‘ডিপ ব্রিথিং’ এক্সারসাইজ

গভীর শ্বাস দেহের প্রাণশক্তি বাড়িয়ে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে করে আরও সক্রিয় করে। শ্বাসক্রিয়া জীবনকে সচল রাখে। যদিও ৯৫ ভাগ মানুষই সঠিক প্রক্রিয়ায় শ্বাসক্রিয়ার ব্যবহার জানেন না। এতে বিপাকীয় কাজেও সমস্যা দেখা যায়। দীর্ঘস্থায়ী রোগও সৃষ্টি হতে পারে। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানাচ্ছেন কোয়ান্টাম হার্ট ক্লাব ও কোয়ান্টাম ব্যায়ামের মেডিকেল কাউন্সিলর (যোগব্যায়াম) ডা. আতাউর রহমান।

ফজলে আজিম, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Dec 2013, 04:28 PM
Updated : 24 July 2016, 10:51 AM

নিয়মিত গভীর দম চর্চায় জীবণীশক্তি বৃদ্ধি পায়। কর্মব্যস্ততার পর শরীর সহজেই শিথিল হয়। এর জন্য রয়েছে বেশ কিছু পদ্ধতি।

প্রথমে আমাদের দেহের ভেতরকার কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে হবে। তাহলে বোঝা সহজ হবে গভীর স্বাস-প্রশ্বাসের কার্যকারিতা।

‘ডিপ ব্রিথিং’য়ের মাধ্যমে বুক ও ফুসফুসের অসাধারণ ব্যায়াম হয়। টেনশন করলে শুধু মনের উপরেই নয়, এর প্রভাব দেহের উপড়েও পড়ে। ফলে ধীরে ধীরে দেহের পেশীগুলোও একসময় শিথিল হয়ে যায়।

এই ধরনের রোগে ‘ডিপ ব্রিথিং’ ভালো কাজ করে। এ কারণেই গভীর শ্বাস প্রক্রিয়া প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। হিন্দু সংস্কৃত ভাষায় এটি প্রাণা নামেই পরিচিত। যা অনুসরণ করে দেহকে প্রাণবন্ত করে তোলা যায়।

দেহ থাকবে সতেজ, মন হবে প্রফুল্ল। উপভোগ্য হবে প্রতিটি ক্ষণ। 

ডা. আতাউর রহমানের ভাষায়, “দেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ফুসফুসে ডিপ ব্রিথিংয়ের প্রভাব পড়ে। এর কাজই হচ্ছে সংকোচন ও প্রসারণ। দম নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতি থেকে অক্সিজেন বা জীবণীশক্তি গ্রহণ করে ফুসফুসের প্রসারণ ঘটে। দম ছাড়তে ছাড়তে শরীর থেকে দূষিত কার্বন-ডাই-অক্সাইড ত্যাগ করার সময় ফুসফুসের সংকোচন হয়।”

তিনি আরও বলেন, “প্রতিটি সুস্থ মানুষের দেহে ফুসফুস এ কাজটি জন্ম থেকেই করে যাচ্ছে। এতে স্বাভাবিকভাবে জীবন চলে। তবে দেহে রক্তসঞ্চালন সবসময় ভালো রাখতে দরকার নিয়মিত সঠিক নিয়মে দম চর্চা।”

এর জন্য বুক ভরে দম নেওয়ার চর্চা করতে হবে। এতে পেট ও পাকস্থলির ব্যায়াম হয়। গভীরভাবে দম চর্চা করলে ফুসফুস ভালোভাবে কাজ করে। পেট ও পাকস্থলিতে রক্তচলাচল স্বাভাবিক হয়। খাবার হজমজনিত সমস্যাও দ্রুত কমে আসে। যা থেকে পেতে পারেন সহজ স্বতঃস্ফূর্ত জীবন।

ডিপ ব্রিথিংয়ের উপকারিতা

* গভীর দমচর্চা নার্ভাস সিস্টেমে হরমনের কার্যকারিতা স্বাভাবিক থাকে।

* মানসিক চাপ কমায় ও টেনশন দূর করে।

* শরীরের ভেতরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রতঙ্গকে সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখে।

* মেজাজ ভালো রাখে।

* রক্ত দূষণমুক্ত করে ও রক্তচলাচল স্বাভাবিক রাখে।

* ফুসফুস সুস্থ রাখে।

* দেহের বাড়তি ওজন কমায়।

এছাড়া গভীর দমচর্চা ব্যথানাশক হিসেবে কাজ করে। অক্সিজেন প্রাণশক্তির উৎস। তাই বুক ভরে দম নিলে প্রাণশক্তিতে দেহ প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। নিয়মিত চর্চা করলে মানসিক ও শারিরীক পরিবর্তন অনুভব করা যাবে।  

নিয়মিত চর্চায় মেধা হবে শাণিত। কেন্দ্রীয় নার্ভাস সিস্টেম করবে আরও সক্রিয়।

যেভাবে চর্চা করবেন

‘ডিপ ব্রিথিং এক্সারসাইজ’ করতে বিশেষভাবে দমচর্চা করতে হয়। পুরো মনোযোগ থাকে কীভাবে দম নেওয়া হয় আর দম ছাড়া হয় সে দিকে।

এটা করতে দম নিতে হয় নাক দিয়ে। গভীরভাবে নাক দিয়ে দম নিয়ে ছাড়তে হয় মুখ দিয়ে। প্রতিটি দম নিতে সময় লাগবে ৩ থেকে ৪ সেকেন্ড। ছাড়তে সময় লাগবে কিছুটা বেশি। এটাই স্বাভাবিক নিয়ম।

এটি চর্চা করতে আপনার পছন্দের আরামদায়ক কোনো জায়গায় বসুন। হাত দুটো রাখুন হাঁটুতে। ঘাড় থাকবে সোজা। এবার নাক দিয়ে গভীরভাবে দম নিন। ধীরে ধীরে দম ছাড়ুন।

প্রতিবার দম ছাড়ার পর ১-২ সেকেন্ড অপেক্ষা করুন। আবার ধীরে ধীরে গভীরভাবে দম নিন। দম নেওয়ার সময় ১ থেকে ৫ পর্যন্ত গুণতে থাকুন। ধীরে ধীরে দম ছাড়ুন। দম ছাড়ার সময় ১ থেকে ৭ পর্যন্ত গণনা করুন। এভাবে ১০ বার করলে হবে এক রাউন্ড।

এতে শরীর দ্রুত আরাম পেতে শুরু করবে। ক্লান্তি, অবসাদ মুক্ত হয়ে উপভোগ্য হয়ে উঠবে প্রতিটি মুহূর্ত।

ঘুমের সমস্যা হলে বিছানায় শুয়েও একই নিয়মে ‘ডিপ ব্রিথিং’ চর্চা করতে পারেন। শরীর ‘রিলাক্স’ হয়ে কখন যে আপনি ঘুম এসে যাবে, তা টেরও পাবেন না।