যেসব পরিষ্কারক একসঙ্গে অবশ্যই মেশানো যাবে না

রাসায়নিক পণ্য একটার সঙ্গে অন্যটার বিক্রিয়া করে তৈরি হতে পারে বিষ।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Nov 2022, 11:14 AM
Updated : 5 Nov 2022, 11:14 AM

ঘর কিংবা শৌচাগার পরিষ্কার করতে এক পণ্যের সঙ্গে অন্য পণ্য মেশানোতে বিপদও হতে পারে।

আর এই অনলাইনের যুগে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে পরিষ্কারক ব্যবহারের নানান পন্থা দেওয়া থাকে। যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পেশাদার লোকদের নয়। তাই পরিস্কারক হিসেবে একাধিক পণ্যের ব্যবহার কতটা কার্যকর বা নিরাপদ তা ভেবে দেখার প্রয়োজন রয়েছে। 

যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল ক্যাপিটাল পয়জন সেন্টার’য়ের অন্তর্বতী নির্বাহি পরিচালক, মেডিকেল টক্সিকোলজিন্সট, সহকারী মেডিকেল পরিচালক কেলি কৃষ্ণা জনসন আর্বর রিয়েলসিম্পলডটকমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “নির্দিষ্ট কিছু পরিষ্কারকের রাসায়নিক উপাদান একসঙ্গে মিশ্রিত হলে তা খুব বিষাক্ত হতে পারে। আর সাধারণভাবে এগুলো কখনও মেশানো ঠিক নয়। এতে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হতে পারে যা শ্বাস-প্রশ্বাসের ওপর ঝুঁকি সৃষ্টি করে।”

অনেকেই মনে করেন একাধিক পরিষ্কারকের সংমিশ্রণ ভালো পরিষ্কার করতে পারে। তবে এটা সবক্ষেত্রে সঠিক না।

টয়লেট বা কমোডের ভেতরের অংশের পরিষ্কারক ও ব্লিচ

কমোড বা প্যানের ভেতরের অংশ অনেক বেশি নোংরা হতে পারে। তা দ্রুত পরিষ্কারের জন্য অনেকেই নির্দিষ্ট পরিষ্কারকের সঙ্গে ব্লিচ মিশিয়ে থাকেন।

ডা. জনসনের মতে এটা অনেক বিপজ্জনক মিশ্রণ।

তিনি বলেন, “টয়লেট বোল ক্লিনার ও ব্লিচ একসঙ্গে মেশালে ক্লোরিন গ্যাস তৈরি হতে পারে। সুস্থ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এই গ্যাস শ্বাস-প্রশ্বাসের ত্রুটি, কাশি, নাক ও গলায় জ্বালা পোড়া এমনকি শ্বাস নিতে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। হাঁপানি, সিওপিডি ও অন্যান্য ফুসফুসের রোগীদের জন্য এটা গুরুতর সমস্যার সৃষ্টি এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে।”

এই ধরনের গ্যাসের কারণে শ্বাসের জটিলতা দেখা দিলে দ্রুত খোলা বাতাসে যাওয়ার পরামর্শ দেন ডা. আর্বর জনসন।

তার পরামর্শ, “বিরক্তিকর উপসর্গগুলো ১০ থেকে ১৫ মিনিটের বেশি স্থায়ী হলে বা হাঁপানি ও অন্যান্য ফুসফুসের রোগের ইতিহাস থাকলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।”

ব্লিচ ও অ্যামোনিয়া

যুক্তরাষ্ট্রের বিষহীন পরিষ্কারক পণ্যের ব্র্যান্ড ‘ইসিওএস’য়ের প্রধান উদ্ভাবনী কর্মকর্তা জেনা আর্কিন বলেন, “ভোক্তারা না জেনেই এমন অনেক উপাদান একসঙ্গে মেশান যা তাদের স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর। ব্লিচ ও অ্যামোনিয়ার সংমিশ্রণ এর একটা উপাদাহরণ।”

সাদা করার লন্ড্রি পণ্য, টয়লেট ক্লিনার এবং কিছু জীবাণুনাশকে ক্লোরিন ব্লিচ থাকে। আর অ্যামোনিয়া থাকে জানালার পরিষ্কারকরগুলোতে।

এই ধরনের রাসায়নিক মিশ্রণের ফলে যে বিক্রিয়া হয় তা থেকে বিষাক্ত ক্লোরামাইন গ্যাস তৈরি হয়।

“ঘন এই গ্যাস প্রাণঘাতী হতে পারে”, বলেন তিনি।

অনেক পণ্যের গায়ে ব্লিচ উল্লেখ থাকতে পারে যা বিক্রয়ের লক্ষ্যে লেখা হয়। তাই পেছনের লেবেল পড়তে ভুলবেন না। অথবা দ্বিধা থেকে গেলে অ্যামোনিয়া মুক্ত পণ্য বাছাই করার চেষ্টা করার পরামর্শ দেন তিনি।

ব্লিচ ও ভিনিগার

ক্লোরিন ব্লিচ যেমন- ক্লোরোক্স ব্লিচ বা ব্লিচ নির্ভর পণ্য এবং সাদা ভিনিগার বা ‘নন-টক্সিক ভিনিগার’ নির্ভির যৌগ একসঙ্গে মেশানো ক্ষতিকর।

যুক্তরাষ্ট্রের পরিষ্কারক তৈরির প্রতিষ্ঠান ‘ডিফাঙ্কিফাই’য়ের প্রধান বিজ্ঞানী ড. ডেভিড এ. ওয়ালা বলেন, “ব্লিচ ও ভিনিগার বা যে কোনো অ্যাসিড বা অ্যাসিডিক পণ্য যেমন- টয়লেট ক্লিনার ক্লোরিন গ্যাস তৈরি করে। এরফলে কাশি, শ্বাস কষ্ট, জ্বালাপোড়া, চোখে পানি আসা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।”

হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ও ভিনিগার

হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড সমৃদ্ধ পণ্যের সঙ্গে ভিনিগার মেশানো ক্ষতিকর।

সতর্ক করে ড. ওয়ালা বলেন, “দুইটি প্যারাসেটিক অ্যাসিড। এই দুই যৌগ একসঙ্গে চোখ, ত্বক, গলা, নাক এমনকি ফুসফুসের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।”

ড্রেইন ক্লিনার ও ব্লিচ

পরিষ্কারের পরে দুর্গন্ধ কমাতে অনেকেই ড্রেইন ক্লিনারের সঙ্গে ব্লিচ ব্যবহার করেন। এটা মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে বলে জানান, যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ-বান্ধব পরিষ্কারক ব্র্যান্ড ‘আর্বোর’য়ের প্রতিষ্ঠাতা ক্যারল মেহাস।

তিনি বলেন, “ছোট নলের ভেতরে এর উপকরণগুলো বিক্রিয়া ঘটাতে পারে। ড্রেইন ক্লিনার সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড বা এক ধরনের ক্ষার ‘লাই’ দিয়ে তৈরি। এর রাসায়নিক যৌগ ভেঙে কড়া গ্যাসের তৈরি করে। ড্রেইনের নল খুব ছোট হলে এর গন্ধ বাইরে না আসলেও প্রতিক্রিয়া থেকে যায়।” 

এর বিক্রিয়া শ্বাসের সমস্যা, মুখ ও গলায় জ্বালা পোড়া এবং কিছুটা ফুসফুসের ক্ষতি করে বলে সতর্ক করেন তিনি।

ব্লিচ ও রাবিং অ্যালকোহল

বাথটাব বা কাউন্টারটপ জীবাণুমুক্ত করার ক্ষেত্রে ব্লিচ এবং রাবিং অ্যালকোহল একত্রিত করা ঠিক নয়। কারণ এটি ক্লোরোফর্ম তৈরি করে।

ড. ওয়ালা বলেন, “এটা অত্যন্ত বিষাক্ত সংমিশ্রণ যা চোখ, ত্বক, যকৃত, বৃক্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি করতে পারে।”

আরও পড়ুন

Also Read: রান্নার পাত্র থেকে দাগ তুলতে

Also Read: পরিষ্কার থাকার অভ্যাসগুলোও হতে পারে নোংরা

Also Read: দেহ পরিষ্কার করতে লুফা মোটেই নিরাপদ না

Also Read: পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় স্বাস্থ্য ঝুঁকি