করোনাভাইরাস: স্বাভাবিক জীবনযাত্রা কবে ফিরবে?

লকডাউন উঠে গেলেও মনের ভেতর একটা অস্বস্তি থেকেই যাচ্ছে।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Oct 2020, 08:04 AM
Updated : 11 Oct 2020, 08:04 AM

মানুষজন রাস্তাঘাটে বের হচ্ছে। ভিড় সমাবেশ হচ্ছে। বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ থাকলেও দেশের ভেতর ভ্রমণ চলছে। রেস্তোরাঁয় আড্ডা দেওয়াও শুরু হয়ে গেছে।

তারপরও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টা মাথা থেকে ঝেরে ফেলা যায় না। কারণ এখন পর্যন্ত কার্যকর টিকা আবিস্কৃতি হয়নি।

তাই পুরোমাত্রায় স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরে যেতে কতদিন লাগতে পারে এমন প্রশ্ন অনেকের মনেই ঘুরেফিরে আসে।

এই প্রশ্নটাই করা হয় যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজ’য়ের পরিচালক এবং ‘হোয়াইট হাউস করোনাভাইরাস টাস্ক ফোর্স’য়ের ড. অ্যান্থনি ফাউচি’য়ের উদ্দেশ্যে।

তার জবাব তুলে ধরা হল স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে।

প্রশ্ন ছিল- মানুষ প্রায়শই বিভিন্ন কথার আগে জুড়ে দেয়, “যখন সবকিছু স্বাভাবিক হবে তখন….”। স্বাভাবিক পরিস্থিতি কী আদৌ ফিরবে? ফিরলে তা কী চট করে ঘটা সম্ভব? নাকি কয়েক মাস কিংবা বছর ধরে গুটি গুটি পায়ে স্বাভাবিক জীবন আসবে?

ড. অ্যান্থনি ফাউচি উত্তরে বলেন, “অবশ্যই তা চট করে আসবে না। এই মহামারীর সমাধান এমন নয় যে সুইচ বন্ধ করে দিলাম আর বাতির মতো সংক্রমণও বন্ধ হয়ে গেল। টিকা যদি আসেও, তা ৯৯ শতাংশ কার্যকর হবে না। যদি তা হত আমি প্রচণ্ড খুশি হতাম। আমি চাই তাই হোক, কিন্তু তা হওয়া সম্ভব নয়।”

“অপরদিকে ৯৯ শতাংশ মানুষই যে টিকা নেবে সেটাও ভেবে নেওয়া অসম্ভব। কিছু মানুষ সবসময়ই থাকবে যারা টিকা নেবে না। এই প্রেক্ষাপটে যদি আমরা ধরে নেই যে, টিকার কার্যকারিতা ৭৫ শতাংশ আর ৬৫ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষ টিকা গ্রহণ করলেন। এখন যুক্তরাষ্ট্রকে পুরো পৃথিবীর একটি হিসেবেও যদি ধরে নেওয়া হয়, তারপরও শুধু আমাদের দেশেই অসংখ্য মানুষ থেকে যায় যাদের মধ্যে ভাইরাস সংক্রমণ ঘটতে পারে এবং তাদের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়াতে পারে।” 

“করোনাভাইরাস থেকে এখন পর্যন্ত আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি তারমধ্যে একটি তথ্য নিশ্চিত। আর তা হল এর সংক্রমণের ধরন, উপসর্গ নিয়ত পরিবর্তনশীল। তাই সাম্প্রতিক গবেষণাগুলো থেকে পাওয়া তথ্যগুলো আমাদের সবাইকে জানতে হবে। পাশাপাশি চিকিৎসকরা কোন পরামর্শ দিচ্ছেন সেদিকেও নজর রাখতে হবে সবসময়।”

এর আগে হলিউড অভিনেত্রী জেনিফার গারনার’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ডা. ফাউচি বলেছিলেন, “করোনাভাইরাস কীভাবে ছড়ায়, কাদের মাধ্যমে ছড়ায় সেবিষয়ে প্রত্যেকের সঠিক জ্ঞান থাকা অত্যন্ত জরুরি। এছাড়াও জানতে হবে, কখন মাস্ক খোলা নিরাপদ, ‘ফেইসশিল্ড’ আসলে কতটুকু নিরাপদ এবং ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকানোর পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।” 

এবারের সাক্ষাৎকারে ফাউচি আরও বলেন, “আমরা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনযাত্রার দিকে অগ্রসর হব। যেখানে সতর্কতা থাকবে কিন্তু লকডাউন থাকবে না। লকডাউন এখনও কার্যকরভাবে নেই। তবে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই বন্ধ রয়েছে। তাই প্রচণ্ড সাবধনতা অবলম্বন করে সেগুলো চালু করতে হবে।”

আমাদের কী এখনও মাস্ক পরতে হবে?

এই প্রশ্নে জবাবে ড. ফাউচি বলেন, “সম্ভাবনা তেমনই, এমনকি টিকা আসার পরও। আমার ধারণা, আমরা যদি এই মুহূর্তে ভালো এবং কার্যকর টিকা তৈরি করতে পারি, তবে স্বাভাবিক জীবনযাত্রার একটা পর্যায়ে পৌঁছাতে সময় লেগে যেতে পারে ২০২১ সালের তৃতীয় কিংবা চতুর্থ প্রান্তিকে। আমার প্রত্যাশা আরও আগেই যেন তা ঘটে, তবে তা কখনই চট করে ঘটবে না, ধীরে ধীরেই হবে।”

“আর সেই দিন আসার আগ পর্যন্ত আমাদের মাস্ক ব্যবহার করে যেতে হবে, হাত সাবান দিয়ে ধোয়ার অভ্যাস বজায় রাখতে হবে, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে, ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে। মোটকথা সকল স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।”

আরও পড়ুন