‘হিটার’ চালু রেখে ঘুমানোর অপকারিতা

শীতে উষ্ণ যন্ত্রের পরশে ঘুম ভালো হলেও শরীরের জন্য তা ক্ষতিকর।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Jan 2020, 07:24 AM
Updated : 27 Jan 2020, 07:24 AM

সারারাত ‘রুম হিটার’ চালিয়ে ঘুমানোর কারণে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে। ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। দেখা দিতে পারে অ্যালার্জি। এমনকি তা প্রাণঘাতিও হয়ে উঠতে পারে।

স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে জানানো হল বিস্তারিত।

ঝুঁকির কারণ: লম্বা সময় ‘রুম হিটার’ চালিয়ে রাখলে ঘরের বাতাসে ‘কার্বন মনোক্সাইড’য়ের মাত্রা নিরাপদ সীমা অতিক্রম করে। এর কারণে হৃদরোগীদের ক্ষেত্রে বুক ব্যথা দেখা দিতে পারে। হৃদরোগে আক্রান্তরা বিশেষ ঝুঁকিতে থাকবেন। তবে শিশু ও বৃদ্ধদেরও ঝুঁকির মাত্রা কম নয়।

অপরদিকে গ্যাসচালিত ‘রুম হিটার’ ব্যবহার করলে বাড়ে ‘অ্যাসফিক্সিয়া’ অর্থাৎ ঘুমের মধ্যে মৃত্যু হওয়ার ঝুঁকি। কারণ বাতাসে অতিরিক্ত ‘কার্বন মনোক্সাইড’য়ের কারণে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়। ফলাফল হতে পারে ‘হ্যামোরেইজ’ এবং মৃত্যু।

ত্বক, চোখ ও অ্যালার্জির আশঙ্কা: ‘রুম হিটার’ শীতে আরাম দিলেও চোখ ও ত্বকের জন্য তা ক্ষতিকর। কৃত্রিম তাপের কারণে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়, দেখা দিতে পারে চুলকানি, লালচেভাব এবং অ্যালার্জি। চোখও তার স্বাভাবিক আর্দ্রতা হারায়। দেখা দিতে পারে জ্বালাপোড়া এবং ‘কনজাংটিভাইটিস’ বা চোখ ওঠা।

ত্বক ও চোখের শুষ্কতা এড়াতে ঘরের যেখানে ‘হিটার’ চলছে সেখানেই এক মগ পানি রাখতে হবে। যাতে ঘরের আর্দ্রতা বজায় থাকে। এছাড়াও হৃদরোগ ও হাঁপানি রোগী এবং বয়স্কদের ‘রুম হিটার’ ব্যবহারে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।

সাবধানতা: ‘হিটার’য়ের কাছাকাছি যেকোনো কিছু রাখার আগে সাবধান হওয়া উচিত। যেকোনো দাহ্য পদার্থ, কাগজ, বিছানা, আসবাবপত্র, কম্বল ইত্যাদি থেকে ‘হিটার’ কমপক্ষে দুতিন ফিট দূরে রাখতে হবে। ‘হিটার’ কখনই কার্পেট, কাঠ কিংবা প্লাস্টিকের ওপর রাখা যাবেনা। রাখতে হবে শক্ত এবং অদাহ্য সমতলে। শিশু ও পোষা প্রাণীর নাগালের বাইরে থাকতে হবে এই যন্ত্র। কখনই চালু অবস্থায় ‘হিটার’য়ের ওপর থেকে নজর সরানো চলবে না।

‘কার্বন মনোক্সাইড’য়ের বিষক্রিয়া থেকে বাঁচতে ঘর থেকে বের হওয়া ও ঘুমাতে যাওয়ার আগে অবশ্যই ‘হিটার’ বন্ধ করে এবং ‘প্লাগ’ খুলে নিতে হবে। মাথাব্যথা, মাথা ঝিম ধরা, পেট ব্যথা, অস্বস্তি, বমি ও বমিভাব এবং শারীরিক দুর্বলতা হল ‘কার্বন মনোক্সাইড’ বিষক্রিয়ার লক্ষণ। 

‘হিটার’য়ের ধরন

তেলচালিত হিটার: ‘কনভেকশন হিটার’ নামে পরিচিত এই তেলচালিত যন্ত্রটি প্রচুর তাপ উৎপন্ন করে এবং তেল স্থানান্তরের মাধ্যমে সেই তাপ ছড়িয়ে দেয়। যন্ত্রটিতে তাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য থাকে ‘থার্মোস্ট্যাট’। এই ধরনের ‘হিটার’য়ের রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিষ্কারের ঝক্কি কম। তবে তাপ ছড়ায় ধীরে।

কন্ডাকশন হিটার: ধাতব ‘কয়েল’ বিদ্যুতের সাহায্যে গরম করার মাধ্যমে তাপ উৎপাদন করে তা ঘরে ছড়িয়ে দেয় এই ধরনের ‘হিটার’। যন্ত্রের কাছাকাছি অংশ প্রথমে গরম হয়, পরে তা সারাঘর ছড়ায়।

ফ্যানযুক্ত হিটার: বন্ধ একটি ঘর দ্রুত উষ্ণ করতে পারে ‘কনভেকশন মোড’য়ে চলা এই ‘হিটার’। তবে ভেতরে সবসময় পাখা ঘুরতে থাকার কারণে শব্দ হয় প্রচুর এবং আর্দ্র পরিবেশে তা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ।

রেডিয়েন্ট বা ইনফ্রারেড হিটার: ‘ইনফ্রারেড’ রশ্মির সাহায্যে তড়িৎগতিতে ঘর গরম করতে পারে এধরনের ‘হিটার’। বিদ্যুত সাশ্রয়ী এবং পাখা না থাকায় চলে নিঃশব্দে। যাদের ধুলায় অ্যালার্জি আছে তাদের জন্য এই যন্ত্র উপযুক্ত। কারণ এটি ঘরের বাতাস গরম করে না বরং ঘরের বিভিন্ন বস্তুকে গরম করে।

পাখাযুক্ত ‘হিটার’য়ের দাম কম। তবে সবদিক বিশ্লেষণে তেলের ‘হিটার’ ভালো। কারণ তা পুরো ঘর সমানভাবে উষ্ণ করে।

আরও পড়ুন