শুষ্ক খসখসে হাতের ত্বকে বয়সের ছাপ আগে পড়ে। এর থেকে পরিত্রাণের উপায়ও আছে।
Published : 03 Dec 2023, 11:24 AM
সারাদিন বিভিন্ন কাজে হাতের ব্যবহার হয়। ফলে হাতে পড়ে শুষ্ক, রুক্ষ ও অনেক ক্ষেত্রে ফাটা ভাব।
রুক্ষ হাতে ত্বকের সুরক্ষার স্তর ব্যাহত হয়। ত্বকের আর্দ্রতা হ্রাস পায়। ফলে অরক্ষিত হয়ে পড়ে হাতের কোমলভাব। আর এই সমস্যা আরও প্রকোট হয় শীতের শুষ্কতায়।
শুষ্ক ও রুক্ষ হাতের কারণ
পারিবেশিক অবস্থা যেমন- শুষ্ক বাতাস, তীব্র গরম বা শীতের শুষ্ক বাতাস ও ব্যক্তিগত ত্বক পরিচর্যার জন্য যেমন- অতিরিক্ত হাত ধোয়া বা পর্যাপ্ত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার না করা- এসব কারণেই হাত শুষ্ক হয়ে পড়তে পারে।
এছাড়া তরল সাবান ও ডিটার্জেন্টের প্রভাবেও এরকম হতে পারে।
এই বিষয়ে রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে নিউ ইয়র্ক-ভিত্তিক চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ড্যান্ডি ইঙ্গেলম্যান বলেন, “অনেক তরল সাবানে থাকে সোডিয়াম লরিয়াল সালফেট নামক উপাদান যা ত্বককে অনেক বেশি শুষ্ক ও রুক্ষ করে ফেলে। ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় ত্বক আরও বেশি পানিশুন্য হয়ে যায়।”
খুব বেশি হাত ধোয়া: মৃদু, সালফেট মুক্ত সাবান দিয়ে হাত ধোয়াও হাতকে রুক্ষ শুষ্ক করে ফেলতে পারে।
নিউ ইয়র্ক’য়ের আরেক নিবন্ধিত ত্বক বিশেষজ্ঞ রায়ান টার্নার বলেন, “ঘন ঘন পানি, বিশেষ করে অনেক বেশি গরম পানি দিয়ে হাত ধোঁয়া ত্বকের সুরক্ষার স্তরকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।”
হাতের কাজ বেশি করা: ডা. টার্নার বলেন, “নির্দিষ্ট কিছু কাজে হাতের ব্যবহার বেশি হয় যেমন- কেউ যদি শারীরিক পরিশ্রম করে অথবা ঘরের কাজ করে এমনকি সেলুনে কাজ করেন তাহলে ক্ষতিকর কোনো রাসায়নিক উপাদান হাতের সংস্পর্শে এসে জ্বলনি সৃষ্টি করে এবং ত্বক শুষ্ক করে ফেলে।”
শুষ্ক বাতাস: যখন বাতাস শুষ্ক থাকে বাকি সবকিছু শুষ্ক হয়ে যায় যেমন চুল, শরীর এবং হাত ঠাণ্ডা। আর শীতকালে বাতাস অনেক বেশি সুস্থ থাকে এবং ঘরের ভেতরে কৃত্রিম তাপমাত্রা সৃষ্টির ফলে অনেক ক্ষেত্রে শুষ্কতার সৃষ্টি করে থাকে।
একজিমা: এই দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ জনিত ত্বকের সমস্যা থেকে ত্বকে চুলকানি, খসখসে-ভাব সংবেদনশীলতা ও রুক্ষতা দেখা দেয়। ফলে চামড়া ওঠা এবং খসখসে অনুভূতি হয়- ডা. টার্নার।
হাত কোমল করার উপায়
হাতে কোমল ভাব বজায় রাখার অন্যতম উপায় হল ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা। আর যতটা সম্ভব শুষ্ক বাতাস থেকে সুরক্ষিত থাকার ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এছাড়াও হাত ধোয়ার ব্যাপারেও সচেতন থাকতে হবে।
অতিরিক্ত গরম পানি এড়িয়ে চলা: গরম পানি দিয়ে গোসল বা হাত ধোয়া আরামদায়ক মনে হলেও তা আসলে ভালো অভ্যাস নয় বরং হাতের জন্য ক্ষতিকর।
নিউ ইয়র্ক’য়ের ‘শাফের ক্লিনিক ফিফথ অ্যাভিনিউ’য়ের সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞ এডিটা জ্যারস বলেন, “খুব বেশি গরম পানির সংস্পর্শে না যাওয়া এবং মৃদু তাপমাত্রায় থাকা বেশি উপকারী।”
হ্যান্ড স্যানিটাইজার এড়িয়ে চলা: হাত সুরক্ষিত রাখতে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবহার প্রচুর।
তবে ডা. টার্নার বলেন, “যদি হাতের ত্বকের শুষ্কতার সমস্যা হয়ে থাকে তবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ঘন ঘন ব্যবহার না করাই শ্রেয়।”
তিনি জানান, হ্যান্ড স্যানিটাইজার উচ্চ যৌগের অ্যালকোহল সমৃদ্ধ। এতে হাত পরিষ্কার হওয়ার পাশাপাশি হাতের শুষ্কতাও দেখা দেয়।
তাই হাত পরিষ্কার রাখতে এর পরিবর্তে কুসুম গরম পানি দিয়ে হাত ধোয়া এবং ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা যেতে পারে।
হাত শুকানোর জন্য না ঘষা: হাত শুকানোর জন্য তোয়ালেতে হাত না ঘষে বরং আলতোভাবে চাপ দিয়ে পানি মুছে নেওয়ার পরামর্শ দেন, ডা. টার্নার।
এতে করে হাত অনেক বেশি শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। ঘর্ষণের ফলে হাত এক্সফলিয়েট হয় এবং ত্বকের ওপরের স্তর থেকে আর্দ্রতা শুষে নেয়।
‘এক্সফলিয়েন্ট’ ধরনের উপাদান ব্যবহারের পরে হাত ধুয়ে নেওয়া: ত্বক পরিচর্যার উপকরণে যদি ‘এক্সফলিয়েটিং’ উপাদান যেমন- রেটিনয়েড, আলফা এবং বেটা হাইড্রোক্সি অ্যাসিড, এঞ্জাইম থাকে তাহলে ব্যবহারের পরে সাথে সাথে হাত ধুয়ে নিতে হবে।
এক্সফলিয়েটিং উপাদান হাতের শুষ্কতা ও রুক্ষতা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
ঘন হ্যান্ড ক্রিম ব্যবহার: ডা. ইঙ্গেলম্যান বলেন, “ঘন, আর্দ্রতা রক্ষাকারী হ্যান্ড ক্রিম ব্যবহারে রুক্ষ ত্বক কোমল রাখার অন্যতম উপায়। হাত ধোয়ার পরে আর্দ্রতা রক্ষাকারী ময়েশ্চারাইজার ক্রিম ব্যবহার করা জরুরি। হাতের নাগালে হ্যান্ড ক্রিম রাখা ও ঘন ঘন ব্যবহার করতে হবে।
পানি পান: ডা. জ্যারস বলেন, “হাতের আর্দ্রতা রক্ষায় কেবল মশ্চারাইজারের ওপর নির্ভর না করে বরং পর্যাপ্ত পানিপানের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। দৈনিক আট গ্লাস পানি পান করা দেহ আর্দ্র রাখতে সহায়তা করে।”
রাতে ত্বকের বাড়তি যত্ন: রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ঘন করে ভারী ‘হ্যান্ড ক্রিম’ ব্যবহার করে সুতির হাত মোজা পরে নিতে হবে। এটা শুনতে আজব লাগলেও এই হাত মোজা ক্রিমের মাধ্যমে ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সহায়তা করে এবং বাইরে আবহাওয়া অথবা বালিশ বা বিছানার ঘর্ষণ থেকে হাত সুরক্ষিত রাখে। ফলে হাত থাকে কোমল ও মসৃণ।
গ্লভস পরা: জ্যারস বলেন, “শীতকালে বাইরের শুষ্ক বাতাস থেকে বাঁচতে ‘হ্যান্ড গ্লাভস’ পরা উচিত। ‘হ্যান্ড ক্রিম’ ব্যবহার এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হাত মোজা বা গ্লভস পরা হাতের ত্বক সুস্থ সুন্দর রাখতে সহায়তা করে।”
আরও পড়ুন
খাদ্যাভ্যাস যেভাবে তারুণ্য ধরে রাখতে পারে