ভ্রু ঘন করার ঘরোয়া পন্থা

ভ্রু পাতলা হয়ে যাওয়ার নানান কারণের মধ্যে শারীরিক সমস্যাও থাকতে পারে।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Nov 2023, 09:07 AM
Updated : 8 Nov 2023, 09:07 AM

ভ্রু যে কেবল সৌন্দর্য বর্ধক হিসেবে কাজ করে এমনটা নয়, চোখে ঘাম পড়া এড়াতেও ভ্রু ভূমিকা রাখে।

এছাড়াও চোখের কোটরকে সুরক্ষিত রাখতে এবং মুখের অনুভূতি ফুটিয়ে তুলতেও এর ভূমিকা কম নয়।

ভ্রু পাতলা হওয়ার কারণ

ভ্রু চিকন বা পাতলা হওয়ার নানান কারণ রয়েছে।

ফার্মইজি ডটইন’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আয়ুর্বেদ চিকিৎসক অনুজা বোধার বলেন, “অনেকের ভ্রু প্রাকৃতিকভাবেই পাতলা, কেউ-বা খুব বেশি প্লাকড করেন অথবা অনেকের ক্ষেত্রে ভ্রুয়ের চুল পড়ে যাওয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে যা ‘ম্যাডারসিস’ নামে পরিচিত।”

এই রোগ ভ্রু ও চোখের পাপড়ি পড়ে যাওয়াকে নির্দেশ করে থাকে। এটা নানান স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণে হয়ে থাকে। যেমন-

সংক্রামক রোগ: কুষ্ঠ, সিফিলিস, হার্পিসস সংক্রমণ, এইচআইভি, চুলের ফলিকলের সংক্রমণ ইত্যাদি।

চর্মরোগ: ডার্মাটাইটিস (অটোপিক, সেবোরিয়েক, কন্টাক্ট ও নিউরো টাইপস) সিরোসিস, চুল ও অঙ্গের সংযোগ স্থানের সংক্রমণ।

চোখের রোগ: চোখের পাতায় নানান রকম সংক্রমণ।

পুষ্টির সমস্যা:  জিংক ও লৌহের ঘাটতি, হাইপোপ্রোটেনিমিয়া বা রক্তে প্রোটিন কমে যাওয়া এবং বায়োটিন বা ভিটামিন বি ৭’য়ের ঘাটতি।

নির্দিষ্ট ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কোলেস্টেরল, থাইরয়েড অথবা রক্ত জমাট বাঁধা দূর করতে ব্যবহৃত হয় এমন ওষুধ, নায়াসিন, ভ্যালপরিক অ্যাসিড ইত্যাদি।

শারীরিক সমস্যা: হাইপার থাইরয়েডিজম, হাইপার প্যারাথাইরয়েডিজম, হাইপো থাইরয়েডিয়াম, হাইপোথাইরয়েডিজম ইত্যাদি।

ট্রমা অথবা আঘাত: রেডিয়েশন বা কেমিক্যালের সংস্পর্শের ফলে আহত হওয়া বা কোকেনের প্রভাব।

অন্যান্য: দাঁতের চিকিৎসার পরে, ‘ট্রাইকোডিসপ্লেসিয়া’ নামক এক ধরনের চর্মরোগ, ক্যান্সার নিরাময়ের জন্য রেডিয়েশন থেরাপি ইত্যাদি।

ভ্রু ঘন করার ঘরোয়া উপায়

নানান প্রাকৃতিক উপাদানের মাধ্যমে ভ্রু ঘন করা যায়।

নারিকেল তেল: নারিকেল তেল চুলের বৃদ্ধিতে এবং সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। এটা চুল গজাতেও সহায়ক।

সামান্য পরিমাণ নারিকেল তেল নিয়ে ভ্রুয়ের অংশে আলতো ও গোলাকার ভাবে মালিশ করতে হবে। রাতে তেল ব্যবহার করে পরদিন সকালে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে।

অলিভ অয়েল: প্রাণীর ওপর গবেষণায় দেখা গেছে যে, জলপাইয়ের তেল চুলের বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।

তুলাতে জলপাইয়ের তেলে ডুবিয়ে ভ্রুয়ের ওপর মালিশ করতে হবে। সারা রাত রেখে সকালে ধুয়ে ফেলতে হবে। নিয়মিত ব্যবহারে এর উপকারিতা পাওয়া যাবে।

পেপারমিন্ট বা পুদিনার তেল: গবেষণায় দেখা গেছে রক্ত সঞ্চালন বাড়ানোর মাধ্যমে ফলিকল উজ্জীবিত করে চুল বৃদ্ধিতে সহায়তা করে পুদিনার তেল। এতে আছে চুল পড়া রোধ করার ক্ষমতা। আর নিরাময়কারী উপাদান।

ঘরোয়া পদ্ধতি হিসেবে পুদিনার তেল ব্যবহার করতে চাইলে তুলায় সামান্য পরিমাণ তেল নিয়ে গোলাকার ভাবে ভ্রুয়ের ওপর মালিশ করতে হবে।

রাতে মেখে পরদিন সকালবেলা ধুয়ে ফেলতে হবে। নিয়মিত ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

অ্যালো ভেরা: চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং এতে আছে চুল ও ফলিকল মজবুত করার ক্ষমতা। বিভিন্ন কাজে এটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ভ্রু ঘন করতেও এর ব্যবহার রয়েছে।

একটি তাজা অ্যালো ভেরার পাতা কেটে তার জেল আলাদা করে নিতে হবে। আর সাথে সামান্য পরিমাণ নারিকেল তেল মিশিয়ে ভ্রুর ওপর ব্যবহার করতে হবে।

শুষে নেওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলতে হবে। নিয়মিত ব্যবহার করলে ঘন ভ্রু পাওয়া যায়।

রোজমেরি তেল: ‘রোজমেরি এসেনশল অয়েল’ চুলের বৃদ্ধিতে ভালো কাজ করে। বাহ্যিক ব্যবহারে এই তেল ফলিকল উজ্জীবিত করে চুল গজাতে সাহায্য করে।

ভ্রু ঘন করতে ঘরোয়া পদ্ধতি হিসেবে রোজমেরি ও নারিকেল তেল একসাথে মিশিয়ে ব্যবহার করা যায়। দুই তেলের মিশ্রণ সারারাত রেখে পরদিন সকালে ধুয়ে ফেলতে হবে।

ল্যাভেন্ডার তেল: প্রাণীর ওপর গবেষণায় দেখা গেছে ল্যাভেন্ডার তেল চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। তবে মানবদেহের জন্য কার্যকর কি-না সেজন্য আরও বেশি গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।

ঘরোয়া উপায় হিসেবে ল্যাভেন্ডার তেল ব্যবহার করে ভ্রু ঘন ও গাঢ় করতে চাইলে কয়েক ফোঁটা তেল নিয়ে ভ্রুর ওপর আলতোভাবে মালিশ করে সারারাত রেখে দিতে হবে। পরদিন সকালে ধুয়ে ফেলতে হবে। নিয়মিত ব্যবহারে ভ্রু ঘন হবে।

পেঁয়াজের রস: এতে আছে নানান খনিজ উপাদান, প্রধানত লৌহ যা ফলিকলে অক্সিজেন যোগায়। ঘন ভ্রু পেতে পেঁয়াজের রসের সাথে মধু ব্যবহার করে সারারাত রেখে দিতে হবে। এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে দ্রুতই ঘন কালো মোটা ভ্রু পাওয়া সম্ভব।

যদিও এসব ঘরোয়া পদ্ধতিগুলো প্রচলিত। তবে অনেক সময় কার্যকর নাও হতে পারে। ভালো ফলাফল পেতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত।

যখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে

যদি দেখতে পান ব্যান্ড বা ফিতার মতো দাগ কপালে দেখা দিয়েছে।

যদি ফলিকল অঞ্চলে ঘন ‘প্লাক’ বা ময়লা দেখা যায়।

যদি মাথার চুলের পাশাপাশি ভ্রয়ের চুলো পড়ে যেতে থাকে।

কপালে রেখা দেখা দেওয়ার পাশাপাশি যদি চুলের প্রান্ত রেখা এবং দুই ভ্রুয়ের চুল খালি হতে থাকে।

যদি আলোক সংবেদনশীলতা, চুলকানি, চোখে পানি আসা, জ্বলুনি এবং মাঝেমধ্যে চোখ খচখচ করার সমস্যা দেখা দেয়।

ভ্রু পাতলা হয়ে যাওয়ার সমস্যা দেখা দিলে কেবল ঘরোয়া পদ্ধতির ওপর ভরসা না করে দ্রুতই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত। এতে সহজেই সমস্যার সমাধান পাওয়া সম্ভব হবে।

আরও পড়ুন

Also Read: প্রতিদিন ভ্রু’র যত্ন নেওয়ার পন্থা

Also Read: সুন্দর ভ্রু পাওয়ার পাঁচ উপায়

Also Read: নিজেই ভ্রু প্লাক করতে