স্লিপ অ্যাপনিয়া’তে ভোগার অদ্ভুত ৫ লক্ষণ

ঘুমের মাঝে শ্বাসক্রিয়া বন্ধ হওয়া আর শুরু হওয়াকে বলে ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Feb 2024, 12:02 PM
Updated : 12 Feb 2024, 12:02 PM

যদি ঘর কাঁপিয়ে নাঁক ডাকেন, তাহলে আপনি হয়ত ‘অবস্ট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া’ বা ‘ওএসএ’ বা ঘুমের মাঝে শ্বাস প্রস্বাস বন্ধ হওয়া ও খোলার সমস্যায় ভুগছেন।

ঘুমের মাঝে এই ধরনের সমস্যা যাদের হয় তাদের ১০ সেকেন্ডের জন্য শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যেতে পারে। যা কি-না খুবই বিপজ্জনক পরিস্থিতি। এর ফলে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এমনকি তিন গুন বেশি ঝুঁকি থাকে মারা যাওয়ার।

‘আমেরিকান অ্যাকাডেমি অফ স্লিপ মেডিসিন’ আরও জানায়, চিকিৎসা করা না হলে এই সমস্যার কারণে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, টাইপ টু ডায়াবেটিস, বিষণ্নতা এমনকি অকাল মৃত্যু হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

সিএনএন ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ‘মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটি’র ইন্টার্নাল মেডিসিন’য়ের চিকিৎসক ডা. রাজ দাসগুপ্তা বলেন, “যে নাঁক ডাকে সে তো টের পায় না, তাই আশপাশের মানুষদেরকেই তাকে সাবধান করতে হবে। তবে শুধু নাঁক ডাকাই নয়, ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’তে ভোগার আরও লক্ষণ রয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “যেমন পুরুষদের তুলনায় নারীরা নাঁক ডাকেন কম। তাই অন্যান্য উপসর্গগুলো জানা জরুরি।”

ঘুমে ঘামা

মার্কিন দাতব্য সংস্থা মায়ো ক্লিনিকের তথ্যানুসারে, বিভিন্ন কারণে রাতে ঘুমের মধ্যে ঘাম হতে পারে। যেমন- গরম আবহাওয়া, কোনো ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, থাইরয়েডের সমস্যা, ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ, মৌসুমি জ্বর ইত্যাদি।

তবে ডা. দাসগুপ্তা বলেন, “গবেষণায় দেখা গেছে প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ ‘অবস্ট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া’র কারণে রাতে ঘামেন।”

“এর কারণ হল পর্যাপ্ত অক্সিজেন না পেয়ে দেহে এক ধরনের ‘মর অথবা মার’ ধরনের অবস্থার সৃষ্টি হয়। যেটা থেকে হয় ঘাম।”

তিনি আরও বলেন, “যাদের ওএসএ আছে তাদের রাতে ঘামার সঙ্গে দেহে অক্সিজেনের পরিমাণ কম থাকার সম্পর্ক পাওয়া গেছে গবেষণায়।”

ক্ষণে ক্ষণে জেগে ওঠা

ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক’য়ের তথ্যানুসারে, অনেকেই প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে রাতে ঘুমের মাঝে একবার জেগে ওঠেন। এর বিভিন্ন কারণের মধ্যে আছে- অ্যালকোহল গ্রহণ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, গর্ভাবস্থা, নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ, প্রোস্টেট সমস্যা এমনকি রাতে ঘুমানোর আগে বেশি তরল গ্রহণ।

তবে ডা. দাসগুপ্তা বলেন, “রাতে যদি মূত্র বেগের কারণে অন্তত দুবার জেগে উঠতে হয়- যাকে বলে ‘নকটুরিয়া’- আর এটাও হতে পারে ‘অবস্ট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া’র লক্ষণ।

“গবেষণায় দেখা গেছে, ওএসএ’তে ভোগা রোগীদের মধ্যে ৫০ শতাংশের মাঝে ‘নকটুরিয়া’র সমস্যা রয়েছে”- বলেন এই চিকিৎসক।

তারপরও ঘুমের সমস্যার বিষয়ে প্রাথমিক চিকিৎসার ক্ষেত্রে জিজ্ঞাসাবাদের সময় ঘন ঘন প্রস্রাবের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় না।

দাঁত কিড়মিড় করা

“ঘুমের মাঝে দাঁতে দাঁত ঘষা বা চেপে রাখাকে বলা হয় ‘ব্রক্সিজম’। আর এটাও অবস্ট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া’র লক্ষণ”- বলেন ডা. দাসগুপ্তা।

তিনি আরও বলেন, “অবশ্যই মানসিক চাপ-সহ ‘ব্রক্সিজম’য়ের অন্যান্য কারণ থাকতে পারে। তবে সাধারণ কারণ হলে ওএসএ।”

এটা হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, “শ্বাস প্রশ্বাসের রাস্তা আটকে যাওয়ার কারণে মুখের পেশি ও চোয়াল আটকানো রাস্তা খোলার চেষ্টা করে। এই ব্যাখ্যাটা এখনও প্রমাণিত না হলেও বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ।”

দাঁত কিড়মিড় করার সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে অনেক দন্তচিকিৎসক ‘প্রোটেকশন’ ব্যবহার করতে বলেন। তবে সেটা চোয়ালকে সুরক্ষা দেয় না। যে কারণে চোয়ালে ব্যথা হতে পারে। পাশাপাশি দেখা দিতে পারে মাথাব্যথা।

সকালে মাথাব্যথা

‘দি ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক ফাউন্ডেশন’ পরিচালিত গবেষণায়, ‘অবস্ট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া’র সাথে মাথাব্যথা নিয়ে ঘুম ভাঙার সম্পর্ক পাওয়া গেছে।

এই তথ্য জানিয়ে ডা. দাসগুপ্তা বলেন, “সকালে ঘুম থেকে জেগে ওঠার পর সাধারণত প্রতিদিনই বা সপ্তাহের বেশ কয়েকটা দিন এই মাথাব্যথা ভুগতে হয় আর কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত থাকে। এর কারণ এখনও নির্দিষ্ট করা যায়নি।”

এই মাথাব্যথার কারণে পেট গুলায় না বা আলো কিংবা শব্দের প্রতি সংবেদনশীলতা কাজ করে না। বরং প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে কপালের দুপাশে চাপ ধরা ব্যথা অনুভূত হয়।

বিষণ্নতা ক্লান্তি অনিদ্রা

দাসগুপ্তা বলেন, “অবস্ট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া’র কারণে কারও কারও মানসিক সমস্যা, মাথা ঘোলাটে লাগা ও ঘুমের সমস্যা হয়।”

তিনি আরও বলেন, “চিন্তা করা, প্রতিক্রিয়া, মনে করা, সমস্যা সমাধান করার মতো বিষয়গুলো ঘুমের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়। নারীদের মাঝে বেশি দেখা দেয় অনিদ্রা, ক্লান্তি ও বিষণ্নতা।”

যদি ওএসএ’র কারণে জেগে উঠতে হয়, তবে আবার ঘুমাতে খুব সমস্যা হয়। এরকম হলে প্রথমেই অনিদ্রায় ভোগার কথা চিন্তা আসে। অন্য কারণও যে থাকতে পারে সেটা হিসেবে ধরা হয় না।

দিনের বেলায় ক্লান্তিবোধ, অনুপ্রেরণার অভাব, প্রতিদিনের কাজ শেষ না করার ইচ্ছা, ফলপ্রসূ কাজ করতে ইচ্ছে না হওয়া, স্মরণ শক্তিতে সমস্যা, সামাজিকভাবে মেলামেশা করায় অনিহা- এই ধরনের লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে।

এগুলো বিষণ্নতার উপসর্গ হলেও ঘুমের এই সমস্যার কারণেও যে এসব সমস্যা দেখা দেয়া, সেটা বেশিরভাগ সময় গোনায় ধরা হয় না- জানান ডা. দাসগুপ্তা।

 আর পড়ুন

Also Read: নাক ডাকার লক্ষণ হতে পারে ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’

Also Read: স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে নাক ডাকা

Also Read: জিহ্বায় চর্বি থেকে ঘুমের সমস্যা

Also Read: ঘুমের সময় হা করে নিঃশ্বাস নেওয়া মোটেই ভালো বিষয় নয়