পেটের অসুখ আইবিএসের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন

বিরক্তিকর পেটের সমস্যায় পড়তে না চাইলে মানতে হবে সুস্থ জীবন পদ্ধতি।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 March 2024, 08:06 AM
Updated : 4 March 2024, 08:06 AM

‘ইরিটেবল বাওল সিন্ড্রম’ বা আইবিএস হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয় মধ্য বয়স থেকে।

পেটের এই বিরক্তিকর সমস্যা ঠিক কী কারণে হয় সেটার উত্তর পাওয়া না গেলেও, চিকিৎসা বিজ্ঞানে ধারণা করা হয় অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, খাওয়া দাওয়া ও মানসিক চাপ এর জন্য দায়ী।

যুক্তরাষ্ট্রের অলাভজনক প্রতিষ্ঠান মায়ো ক্লিনিক’য়ে তথ্যানুসারে, আইবিএস’য়ের কারণে পেটে অস্বাভাবিক কার্যক্রম, ব্যথা ও ফোলাভাব দেখা দেয়। দীর্ঘমেয়াদে এই রোগের কারণে- যখন-তখন পেটব্যথা, গ্যাস হওয়া, ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় পড়তে হয় রোগীদের।

তবে ‘দি জার্নাল গাট’ সাময়িকীতে প্রকাশিত ‘চাইনিজ ইউনিভার্সিটি অফ হংকং’স জ্যাকি ক্লাব স্কুল অফ পাবলিক হেল্থ অ্যান্ড প্রাইমারি কেয়ার’য়ের করা সাম্প্রতিক গবেষণার ফলাফল বলছে- মধ্য বয়সে ও বয়স্কদের মধ্যে যারা শারীরিকভাবে কর্মক্ষম, পর্যাপ্ত ঘুমায়, স্বাস্থ্যকর খাদ্যভ্যাস রয়েছে, মদ্যপান করে না তাদের হজমতন্ত্র-বিষয়ক অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কমে প্রায় ৪২ শতাংশ।

গবেষকদের বরাত দিয়ে সিএনএন ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, বিশ্বের জনসংখ্যার ৫ থেকে ১০ শতাংশ বা ১০ জনের মধ্যে একজন এই সমস্যায় ভোগেন। যেটার প্রভাব হজমতন্ত্র, পেটসহ মানসিক অবস্থার ওপরেও পড়ে। বিষয়টা জানা থাকলেও কী কারণে এরকম হয় সেটা সম্পূর্ণভাবে এখনও চিহ্নিত করা যায়নি।

গবেষকরা দেখতে পান, অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যারা যত বেশি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন তাদের আইবিএস হওয়ার মাত্রা ততই রোধ হয়েছে। যারা কোনো স্বাস্থ্যকর অভ্যাসে রপ্ত ছিলেন না তাদের তুলনায় যারা অন্তত একটা স্বাস্থ্যকর অভ্যাসে ছিলেন তাদের ঝুঁকি কমেছে ২১ শতাংশ। অন্যদিকে যারা দুটি স্বাস্থ্যকর অভ্যাসে ছিলেন তাদের ঝুঁকি কমেছে ৩৬ শতাংশ। আর তিন থেকে পাঁচটি স্বাস্থ্যকর অভ্যাস যাদের আছে তাদের ঝুঁকি কমেছে ৪২ শতাংশ।

সহকারী গবেষক ও অধ্যাপক ভিনসেন্ট চি-হো চাং এক ইমেইল বার্তায় সিএনএন’কে লেখেন, “আমাদের গবেষণা এই পরামর্শ দেয় যে, জীবনযাপন পদ্ধতি পরিবর্তন ও উন্নয়ের মাধ্যমে আইবিএস’য়ের হওয়ার ক্ষেত্রে প্রাথমিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।”

স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন বলতে গবেষকরা বোঝান- নানান ধরনের শারীরিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকা, উন্নত মানের সুষম খাদ্যাভ্যাস, মদ্যপান না করা বা করলেও খুবই অল্প পরিমাণে, সাত থেকে নয় ঘণ্টা প্রতিরাতে ঘুমানো এবং ধূমপান না করা।

“আর এখন পর্যন্ত প্রতিরোধের চাইতে আইবিএস নির্ণয় ও চিকিৎসার ক্ষেত্রেই নজর দেওয়া হয়েছে বেশি। তবে আমাদেরটাই বিশাল আকারের গবেষণা যা এই রোগ প্রতিরোধের কার্যকর পদ্ধতি পাওয়া গেছে”- দাবি করেন তিনি।

গবেষকরা দেখতে পান বিভিন্ন স্বাস্থ্যকর অভ্যাসের মধ্যে প্রতি রাতে ভালো পরিমাণ ‍ঘুম আইবিএস’য়ের ঝুঁকি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

মানসিক চাপ

গবেষণায় জীবনযাপনের পদ্ধতিতে মানসিক চাপ বিষয়টাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

এই বিষয়ে ‘ইউনিভার্সিটি অফ ওকলাহামা হেল্থ সায়েন্সেস সেন্টার’য়ের মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক ডা. বেভার্লি গ্রিনউড-ভ্যান মিরভেল্ড বলেন, “প্রাথমিকভাবে আইবিএস হওয়ার ঝুঁকি প্রতিরোধে তাদের গবেষণার ফল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”

এই গবেষণার সাথে যুক্ত না থেকে তিনি আরও মন্তব্য করেন, “মানসিক চাপ পেটের এই সমস্যা তৈরির ক্ষেত্রে বিশাল প্রভাব রাখে। যা বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এলেও এই গবেষণায় যুক্ত করা হয়নি। আরেকটি বিষয় হল, আইবিএস সাধারণত মধ্যবয়স থেকেই শুরু হয়। তবে এখানে অংশগ্রহণকারীদের বেশিরভাগের ছিল ৫৫ বছরের মধ্যে।”

অন্যদিকে ‘ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটন’য়ের ‘বায়োবিহেইভিয়োরাল নার্সিং অ্যান্ড হেল্থ ইনফরম্যাটিক্স’য়ের অধ্যাপক ডা. মার্গারেট হাইক্যাম্পার বলেন, “পরিমাপ সীমিত হলেও নমুনার আকার অনেক বড়। তারা যে তথ্য প্রদান করেছে সেটা দিয়ে মধ্য-বয়স থেকে বয়স্কদের আইবিএস’য়ে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া যাবে বলে আমি মনে করি।”

ছবি: পেক্সেল্স ডটকম।

আরও পড়ুন

বিরক্তিকর পেটের সমস্যা

পেটব্যথা থেকে রোগের লক্ষণ

Also Read: যেভাবে বুঝবেন অন্ত্র ভালো আছে

Also Read: কোষ্ঠকাঠিন্য পরিত্রাণে প্রাকৃতিক উপাদান