কারও কাছে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা মানে, ডাক্তারের কাছ যাওয়া আর ওষুধ খাওয়া।
তবে জীবনযাত্রার অভ্যাসও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে অনেকখানি ভূমিকা রাখে। এর মধ্যে রযেছে পর্যাপ্ত পানি পান, সুষম খাবার খাওয়া ইত্যাদি।
তবে দিন শেষে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা বেশি জরুরি।
এই বিষয়ে ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে হিউস্টন’য়ে অবস্থিত ইউটিহেল্থ’য়ের ‘ম্যাকগোভার্ন মেডিকেল স্কুল’য়ের শারীরিক শিক্ষা-বিষয়ক হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ জন হিগিন্স বলেন, “গবেষণায় দেখা গেছে রাতে রক্তচাপ বৃদ্ধি বেশি ক্ষতিকর। কারণ এর সাথে নানান হৃদ-সংক্রান্ত রোগ, যেমন- হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক সম্পর্কিত।”
তাই তিনি রাতের বেলা সাতটি অভ্যাস রপ্ত করার পরামর্শ দেন, যাতে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
রাতে খাওয়ার পর হাঁটা
দিনের শেষের খাবার খাওয়ার পর হাঁটতে যাওয়া যে উপকারী- এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।
ডা. হিগিন্স বলেন, “এক্ষেত্রে মাত্র ১৫ থেকে ৩০ মিনিট হাঁটা রক্তচাপ নামিয়ে আনতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।”
শুধু তাই নয়, রাতের খাবারের পর হাঁটলে রক্তের শর্করার মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে থাকে। কারণ খাওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ে।
তবে খাওয়ার পরপরই হাঁটা যাবে না। এক্ষেত্রে খাবার খাওয়ার চল্লিশ মিনিট পর হাঁটতে যাওয়ার পরামর্শ দেন এই বিশেষজ্ঞ।
তিনি বলেন, “শরীরকে খাবার হজম করতে সময় দিন। তারপর হাঁটতে যান। তাহলে হাঁটা হবে আরামদায়ক।”
শোয়ার আগে ওষুধ খাওয়া
উচ্চ রক্তচাপের জন্য যারা ওষুধ গ্রহণ করছেন, তাদের জন্য সেরা সময় হল রাতে শোয়ার সময়।
ডা. হিগিন্স বলেন, “রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে রক্তচাপের ওষুধ খাওয়ার মানে হল ঘুমের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমানো।”
“অনিয়মিত ঘুম, অপর্যাপ্ত ঘুম ইত্যাদি ঘুমের যাবতীয় সমস্যার সাথে উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে”- বলেন ডা. হিগিন্স।
‘আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন (এএইচএ)’য়ের তথ্যানুসারে, “এমনকি, যারা প্রতি রাতে ছয় ঘণ্টার চেয়ে কম সময় ঘুমান তাদের উচ্চ রক্তচাপে ভোগার ঝুঁকি অনেক। সেই সাথে দেখা দিতে পারে হৃদরোগ, স্ট্রোক, টাইপ টু ডায়াবেটিস, অকাল মৃত্যু ইত্যাদি।
ডা. হিগিন্স বলেন, “হৃদস্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য সাত থেকে নয় ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন।”
রাতের খাবারে লবণ কম খাওয়া
এএইচএ জানাচ্ছে, “অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার কারণে হৃদযন্ত্র অনেক বেশি রক্ত সঞ্চালন করে, যে কারণে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়।]
ডা. হিগিন্স বলেন, “রাতের খাবারে বেশি লবণ খাওয়া মানে রক্তচাপ বৃদ্ধি। এমনকি ৪ হাজার থেকে ৮ হাজার মি.লি. গ্রাম লবণ গ্রহণ করার কারণে ধমনী সরু হয়ে যায়। ফলে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়।”
“তাই প্রতিদিন মাত্র ১ চা-চামচ লবণ খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে”- পরামর্শ দেন তিনি। “এর ফলে রক্তচাপ কম থাকার পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপ-রোধী চিকিৎসা হিসেবেও কাজ করবে।”
এএইচএ’র তথ্যানুসারে- ১ চা-চামচ লবণ কম মনে হলেও এটা ২,৩০০ মি.লি. গ্রাম সোডিয়ামের সমপরিমাণ।
রাতে লবণ কম খাওয়ার আরেকটি উপায় হল- প্রক্রিয়াজাত ও প্যাকেটজাত খাবার কম খাওয়া। কারণ এই ধরনের খাবারে লবণের পরিমাণ বেশি থাকে।
ডিজার্ট হিসেবে ফলের সালাদ খাওয়া
রাতের খাবারের পর মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছে হলে ফল খাওয়া উচিত। এতে রক্তচাপ স্থির থাকে। হতে পারে সেটা ফলের সাথে টক দই খাওয়া। আর ফল হিসেবে বেছে নেওয়া যেতে পারে- স্ট্রবেরিজ, কলা।
অ্যালকোহল পরিহার করা
মদ্যপান করা এমনিতেই খারাপ আর রাতে ঘুমানোর আগে অ্যালকোহল গ্রহণ মানে রক্তচাপ ঊর্ধ্বমুখি করা।
এএইচএ’র তথ্যানুসারে- দীর্ঘদিন এই বাজে অভ্যাসে থাকলে হৃদপিণ্ডের পেশির ক্ষতি হয়, যেখান থেকে ‘হার্ট ফেইল’ করার মতো বিপজ্জনক বিষয় ঘটে।
রাতে উত্তেজনা পরিহার করা
‘আমেরিকান সাইকোলজিকাল অ্যাসোসিয়েশন (এপিএ)’র তথ্যানুসারে- ধারণার চাইতেও বেশি মাত্রায় দেহের ক্ষতি করে মানসিক চাপ। এর ফলে রক্তচাপ যেমন বাড়ে তেমনি দীর্ঘদিন মানসিক চাপে ভোগার কারণে শরীরে যে প্রদাহ তৈরি হয় সেখান থেকে দেখা দেয় হৃদরোগ-সহ অন্যান্য শারীরিক সমস্যা।
ডা. হিগিন্স বলেন, “সারাদিনের উত্তেজনা রাতে প্রশমিত করার উপায় হল ‘নিজেকে যত্ন’ করার অভ্যাস।”
আর এজন্য ‘ডিপ ব্রেথ এক্সারসাইজ’, রাতে মানসিক চাপ বাড়ায় এরকম বিষয় এড়ানো যেমন- মোবাইল ফোন বা ইমেইল না দেখা, মন শান্ত করার সংগীত শোনা, রাতে বিছানায় যাওয়ার আগে কুসুম গরম পানিতে গোসল করা উপকারী।
এছাড়া হাতের কাছে খাবার পানি রাখার পরামর্শ দেয় মার্কিন অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক। কারণ দেহে সোডিয়ামের মাত্রা বাড়ার কারণে দেহে ‘ভাসোপ্রেসিন’ হরমোনের নিঃসরণ ঘটে। যা রক্তনালী সংকোচিত করে দেয়, ফলে বাড়ে রক্তচাপ।
তাই রাতে ঘুমে মাঝে তৃষ্ণা মেটাতে খাটের পাশে এক বোতল খাবার পানি রাখা উচিত।
আরও পড়ুন