স্কুল থেকে বিদায় নেওয়ার দিন

আমার বিদ্যালয়ের নাম শাহবাজপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়। এটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ঐতিহ্যবাহী একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

সৈয়দ আমিনুল ইসলামসৈয়দ আমিনুল ইসলাম
Published : 1 Oct 2022, 06:24 AM
Updated : 1 Oct 2022, 06:24 AM

ছোটবেলা থেকেই প্রত্যেক শিশুর মা-বাবার স্বপ্ন থাকে তার সন্তানকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করার। সেই লক্ষ্যে সন্তানের পর্যাপ্ত বয়স হলেই ভর্তি করায় কোনো কিন্ডারগার্টেন স্কুল কিংবা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

জ্ঞান বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বয়সও বাড়তে থাকে। একটা সময় প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে যেতে হয় কোনো উচ্চ বিদ্যালয়ে।

আর প্রত্যেকটি শিশুরই তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত থাকে বিভিন্ন স্মৃতি। ঠিক তেমন আমারও বিদ্যালয়ের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে নানা আত্মস্মৃতি। কখনও বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডার বিশেষ কোনো মুহূর্ত কিংবা কোনো পুরস্কার প্রাপ্তির কাহিনি।

আমার বিদ্যালয়ের নাম শাহবাজপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়। এটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ঐতিহ্যবাহী একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বিদ্যালয়টি জেলার সরাইল উপজেলাধীন শাহবাজপুর গ্রামে অবস্থিত। এটি স্থাপিত হয় ১৯০৭ সালে। সেই হিসেবে বিদ্যালয়টির বয়স ১১৫ বছর।

আমি ২০২২ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছি। ষষ্ঠ শ্রেণি অর্থাৎ ২০১৭ সাল  থেকে এই বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছি। এবার বিদায় নিতে হলো এ বিদ্যালয় থেকে।

এ বিদ্যালয়ের সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমার হাজারো স্মৃতি। কখনও শিক্ষকদের স্নেহ, বিভিন্ন পুরস্কারপ্রাপ্তি, আবার কখনও বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডার বিশেষ মুহূর্ত। সবকিছু মিলিয়ে বিদ্যালয় থেকে বিদায় নিতে খুব কষ্ট লাগছে।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলী স্যার আমাকে খুব স্নেহ করতেন। আমার দাদা এ স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক হওয়ায় সবার থেকে আমাকে একটু বেশি নজরদারি করতেন হয়তো। আমার দাদার নাম সৈয়দ আজিজুর রহামান। স্কুলের বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রমগুলোতে অংশগ্রহণ করতাম বলে তিনি আমাকে প্রায়ই ডেকে নিয়ে নানা উপদেশ দিতেন। স্যারকে আমি একটা বই উপহার দিয়েছিলাম। এই বিশেষ মুহূর্তটি কখনও ভুলে যাওয়ার নয়।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠান হয়েছিল আমাদের স্কুলে। ওই অনুষ্ঠানে আমি এবং আমার আরও দুই বন্ধু মাহিন ও অর্প মিলে জারিগানে অংশ নিয়েছিলাম। এই গানে আমি এবং আমার দল প্রথম হয়েছিলাম। পুরস্কার বিতরণ শেষে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের রুমে যেতে একজনকে দিয়ে খবর পাঠানো হয় আমাকে। স্যারের রুমে যেতেই একটি হাসি দিয়ে অভিনন্দন জানান স্যার আমাকে। এসব কিছু কিছু মুহূর্ত আছে যা সবসময় মনে থাকবে।

প্রতি বছরই স্কুলে স্টুডেন্ট কেবিনেট নির্বাচন হতো। সেই নির্বাচনে কোনো সময় প্রিজাইডিং অফিসার আবার কোনো সময় পোলিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করতাম। যেখান থেকে অনেক অভিজ্ঞতা লাভ করেছি যা আমার বাস্তব জীবনে কাজে লাগবে।

এ স্কুলের সঙ্গে একটি বিশেষ মুহূর্ত হলো, ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীরা অর্থাৎ আমরা সব বন্ধু-বান্ধব মিলে একটা ব্যতিক্রম অনুষ্ঠান করেছিলাম, যা আগে কখনও কোনো ব্যাচ করেনি। ‘অসমাপ্ত উপাখ্যান-২২’ নামে একটা অনুষ্ঠান করেছিলাম যাতে করে আমাদের ব্যাচটিকে ব্যতিক্রম একটি ব্যাচ হিসেবে স্কুলের সব শিক্ষকেরা মনে রাখবেন।

সবচেয়ে বেশি কষ্ট লাগার কারণ হচ্ছে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সান্নিধ্য আর পাবো না, তাদের ভালোবাসা এবং যত্ন সহকারে পড়ানো কোনো দিন ভুলতে পারবো না। বিদায়ের মাধ্যমে স্কুল জীবনের সমাপ্তি। উচ্চ শিক্ষার তাগিদে এই বিদ্যালয় থেকে বিদায় নিতে হচ্ছে, তবু এই বিদ্যালয় ও শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধা- ভালোবাসা থাকবে আমৃত্যু।

কিডজ ম্যাগাজিনে বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!