এমনিতে সিলেট শহর হযরত শাহজাল (রঃ), শাহপরান (রঃ)-সহ আরও অনেক মাজার, কিন ব্রীজ, ঐতিহাসিক আলী আমজাদের ঘড়ি, শহর ঘেঁষা চা বাগান আর এয়ারপোর্ট রোডের আশপাশটা ঘুরেফিরে সারাদিন পার করে দেওয়া যায়। সঙ্গে রইলো পাঁচভাই হোটেল আর পানসি রেস্তোরাঁর মতো জায়গায় তৃপ্তি নিয়ে খাওয়া-দাওয়া।
তবে সিলেট ভ্রমণে বাড়তি পাওনা হিসেবে জুটতে পারে আশপাশের এলাকার মধ্যে ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর আর নয়ন জুড়ানো লালাখালের সৌন্দর্য।
আর এই দুই জায়গায় ঘুরে এসে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা জানাচ্ছেন আহমেদ শাফি।
ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর: সিলেট জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা কোম্পানিগঞ্জে অবস্থিত। সিলেট শহর থেকে প্রায় ৩৭ কিলোমিটারের পথl ভোলাগঞ্জ ধলাই নদ ধরে সীমান্তবর্তী জিরো পয়েন্ট ‘সাদা পাথর’ নামে পরিচিতl
আমার মতো হয়ত অনেকেই আছেন যারা কিছুটা নীরবতা পছন্দ করেন তারা চোখ বন্ধ চলে যেতে পারেন শীত মৌসুমে। একেবারেই ভিন্নরকম একটা পরিবেশ পাওয়া যাবে। নিজের মতো ঘুরে বেড়ান চারপাশ.. অতিরিক্ত মানুষের ভিড় একেবারেই পাবেন না। চারপাশটা একদম যুতসই একটা ছবির মতো। এ যেন ফটোশপে নিজের মতো সম্পাদনা করে নেওয়া একটা ব্যাপার l
এখানে অবশ্য শীতকালেই যাওয়ার উপযুক্ত সময়। কেননা ভরা বর্ষায় পানির প্রবাহ আর স্রোত বেশি থাকায় পানি অনেকটাই ঘোলাটে থাকে। আর শীত মৌসুমে গেলে পানির স্বচ্ছতা আপনাকে করবে বাকরুদ্ধ।
এতটাই স্বচ্ছ যাতে পানির তলদেশ দেখে সেখানকার গভীরতাই ধারণা করতে পারবেন না।
শহুরে দূষিত বাতাস আর রুগ্ন বুড়িগঙ্গা কিংবা শীতলক্ষ্যা দেখে আমরা যারা অভ্যস্ত তারা লালাখালের এই পানি
আবার কিছু জায়গায় পানির রং বদলে হয়ে যাবে; একেবারেই একটা আস্ত সুইমিং পুল। লালাখালের দুপাশে মায়াবী সুন্দর্য আর ছোট বড় পাহাড়ি ঢেউয়ের হাতছানি আপনাকে বিমোহিত রাখবে পুরোটা সময়। সঙ্গে চা বাগানে আলগোছে কাটিয়ে দিতে পারেন আরও কিছুটা সময়।
শরীরের অলসতাকে পুঁজি করে ছায়াশীতল বাগানে বিশ্রাম নিয়ে দেখতে পারেন। হয়তো জীবনের শেষের বসন্তগুলো কাটানোর জন্য এমন একটা জায়গার কথাই ভেবে রেখেছিল আপনার মন।
এছাড়া জাফলংগামী বাসে চড়ে কিংবা লেগুনা দিয়ে সিলেট জাফলংয়ের মধ্যবর্তী সারিঘাটে নেমে ওখানে থেকে ট্রলারে করে লালাখাল ভ্রমণ করা যায়। ভাড়া পরবে লেগুনা বা বাসে ৪০ থেকে ৬০ টাকা। আর ট্রলার সারিঘাট থেকে ১২০০ থেকে ১৬০০ টাকা পর্যন্ত। দরদাম আর সময়ের ওপর ভাড়া কমবেশি হতে পারে।
সারিঘাট থেকেও অটোতে করে জনপ্রতি ১৫ থেকে ২০ টাকায় লালাখাল ঘাটে যেয়ে ঘণ্টা ভিত্তিতে ট্রলার ভাড়া করে ঘুরতে পারেন।
থাকার ব্যবস্থা: আসলে ভোলাগঞ্জে সিলেট শহরের মতো খুব ভালো জায়গা না থাকলেও কিছু বোর্ডিং আছে। তবে লালাখালে পাবেন নাজিমগড় রিসোর্ট আর নর্দান রিসোর্ট। দেড় ঘণ্টার দূরত্বে সিলেট শহর সেক্ষেত্রে সবাই শহরেই ফিরে আসে।
থাকা-খাওয়া: সিলেটে ৮০০ থেকে ১৫০০ টাকায় মোটামুটি ভালো হোটেলে থাকা যায়। খাবার মোটামুটি সব জায়গায়ই ভালো। তবে পানসি আর পাঁচ ভাই রেস্তোরাঁয় খেতে ভুলবেন না। সাশ্রয়ী আর স্বাদ দুটোই পাবেন।
মনে রাখবেন- ছবির মতো সুন্দর জায়গাগুলোতে যেখানে সেখানে প্লাস্টিকের বোতল, প্যাকেট, যে কোনো ময়লা ফেলে নষ্ট করবেন না। প্রয়োজনে সঙ্গে রাখুন। পরে নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলুন।
ছবি: লেখক।