রাচুর্য থাকলে তা অন্ত্রের ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়া বাড়ানো এবং উপকারী ব্যাক্টেরিয়া ধ্বংস করার মাধ্যমে ‘মাইক্রোবায়োম’য়ের ভারসাম্য নষ্ট করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জোরদার রাখতে অন্ত্রের ‘মাইক্রোবায়োম’য়ের সেই ভারসাম্য অত্যন্ত জরুরি।

হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি: ‘ইউ.এস. ডিপার্টমেন্ট অফ ভেটেরান্স অ্যাফেয়ারস’ ও ‘ম্যাসাচুসেটস ভেটেরান্স এপিডেমিওলজি রিসার্চ অ্যান্ড ইনফর্মেইশন সেন্টার’য়ের যৌথ উদ্যোগে সামরিক বাহিনীর প্রায় দেড় লাখ সদস্যের ওপর একটি গবেষণা চালানো হয়।

এতে দেখা যায়, ডুবো তেলে ভাজা খাবার সপ্তাহের তিনবার খাওয়া হলে ‘হার্ট অ্যাটাক’ আর ‘স্ট্রোক’য়ের ঝুঁকি বাড়ে সাত শতাংশ। অংশগ্রহণকারীরা সপ্তাহের প্রতিদিন তেলে ভাজা খাবার খেলে সেই ঝুঁকি বেড়ে দাঁড়ায় ১৫ শতাংশে।

গবেষকরা বলেন, আমাদের গবেষণায় প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, যত বেশি তেলে ভাজা খাবার খাবেন ততই হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়তে থাকবে।

ওজন বৃদ্ধি: যেকোনো খাবার তেলে কিংবা চর্বিতে ভাজা হলে তার ক্যালরির মাত্রা প্রচুর পরিমাণে বেড়ে যায়। তেলে ভাজা খাবার খাওয়ার সঙ্গে ‘ওবেসিটি’ বা স্থূলতার সরাসরি সম্পর্ক প্রমাণ করেছে অসংখ্য গবেষণা।

তাই ফ্রেঞ্চ ফ্রাইসহ যেকোনো তেলে ভাজা খাবার যত কম খাবেন ততই সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা সহজ হবে।

আরও পড়ুন