ডায়াবেটিস দূরে রাখতে

বংশগত কারণে অথবা অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের জন্য দেখা দিতে পারে ডায়াবেটিস। এর থেকে বাঁচতে সচেতনতা ও নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনই একমাত্র উপায়।

তৃপ্তি গমেজবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Nov 2017, 08:38 AM
Updated : 14 Nov 2017, 08:47 AM

খাদ্য থেকে আমরা শক্তি পাই। এই শক্তি আসে শর্করা বা গ্লুকোজ থেকে। সব খাবার থেকেই শর্করা পাওয়া যায়। আর পাকস্থলির কাছে থাকা পরিপাকরস নিঃসরণকারী অন্ত্র অগ্নাশয় বা প্যাঙক্রিয়াস থেকে আসা ইন্সুলিন হরমোন গ্লুকোজ বা শর্করা থেকে তৈরি করে শক্তি। আর সেটা রক্তের মাধ্যমে পৌঁছে যায় শরীরের কোষে কোষে।

ইন্সুলিন কম বা একেবারেই তৈরি না হলে রক্তে শর্করা থেকে যায়। ফলাফল রক্তের শর্করার মাত্রা বাড়তে থাকা। আর এই অবস্থার নামই ডায়াবেটিস, বা বহুমুত্ররোগ। 

রাজধানীর বিজিএমইএ হেলথ ক্লিনিকের ‘ফ্যামিলি মেডিসিন’ বিশেষজ্ঞ ডা. লিন্ডা এস.সমদ্দার বলেন, “রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে গেলে ডায়াবেটিস দেখা দেয়। এটা জিনগত কারণে অথবা অনিয়মিত জীবন যাপনের জন্যও হয়ে থাকে। তাই শুরু থেকেই এর প্রতি সচেতন হওয়া দরকার।”

ডায়াবেটিস হওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি জানান, সারাদিন বসে থাকা অর্থাৎ নড়াচড়া না করা, প্রতিবেলার খাওয়ার সময় ঠিক না রাখা, অপরিমিত খাবার খাওয়া এবং ডায়াবেটিস সম্পর্কে ঠিকঠাক ধারণা না থাকার কারণে ডায়াবেটিস হতে পারে। 

নির্দিষ্ট সময়ে, পরিমিত পরিমাণে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া হলে ডায়াবেটিসয়ের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়।

জিনগতভাবে যাদের ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা আছে এটা তাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তাছাড়া সবসময় খাদ্য তালিকায় শাকসবজি ও তাজা ফল রাখা, অতিরিক্ত তেল চর্বিজাতীয় খাবার না খাওয়া এবং একটানা বসে না থেকে হাঁটাচলা ও শারীরিক পরিশ্রম করলে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমে।

ডা. লিন্ডা বলেন, “চিকিৎসাশাস্ত্রে তিনটি ‘ডি’ মেনে চলার কথা বলা হয়। যা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায় এবং যাদের এরই মধ্যে ডায়াবেটিস হয়েছে তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এই তিনটি ‘ডি’ হচ্ছে – ‘ডিসিপ্লিন’ (শৃঙ্খলা), ডায়েট (খাদ্যাভ্যাস) এবং ড্রাগ (ওষুধ)।

যাদের ডায়াবেটিস হয়নি তারা যদি প্রথম দুটি ‘ডি’ অর্থাৎ শৃঙ্খলা ও সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চলে তাহলে তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যাবে।

আর যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তাদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী জীবনযাপন ও ডায়েট মেনে চললে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তবে কোনো কারণে যদি এসব নিয়ম মানার পরও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকে তাহলে তৃতীয় ‘ডি’ অর্থাৎ ওষুধ গ্রহণ করতে হবে।

অনেকে ডায়াবেটিস হওয়ার ভয়ে চিনি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলেন।

এই প্রসঙ্গে ডা. লিন্ডা বলেন, “মিষ্টি খেলেই যে ডায়াবেটিস হবে তা নয়। তবে কোনো কারণে ডায়াবেটিস হলে মিষ্টি খাবার এড়িয়ে চলতে হয়। ডায়াবেটিস হয় রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে গেলে, চিনি খাওয়ার জন্য ডায়াবেটিস হয় না।”

“তবে চিনিজাতীয় খাবার বেশি খেলেন, অথচ সেই অনুযায়ী পরিশ্রম করলেন না তাহলে একসময় ডায়াবেটিস হয়ে যেতে পারে। তাই যাদের ডায়াবেটিস নেই তারা নিজের স্বাদ মতো চিনি খেতেই পারেন। পাশাপাশি পর্যাপ্ত শরীরচর্চার অভ্যাস করতে হবে।”

এই চিকিৎসক পরামর্শ দেন, যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত খাবার গ্রহণ করতে হবে এবং নিয়মিত ডায়াবেটিস পরীক্ষা করতে হবে।