বিশ্বের নানা প্রান্তের সাগর তলদেশের অদেখা জগত এক ছাদের তলায় দেখতে এখানে জড়ো হন সারাবিশ্বের পর্যটকরা।
দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম এই ‘সি অ্যাকুরিয়াম’য়ে আছে প্রায় আট হাজার সামুদ্রিক প্রাণি ও মাছ।
মোট ২০টি অ্যাকুরিয়ামে পৃথকভাবে প্রর্দশিত হচ্ছে নিরীহ কিন্তু বিশাল এবং ভয়ঙ্কর সুন্দর সব সামুদ্রিক জীব।
থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের পাথুয়ার এলাকার রামা সড়কের সিয়াম প্যারাগন শপিং সেন্টারের নিচ তলায় এই অ্যাকুরিয়ামটি। আগে এটিই বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত ছিল সিয়াম ওশান ওয়ার্ল্ড নামে।
চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে সি লাইফ ওশান ওয়ার্ল্ডে গিয়ে দেখা যায় পুরো অ্যাকুরিয়াম জুড়েই সৃষ্টি করা হয়েছে সাগর তলদেশের পরিবেশ।
দর্শনার্থীদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যাই বেশি। ব্যাংককের কয়েকটি স্কুলের শিক্ষার্থীরা এসেছিল দল বেঁধে। প্রচুর ভারতীয় আর কিছু বাংলাদেশি দশনার্থীরও দেখা মিলল।
অ্যাকুরিয়ামে ঢুকতেই আপনাকে স্বাগত জানাবে লালচে জায়ান্ট প্যাসিফিক অক্টোপাস।
ওই শিশু বাংলাদেশের লহ্মীপুরের বাসিন্দা ব্যবসায়ী রাশেদ হোসেন ও কামরুন নাহার দম্পতির সন্তান ওয়াসিক হোসেন।
কামরুন নাহার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, অ্যাকুরিয়ামে টোকা দিলে অক্টোপাস যে উঠে দাঁড়াবে সেটা আমার মাথাতেই আসেনি। শিশুরা অনেক সহজ করে ভাবে।
“প্রাণিরাও দেখছি শিশুদের মতো করে ভাবে। ছেলেটা খুব মজা পাচ্ছে।”
বরফে সাজানো একটি অ্যাকুরিয়ামে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকা ‘কালো কোট পড়া ভদ্রলোক’দের ‘পেঙ্গুইন আইস অ্যাডভেঞ্চার’ ঘুরে ঘুরে দেখছিল সব বয়সি দর্শনার্থীরা।
আর বরফ শীতল পানিতে দ্রুত গতিতে সাঁতার কাটে জেন্টু। তাই জেন্টুর অ্যাকুরিয়ামের সামনে শিশুরা বসে ছিল। পানিতে ডুব সাঁতার দিয়ে গলা বাড়িয়ে আবার জেন্টু দেখছিল শিশুদের।
জেন্টু পেঙ্গুইনকে অনুসরণ করে এপাশ ওপাশ করছিল শিশুরা। ডুব সাঁতার দিয়ে উঠে কোনো এক শিশুর চোখে চোখ পড়তেই আবার ডুব জেন্টুর।
ব্যাংককের মঙ্গোলয়েড চেহারার শিশুরা স্কুলের পোশাক পরে বসেছিল ভোঁদড়ের আস্তানার সামনে। দুষ্টু ভোঁদড় একবার সামনে এসে আবার আড়াল হয়ে যায়।
এই শিশুদের কয়েকজনের কাছে ইংরেজিতে নাম জানতে চেয়ে ব্যর্থ হলাম। এদের শিক্ষকরা ব্যস্ত শিশুদের এক অ্যাকুরিয়াম থেকে আরেক অ্যাকুরিয়ামে নিয়ে যেতে।
ওশান ওয়ার্ল্ডটি সাত ভাগে ভাগ করা। ডিপ রিফ, রেইন ফরেস্ট, ভীতিকর ও সুন্দর, পাথুরে সৈকত, খোলা সমুদ্র, সাগর জেলি এবং লিভিং ওশান।
আছে বর্নিল লায়ন ফিশ ও ওয়াটার লিফ। রেইন ফরেস্ট ফিশের মধ্যে আছে আমাজনের বৃহদাকারের আরাপাইমা। বহরে যেমন জেলি ফিশ আছে, তেমনি আছে স্ট্রিং রে, হাঙ্গর, বড় সামুদ্রিক কচ্ছপ আর সি হর্স।
এখানকার দুই প্রধান আকর্ষণ ‘শার্ক ওয়াক’ আর ‘ওশান টানেল’।
ওশান টানেলে ঢুকতেই দেখতে পাবেন মাথার ওপর আর আশপাশ থেকে ছুটে আসছে নানা আকৃতির হাঙ্গর। কেউ টানেলের কাঁচে হাত স্পর্শ করে তা ছুঁতে চাইছে।
বাংলাদেশ থেকে ডায়মন্ড সিমেন্ট লিমিটেডের পরিচালক আজিম আলী ওশান ওয়ার্ল্ডে আসেন স্ত্রী পাকিজা আকতারকে নিয়ে।
তিনি বলেন, শার্ক ওয়াক আর ওশান টানেল ভালো লেগেছে। এক অ্যাকুরিয়াম থেকে আরেক অ্যাকুরিয়ামে যাওয়ার পথে যে প্রাকৃতিক পরিবেশের সৃষ্টি করা হয়েছে তা সত্যি অতুলনীয়।
সত্যি এ যেন শিশুদের স্বর্গরাজ্য। তাদের জন্য আছে ‘অ্যামেইজিং ক্রিয়েশনস’ নামের একটি ইভেন্ট।
কাগজে সামুদ্রিক প্রাণির ছবি আঁকে শিশুরা। তারপর সেটি ফোর ডি প্রিন্টারে প্রিন্ট করে। এরপর সেই প্রাণিটিকে ভাসমান দেখতে পায় ডিজিটাল অ্যাকুরিয়ামে। আর খুব মজা পায় নিজের সৃষ্টিকে অ্যাকুরিয়ামে ছুটতে দেখে।
ওশান ওয়ার্ল্ডে সাগর তলদেশে বিয়ের আয়োজন, পার্টি এমনকি শুটিংয়ের সুযোগ আছে।
আছে সামুদ্রিক প্রাণির আদলে তৈরি নানা রকম পুতুল কেনার সুযোগও। সকাল ১০টা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত খোলা থাকে ওশান ওয়ার্ল্ড। টিকেট মিলবে ওয়েবসাইট আর ওশান ওয়ার্ল্ডের কাউন্টারে।