ইচ্ছে করে দুষ্টুমি একটু বেশি করতাম: তামিম ইকবাল

ক্রীড়া পরিবারে জন্ম, ক্রিকেটের আবহে বেড়ে ওঠা। ক্রিকেটার হয়ে ওঠা তাই লেখা ছিল তামিম ইকবালের জীবনের চিত্রনাট্যেই। তামিম নিজেও ক্রিকেটার ছাড়া অন্যকিছু হওয়ার কথা ভাবেননি কখনোই।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 April 2022, 01:02 PM
Updated : 26 April 2022, 02:13 PM

অনেক ছোট থেকেই তাই নিয়ম করে ক্রিকেট একাডেমিতে গিয়েছেন, খেলেছেন বয়সভিত্তিক ক্রিকেট। তবে ক্রিকেটের বাইরেও তার ছেলেবেলা ছিল দারুণ আনন্দময়। বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক ও দেশের সফলতম ব্যাটসম্যান শোনাচ্ছেন সেই সময়ের গল্প। পাশাপাশি তিনি বাতলে দিচ্ছেন, ক্রিকেটার হতে হলে এগোতে হবে কোন পথ ধরে।

আনন্দে টইটম্বুর ছেলেবেলা

এক কথায় বললে, আমার ছেলেবেলা কেটেছে দারুণ আনন্দে। মূলত আব্বার কারণেই সেটা হয়েছে। আব্বা আমাকে খুব আদর করতেন। সব মা-বাবাই সন্তানকে ভালোবাসেন, তবে আমার বাবা আমাকে একটু বেশিই ভালোবাসতেন। সবাই বুঝত যে আব্বার প্রিয় সন্তান আমি। কোনো কিছু আব্দার করে পাইনি কখনোই এমন হয়নি, অনেক সময় না চাইলেও পেয়ে যেতাম।

আব্বা মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমার ছেলেবেলায় দুঃখ-কষ্টের কোনো ঘটনাই আমার মনে পড়ে না। ছোটবেলার একটা ঘটনা আমার খুব মনে পড়ে, মাঝেমধ্যে ইচ্ছে করেই দুষ্টুমি একটু বেশি করতাম। আব্বা যদি কোনো একটা কাজ করতে মানা করতেন, সেটি বেশি করে করতাম। কারণ একবার বকা দিলে বা টুকটাক মার দিলে, পরের দিন নিশ্চিতভাবেই বিশাল বড় কোনো গিফট পেতাম! এজন্য অনেক সময় প্ল্যান করেই দুষ্টুমি করতাম।

আব্বা আমাকে সব জায়গায় নিয়ে যেতেন। এত ঘনিষ্ঠ ছিলাম তার সঙ্গে, সবকিছুই খুব সুন্দর থাকত। খেলাধুলা করতাম, ক্রিকেট খেলতাম, আব্বা সবকিছুই নিজের হাতে করাতেন আমাকে। স্কুলে যেতে ইচ্ছে করত না, আব্বা কখনও জোর করতেন না। আম্মু একটু রাগ করতেন স্কুলে যেতে না চাইলে, কিন্তু আব্বা কখনোই আমাকে এসব নিয়ে কিছু বলেননি।

আমার ১১ বছর বয়সে আব্বা মারা যান। তার আগ পর্যন্ত যতদূর মনে পড়ে, আমার জীবন ছিল আনন্দে ভরপুর। বাবা মারা যাওয়ার পরও পরিবারের অন্য সবাই চেষ্টা করেছে আমাকে সবসময় হাসিখুশি রাখতে, যেন বাবার অভাব অনুভব না করি। সব মিলিয়ে আমার ছেলেবেলা দারুণ কেটেছে।

ক্রিকেটের শুরু

ক্রিকেটের শুরু যে কবে, আমি মনেই করতে পারি না। তার মানে নিশ্চয়ই অনেক ছোটবেলা থেকেই শুরু করেছি। যতদূর মনে করতে পারি, বোধ হওয়ার পর থেকেই ব্যাট হাতে ছুটোছুটির স্মৃতি আমার আছে।

আব্বা নিজে খেলোয়াড় ছিলেন, চাচারা খেলোয়াড়, বড় ভাই ক্রিকেটার, ছোট্ট থেকে ক্রিকেটের আবহে বড় হয়েছি। ছেলেবেলা থেকে আমি কেবল ক্রিকেটারই হতে চেয়েছি। অন্য কোনো লক্ষ্য, চাওয়া বা ভাবনা, কিছুই ছিল না আমার।

যথারীতি আমার আব্বা এখানেও ছিলেন দারুণ উৎসাহী। তিনি নিজেই সবসময় মাঠে নিয়ে যেতেন আমাকে। কোচিং বা একাডেমিতে পাঠানো, তিনি সব করতেন। তপন দা নামে একজন কোচ ছিলেন, তার কাছে আমি একদম ক্রিকেটের ‘অ আ ক খ’ শিখেছি। আর দশটা ছেলের মতোই একদম সবকিছু শিখে, প্রতিটি ধাপ পেরিয়ে এগিয়েছি।

আব্বা সবকিছু দেখতেন নিজে থেকে। এমনকি চিকিৎসা করাতে যখন ভারত গেলেন, তখন আমাকেও নিয়ে গেলেন, আমার বয়স ৮-৯ হবে, ভারতেও একটা একাডেমিতে আমাকে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন ওই কদিনের জন্য।

পড়ার পীড়াপীড়ি ছিল না

পড়াশোনার কোনো চাপ ছিল না আমার। পড়াশোনায় আমি এমনিতেও ভালো ছিলাম না। তারপর ছোট থেকে ক্রিকেট খেলেছি বলে পড়াশোনা আমার জীবনে সবসময়ই ছিল কম গুরুত্বপূর্ণ। সবাই জানতেন, আমি ক্রিকেটারই হবো। এমনকি স্কুলে শিক্ষকরাও জানতেন, এই ছেলে ক্রিকেটারই হবে। তারাও তাই সেভাবে চাপ দেননি।

একমাত্র আম্মুর টেনশন ছিল পড়াশোনা নিয়ে। সব মায়েদের মতো তিনি বলতেন যেন পড়াশোনা করি বা অন্তত মিনিমাম কোনো ডিগ্রি থাকে। অন্য কারও এটা নিয়ে মাথাব্যথা ছিল না।

আমার মধ্যেও তখন এমন কোনো ভাবনা ছিল না যে, পড়াশোনা ব্যাপারটি গুরুত্বপূর্ণ। মনে হতো, জাতীয় দলে খেলব, ক্রিকেটে ক্যারিয়ার গড়ব, পড়াশোনা দরকার নেই। যেটুকু পড়েছি, ইংলিশ মিডিয়ামে। পরে যখন বড় হয়েছি, জীবন সম্পর্কে বুঝতে শিখেছি, তখন খুব আফসোস হয়েছে। এখনও আক্ষেপ হয়। পড়াশোনা আরেকটু ভালোভাবে করলে, সবসময়ই কোনো না কোনো বিকল্প থাকে। এই উপলব্ধি তখন হলে অবশ্যই আরেকটু ভালোভাবে পড়তাম।

চাচা-ভাইকে কাছে না পাওয়া

আকরাম চাচা তো ঢাকায়ই থাকতেন মূলত। ক্রিকেটে ব্যস্ত থাকতেন। নাফিস ভাইয়াও ঢাকায় পড়াশোনা করতেন ও খেলতেন। তাদেরকে সেভাবে কাছে পাইনি ওই সময়। তারা যখন মাঝেমধ্যে চট্টগ্রাম আসতেন, তখন বাসায় একটা উৎসবের মতো পরিবেশ হতো। খুব মজা হতো তখন। তবে তাদের সঙ্গে আমার ছেলেবেলার স্মৃতি খুব কম।

ছোটবেলায় অতটা বুঝতাম না যে চাচা দেশের বড় ক্রিকেটার বা তারকা। প্রথমবার বুঝলাম ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ আইসিসি ট্রফি জয়ের পর। তখনও আমি অনেক ছোট। তবে মনে আছে, বাড়িতে তখন প্রতিদিনই অনেক লোকের ভিড় থাকত। বাংলাদেশ বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করার পর রঙের খেলা হয়েছিল বাসায়। মিছিল হয়েছিল শহরে, সব মিছিলের ঠিকানা ছিল আমাদের বাসা। তখন বুঝলাম, আকরাম চাচা বড় ক্রিকেটার।

নাফিস ভাইয়ার ক্রিকেটে উত্থানটা মূলত আব্বা মারা যাওয়ার পর থেকে। ভাইয়া জাতীয় দলে যখন এলেন, আমিও তখন বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে খেলতে শুরু করেছি। কাজেই বুঝতাম যে তিনি তারকা।

আমার অবশ্য তারকা হওয়ার শখ ছিল না। লোকে আমার সঙ্গে ছবি তুলবে, অটোগ্রাফ নেবে, আমার কথা বলবে, এসব কখনও মাথায় আসেনি। ক্রিকেট খেলতে আমি ভালোবাসতাম, খেলে মজা পেতাম। সেই আনন্দের জন্যই খেলতাম।

ভাইয়া যখন জাতীয় দলে এলেন, ওই সময়টায় আমি অবশ্য একটু ট্র্যাক হারিয়ে ফেলেছিলাম। এমন নয় যে নেশা বা বাজে কোনো অভ্যাস ছিল। সেসব আমার কখনোই ছিল না। তবে উঠতি বয়সে বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে আড্ডা, ঘুরে বেড়ানো, রাতে গাড়িতে ঘোরা, এসব একটু বেশি হয়ে গিয়েছিল। ক্রিকেটের চেয়ে এসব বেশি হচ্ছিল, ফোকাসটা নড়ে গিয়েছিল আসলে।

নাফিস ভাইয়া সেটা খেয়াল করেছিলেন। একদিন তিনি আমাকে ডেকে অনেক কথা বললেন। আমারও হুঁশ ফিরল। নিজে উপলব্ধি করলাম, আরও সিরিয়াস হতে হবে। স্বপ্নের পথে ছুটতে হবে। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাইনি।

সেঞ্চুরির চেয়ে বড় যে বাউন্ডারি

আকরাম চাচা ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফি জয় করে দেশে ফেরার পর আমরা পুরো পরিবারের সবাই গিয়েছিলাম কাপ্তাইয়ে। চাচাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল। পুরো পরিবারের বিশাল বহর। তখন কাপ্তাইয়ের একটা দলের সঙ্গে আমাদের পরিবারের ক্রিকেট ম্যাচ হয়েছিল। আমাদের পরিবারের মানে, বাবা, চাচারা, মামারা, ভাইয়া, এমনকি ছোট্ট আমাকেও নেওয়া হয়েছিল। ক্রিকেট বলে ছিল খেলা।

৯ বছর বয়স তখন মনে হয় আমার। একদম শেষ দিকে নেমেছিলাম ব্যাটিংয়ে। বড়দের সঙ্গে খেলেও দুটি চার মেরেছিলাম। ওই দুটি চার এখনও আমার কাছে যে কোনো বাউন্ডারির চেয়ে বেশি আনন্দের।

৯-১০ বছর বয়সের আরেকটা স্মৃতি আমার খুব মনে পড়ে। চট্টগ্রামে একটা টুর্নামেন্ট খেলেছিলাম, বিজয় দিবস ক্রিকেট। অনূর্ধ্ব-১৬ বছর বয়সীদের জন্য, আমি ওই বয়সেই খেলেছিলাম। জেনুইন ক্রিকেট বলে আমার প্রথম টুর্নামেন্ট ছিল সেটি। ওই টুর্নামেন্টের জন্য আমাকে তৈরি করেছিলেন আমার আরেক চাচা আকবর খান। আমার প্রথম কোচ বলা যায় তাকেই।

নাসিরাবাদ বয়েজ স্কুলে ছিল টুর্নামেন্ট। চট্টগ্রামের যত ক্রিকেটার জাতীয় পর্যায়ে এসেছে, সবাই অবশ্যই ওই টুর্নামেন্টে কখনও না কখনও খেলেছেনই। আমি শতদল ক্লাবে খেলতাম তখন। প্র্যাকটিস করতাম। বিজয় দিবস ক্রিকেটে প্রথম ম্যাচ যেটি, সেটিতে আমি দ্বিতীয় বলে আউট হয়ে যাই শূন্য রান করে। তখনও সমস্যা ছিল না। কিন্তু একটু পর দেখি, বাসার সবাই দুই-তিনটি গাড়িতে করে মাঠে এসেছেন আমার খেলা দেখতে। আমি তো আগেই আউট! খুব লজ্জা লাগছিল তখন।

নক আউট টুর্নামেন্ট ছিল। এক ম্যাচেই শেষ, কারণ আমরা হেরে যাই। পরের বছর ওই টুর্নামেন্টে যখন খেললাম, তখন ৪৫ রান করেছিলাম। ওইটা ম্যাচটা আমার কাছে দারুণ স্মরণীয় হয়ে আছে, কারণ আব্বা কিছুটা হলেও দেখতে পেরেছিলেন আমার খেলা।

আব্বার স্বপ্ন ছিল, আমি জাতীয় দলে খেলব। আমরা দুই ভাই একসঙ্গে খেলব। তিনি তা দেখে যেতে পারেননি। তবে একটু হলেও আমার খেলা দেখতে পেরেছিলেন, এটাই সান্ত্বনা।

খুদে ভক্তদের ভালোবাসা

শিশু-কিশোর ভক্তের দেখা অনেক পেয়েছি। ওরা হয়তো খেলার খুঁটিনাটি অত বোঝে না বা জানে না, কিন্তু হৃদয় দিয়ে ভালোবাসে। আমিও সবময় চেষ্টা করি ওদের ভালোবাসার প্রতিদান দিতে।

এমনিতে আমি সবসময় চেষ্টা করি ভক্তদের আব্দার মেটাতে, ছবি তোলা বা কথা বলা কিংবা অন্য নানা কিছু। কখনও কখনও আবার হয়তো মন-মেজাজ খুব ভালো থাকে না নানা কারণে কিংবা ব্যস্ততা থাকে, তখন হয়তো বলি যে, ‘এখন নয়, পরে।’ তবে শিশু-কিশোররা কিছু বললে আমি কখনোই না করি না, সেটা আমি যে অবস্থায় যেভাবেই থাকি না কেন।

আমার ছোটবেলার একটা ঘটনা মনে আছে। আমি দেশের একজন খ্যাতিমান ক্রিকেটারের অনেক বড় ভক্ত ছিলাম। ছোটবেলায় একবার নাফিস ভাইয়ার সঙ্গে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে গিয়েছি ঘুরতে, দেখি ওই ক্রিকেটার মাঠে। জিন্স আর শার্ট পরা, এমনিতেই ব্যাট নিয়ে টুকটাক নক করছিলেন। আমি তো খুবই রোমাঞ্চিত। কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আপনি কি অমুক?’ তিনি বললেন, স্বীকার না করে ইচ্ছে করেই অন্য নাম বললেন!

উনার ব্যবহারে আমি খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। এতটাই কষ্ট যে এখনও মনে আছে! শিশু-কিশোরদের মন এরকমই। ওই ঘটনা আমার হৃদয়ে সবসময় গেঁথে থাকে। আমি সবসময় চেষ্টা করি আমার ব্যবহার বা কথায় যেন শিশু-কিশোররা কখনও দুঃখ না পায়।

খেলার আনন্দে খেলে যাও

যারা ক্রিকেটার হতে চাও, তাদের প্রতি আমার প্রথম পরামর্শ, খেলার আনন্দ যেন কখনও হারিয়ে না যায়। বড় ক্রিকেটার হতে হবে, জাতীয় দলে খেলতে হবে, এই ভাবনা যেন না থাকে। হ্যাঁ, একটা লক্ষ্য তো থাকবেই। স্বপ্ন থাকবে। মনের কোণে আশা থাকবে। তবে ওই ভাবনায় বুঁদ থাকা যাবে না। তাহলে খেলার আনন্দটা হারিয়ে যাবে, চাপ বেশি থাকবে। ছেলেবেলায় খেলতে হবে স্রেফ মজার জন্য।

সবকিছুর আগে অবশ্য জরুরি, খেলাটার প্রতি ভালোবাসা। তীব্র ভালোবাসা না থাকলে এই জগতে টেকা যাবে না।

বড় শহরগুলোতে এখন মাঠের অভাব প্রকট। এখানে কিছু করার নেই। তবে এখন অনেক ক্রিকেট একাডেমি আছে। ভালো একাডেমি দিয়েই শুরু করতে হবে। খেলাটার প্রাতিষ্ঠানিক ভিত বা মৌলিক ভিত শক্ত থাকাটা জরুরি। এরপর তো বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে এগিয়ে যাওয়ার পালা। অনূর্ধ্ব-১৩, অনূর্ধ্ব-১৪, অনূর্ধ্ব-১৬, এরকম নানা ধাপ আছে।

বিকেএসপিতে সুযোগ পেলে, তার ক্রিকেট শিক্ষাটা খুব ভালোভাবে হবে, এটুকু অন্তত বলা যায়। তবে সেখানে সুযোগ না পেলেই যে সব সম্ভাবনা শেষ, এমনটা নয় মোটেও। বিকেএসপিতে কজনই বা সুযোগ পায়! আমি নিজেই বিকেএসপির বাইরের। কেউ যদি প্রতিভাবান হয় এবং ভালো করতে থাকে, তাহলে তাকে কেউ আটকাতে পারবে না। একবার বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের মূল স্রোতে ঢুকতে পারলে, আর চিন্তার কিছু নেই। কেউ যোগ্য হলে, পরিশ্রম করলে, উন্নতি করলে কেউ তাকে আটকাতে পারবে না।

অনেকে বলতে পারেন, আমার পরিবারের কারণে আমি এগোতে পেরেছি। কেউ এরকম ভাবলে আমার কিছু করার নেই। তবে একদম ছোট থেকে বয়সভিত্তিক প্রতিটি ধাপ পেরিয়ে, পারফর্ম করে তবেই আমাকে এগোতে হয়েছে। আমি যদি ভালো না হতাম, কারও সুপারিশেই যদি কাজ হতো, তাহলে কোনো না কোনো পর্যায়ে ঠিকই আটকে যেতাম। পারফর্ম না করলে একটা পর্যায়ের পর থমকে যেতে হতোই। ভালো করেছি বলেই সামনে যেতে পেরেছি। সবার জন্য পথ একইরকম।

আরেকটা কথা বলার আছে বাবা-মায়েদের প্রতি। আপনার সন্তানকে জোর করে ক্রিকেটে দেবেন না। আমাদের সময় অনেক বাবা-মা ছেলেকে ক্রিকেটে দিতে চাইতেন না। তখন ক্যারিয়ার ছিল না, জীবন অনিশ্চিত ছিল। আমি ক্রীড়া পরিবারের বলে সমস্যা হয়নি, কিন্তু অনেকেরই পরিবার থেকে বাধা আসত। এখন বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পরিবারই চায় সন্তানকে ক্রিকেটে দিতে। বাবা-মায়েরা স্কুলে নিয়ে যাওয়ার মতো করেই শিশু-কিশোরদের ক্রিকেট কোচিংয়ে বা একাডেমিতে নিয়ে যান। এটা দারুণ ব্যাপার। তবে শিশু-কিশোরদের চাপ দেওয়া হচ্ছে অনেক সময়, এটা হলো নেতিবাচক দিক।

অনেকে শিশু-কিশোরকে জোর করে ক্রিকেটে দেওয়া হচ্ছে। অনেক সময়, তাদের চাপে রাখা হচ্ছে উন্নতি করতে, তাতে তাদের খেলার আনন্দটা হারিয়ে যাচ্ছে। অভিভাবকদের বুঝতে হবে, কেউ শচিন টেন্ডুলকার হয়ে জন্মায় না। বিরাট কোহলি বা সাকিব আল হাসান রাতারাতি হয়ে ওঠা যায় না। একটু একটু করে এগোতে হবে। এটা সাধনার ব্যাপার। ওই শিশু-কিশোরদের যেমন সেই সাধনা করতে হবে, অভিভাবকদেরও ধৈর্য রাখতে হবে এবং সন্তানকে বিকশিত হওয়ার পরিবেশ গড়ে দিতে হবে।

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন: ক্রীড়া সম্পাদক, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

কিডজ পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!