মাকে ভালোবাসি

নব্বই দশকের সন্তান- যারা ঘটা করে মা দিবস পালন করেছেন, এখন তারা নিজেরাই মা দিবসের শুভেচ্ছা পাচ্ছেন।

তৃপ্তি গমেজবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 May 2019, 03:25 AM
Updated : 12 May 2019, 03:26 AM

এক সময় কোনো দিবস নিয়ে খুব একটা মাতামাতি ছিল না। নব্বই দশকের শেষের দিকে বিভিন্ন দিবসের বেশ প্রচলন ঘটে।

মা দিবসকে সামনে রেখে কথা হয়েছিল কয়েকজন নতুন প্রজন্মের মায়েদের সঙ্গে যারা নিজেরা আগে মাকে ‘মা দিবসের শুভেচ্ছা’ দিতেন। আর এখন মা দিবসের শুভেচ্ছা পান।

শুভেচ্ছা দেওয়া ও পাওয়ার অনুভূতি কেমন? মা হিসেবে যখন সন্তানের প্রচেষ্টা কীভাবে মূল্যায়ণ করেন? সন্তানকে দেখে নিজের ছোটবেলার পাশাপাশি নিজের মায়ের কেমন উপলব্ধি হত সে সম্পর্কে কী মনে করেন - এই বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেন তারা।

এই প্রসঙ্গে বাংলাদেশ টেলিভিশন’য়ের শিল্প নির্দেশক শান্তা বড়ুয়া বলেন, “স্কুল কলেজে পড়া অবস্থায় মাকে ফুল, চকলেট যা পারি তা দিয়েই শুভেচ্ছা দিতাম। সবাই সবার মাকে শুভেচ্ছা দিত আমিও দিতাম। বলা যায় অনেকটা আনন্দ করেই কাজটা করতাম। যখন নিজে মা হই তখন প্রথম মায়ের অন্যভূতিটা বুঝি।”

“গত বছর আমার মা প্রথম আমাকে মা দিবসের শুভেচ্ছা দেয়। অদ্ভুত একটা অনুভূতি কাজ করছিল। তখন মনে হল আমিও তো মা!  সত্যি বলতে আগে মাকে শুভেচ্ছা দিতাম অনেকটা দেখাদেখিভাবে বা ঘটা করে। আর নিজে মা হওয়ার পরে এর মর্মার্থটা বুঝেছি। এখন মা দিবসে আমি আর মা একে অপরকে শুভেচ্ছা দেই। অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করে।”

মায়ের ঋণ কখনও শোধ হয়না কিন্তু বিশেষ দিনে মাকে জড়িয়ে ধরে শুভেচ্ছা দেওয়া অথবা ‘ভালোবাসি মা’– কথাটা বললে মায়ের ভালো লাগাটা অনেক বেড়ে যায় বলে মনে করেন, তিনি। 

উইলিয়াম ক্যারি স্কুলের শিক্ষক মেরিলিন ডি ক্রুশ বলেন, “আগে মাকে শুভেচ্ছা দিতাম এখন সন্তান আমাকে শুভেচ্ছা দেয়। যদিও ও অনেক ছোট মা দিবস বিষয়টা বুঝে না। তবে ওর বাবা ওকে শিখিয়ে দেয় এবং সে তা আমাকে এসে বলে। ওর মুখ থেকে ‘হ্যাপি মাদারস ডে’ শুনতে একটা প্রাপ্তি বলে মনে হয়। নিজে মা হওয়ার পরে আমার মায়ের অনুভূতিটা উপলব্ধি করতে পারি যে মায়ের আসলে কতটা ভালো লাগত।”   

নতুন মা হিসেবে অনুভূতি কেমন জানতে চাইলে ওমনিস্পেস লি.’য়ের নির্বাহী লিজা ডি’ কস্তা বলেন, “মা হিসেবে এবারই প্রথম মা দিবস। আগে মাকে মা দিবসের জন্য শুভেচ্ছা দিতাম। নিজে মা হওয়ার পরে উপলব্ধি করতে পারি মায়ের কাছে সন্তানের জায়গাটা কেমন। আগে মাকে শুভেচ্ছা দিতাম, উপহার দিতাম এবার মায়ের সঙ্গে সঙ্গে আমি আমার সন্তানের জন্য উপহার কিনব। দুইটার অনুভূতি একদম ভিন্ন।”

সন্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে বিশ্বাসী একজন মা জানান তার অভিজ্ঞতার কথা।

তিনি মনে করেন মা সন্তানের সম্পর্কে যদি বন্ধুর মতো হয় তাহলে একে অপরকে আরও বেশি বুঝতে পারে। একজন অন্য জনের যে কোনো প্রচেষ্টাকে আরও বেশি মূল্যায়ণ করতে পারে।

গ্রিন জেমস ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিক্ষক ফওজিয়া নূর বলেন, “আগে মায়ের সব কাজে সাহায্য করতাম মায়ের যেন কষ্ট কম হয় সেদিকে খেয়াল রাখতাম কিন্তু মাকে কখনই মুখ ফুটে কিছু বলা হত না। নিজে মা হওয়ার পরে বিষয়গুলো উপলব্ধি করতে পারি যে, মনের কথা মুখ ফুটে বলাটাও জরুরি। বিশেষ দিনগুলো আসে হয়ত এই কারণেই।”

সবাই তার মাকে ভালোবাসে কিন্তু এই বিশেষ দিনগুলোতে মুখ ফুটে ভালোবাসার কথা বললে মা নিজের বুঝতে পারেন যে, তার সন্তান তাকে কতটা ভালোবাসে।

তিনি আরও বলেন, “আমার মেয়েরা যখন আমাকে উইশ করে- ফুল, কার্ড অথবা চকলেট যাই হোক না কেনো মাকে খুশি করার সন্তানের এই প্রচেষ্টাকে অনেক বড় মনে হয়। তখন নিজের ছোটবেলার কথা মনে হয়। যদি আমার মাকেও এইভাবে শুভেচ্ছা দিতাম তাহলে তার আরও বেশি ভালো লাগতো।”

মাকে ভালোবাসতে আসলে বিশেষ কোনো দিন লাগে না। মায়ের প্রতি ভালোবাসা সবসময়ের জন্য। কিন্তু বিশেষ দিবসে মাকে একটু জড়িয়ে ধরে ভালোবাসার কথা বললে অথবা তার জন্য কোনো উপহার নিয়ে গিয়ে শুভেচ্ছা দিলে মায়ের ভালোলাগাটা অনেক বেড়ে যায়।