বিকাল কি সন্ধ্যাবেলা মুখোরোচক কিছু খেতে মন তো আনচান করবেই। আর পাতে যদি জোটে ভিন্ন স্বাদের ব্যঞ্জন, সে তো রাজভোগ তুল্য।
Published : 21 Feb 2023, 03:57 PM
রন্ধনশিল্পী আইরিন সুলতানার রেসিপিতে ফুলকো লুচির স্বাদে নাস্তা হবে জম্পেশ।
কারণ একটু কড়াইশুঁটি, মানে ওই মটরদানা যোগে গরম গরম ফুলকো লুচি ভেঙে খেতে আহা-বাহা করতে করতে যে কেউ বলবে, আরেকটা কড়াইশুঁটির কচুরি হবে নাকি?
যা যা লাগবে
কড়াইশুঁটি ২৫০ গ্রাম। ময়দা ২ কাপ। সয়াবিন অথবা সূর্যমুখীর তেল ৩ থেকে ৪ টেবিল-চামচ। লবণ পরিমাণ মতো। পানি পরিমাণ মতো। কালোজিরা আধা চা-চামচ। কাঁচা-মরিচ ৪টি। জিরা গুঁড়া ১ চা-চামচ উঁচু করে নেওয়া। ধনিয়া গুঁড়া ১ চা-চামচ উঁচু করে নেওয়া। আদা কুচি ১ চা-চামচ (অথবা এক ইঞ্চি আদা কুচি করে নিতে হবে)। চিনি ১ চা-চামচ। ঘি ১ টেবিল-চামচ। হিং ১ চা-চামচ।
চটপট রান্না
ময়দাতে তেল, লবণ, কালোজিরা মিশিয়ে নিতে হবে আগে। তারপর অল্প অল্প করে পানি দিয়ে ময়ান দিতে হবে। ময়ান ঠেঁসে ঠেঁসে সময় নিয়ে করলে কচুরি ভালো হবে। হাতে সামান্য তেল নিয়ে ময়ান করা ময়দার গায়ে মেখে ঢেকে রেখে দিতে হবে।
এবার পুর করতে কড়াইশুঁটি, কাঁচা মরিচ, জিরার গুঁড়া, লবণ, চিনি এক সাথে নিয়ে পাটায় মিহি করে বেটে নিতে হবে। মিহি করে বাটার জন্য সামান্য পানি যোগ করা যেতে পারে।
এই মিশ্রণ ব্লেন্ডারেও বেটে নেওয়া যায়। চিনি এড়াতে চাইলে, কড়াইশুঁটি বাটার সময় চিনি যোগ করার প্রয়োজন নেই।
এবার চুলায় কড়াই চাপিয়ে তাতে ঘি দিতে হবে। ভালো ঘি হলে পুরের স্বাদ খুব ভালো হয়। ঘি এড়াতে চাইলে সাদা তেল দিয়েও রান্না করা যাবে।
ঘি গলে গেলে চুলার আঁচ কমিয়ে হিং দিতে হবে। হিং কয়েক সেকেন্ড নেড়ে নিয়ে কড়াইশুঁটি বাটা দিতে হবে।
কড়াইশুঁটি ভালো করে চেপে চেপে কষিয়ে নিতে হবে, যেন পানি একেবারেই শুকিয়ে যায়। কড়াইশুঁটিতে পানি রয়ে গেলে পরে কচুরি বেলার সময় নরম হয়ে যায় কিংবা পুর রুটি থেকে বেরিয়ে যায়।
কষানোর সময় চুলার আঁচ কম থাকবে, তাতে কড়াইশুঁটি বাটা পুড়ে যাবে না। পুর রান্না হয়ে গেলে একটি থালায় ঢেলে ঠাণ্ডা করে নিতে হবে।
দুই চা-চামচ ঠাণ্ডা পুর তুলে নিয়ে ময়ানে ভালো করে মেশানো যেতে পারে। এতে ময়দার ময়ানও দেখতে হালকা সবুজ হবে।
আবারও হাতে তেল মেখে ময়দার ময়ান থেকে ছোট ছোট লেচি কেটে নিতে হবে। একটি করে লেচি হাতের তালুতে নিয়ে গোলাকার করে মাঝে আঙ্গুলের চাপ দিয়ে গর্ত করে নিতে হবে। লেচি কিনারা চেপে চেপে একটু ছড়িয়ে দিতে হবে; অনেকটা ছোট বাটি আকারের হবে।
লেচির মাঝখানে এক চামচ অথবা লেচির আকার অনুসারে সামান্য করে পুর দিতে হবে। বেশি পুর দিলে লেচি বেলার সময় পুর বেড়িয়ে যায়। লেচির মুখটি আঙ্গুল দিয়ে চেপে চেপে এক সঙ্গে নিয়ে বন্ধ করে আবার দুই হাতের তালুতে ডলে গোল করে নিতে হবে।
এভাবে সবকটি লেচিতে পুর ভরে নিতে হবে।
এরপর রুটি বেলার কায়দায় লেচি বেলতে হবে। একবারে চাপ দিয়ে রুটি বেলা যাবে না। হালকা হাতে একবার বেলে এরপর রুটি তুলে ঘুরিয়ে আবার বেলতে হবে গোলাকার ও মাঝারি করে। রুটির কিনারাগুলো একটু পাতলা করলে কচুরি ভাজার সময় কিনার পর্যন্ত পুরোপুরি ফুলবে; তবেই না ফুলকো লুচি বলা যাবে।
সমান প্যান না নিয়ে মাঝে গর্ত বা ঢালু কড়াই নিলে কচুরি ভাজতে সুবিধা হয়। চুলায় কড়াইতে তেল গরম হলে আঁচ মাঝারি করে দিতে হবে।
একটা একটা করে কচুরি তেলে ছাড়তে হবে। চামচ দিয়ে গরম তেল কচুরির ওপরে তুলে তুলে দিতে হবে। সেই সঙ্গে চামচ দিয়ে কচুরির ওপর থেকে নিচের দিকে হালকা হাতে চাপ দিয়ে একটু ঘুরিয়ে দিতে হবে। এতে লুচি-কচুরি ভালোভাবে ফুলে ওঠে।
এসময় অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, যেন তেল গায়ে না ছিটে অথবা হাত লেগে কড়াই উল্টে না যায়।
কচুরি ফুলে উঠলে এবং দুই পিঠে হালকা রং চলে এলে নামিয়ে নিতে হবে।
ময়দার ময়ানে কিছুটা কড়াইশুঁটি পুর মেশানো ছিল বলে এই কচুরির রং একটু সবুজ দেখাবে। তবে ময়ানে কড়াইশুঁটি পুর না মেশালেও চেপে চেপে বেলার কারণে ভাজার পর কচুরি এমনিতেও হালকা সবুজ দেখাবে।
কচুরি চিরে দেখলে ভেতরেও সবুজ পুর দেখা যাবে।
শীতে কড়াইশুঁটির স্বাদ বহুগুণ বেড়ে যায়। বসন্তের হাওয়ায় এখনও শীতের আমেজ মিশে আছে। আলুর দম, আলু পোস্ত, কাবুলি ছোল ভুনা অথবা রসগোল্লার সঙ্গে এখনই কড়াইশুঁটি কচুরির স্বাদ না নিলে পরে নিজেকেই দুষতে হবে।