দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের একটি স্কুল নিয়ে এ বইয়ের কাহিনি। লেখিকা তেৎসুকো কুরোয়ানাগির স্মৃতিকথা হিসেবে এটি প্রকাশিত হয় ১৯৮১ সালে। এতে তিনি তার শৈশবের স্কুলজীবনের অভিজ্ঞতা লিখেছেন।
বইটি প্রকাশের পরপরই জাপানে সাড়া ফেলে, বেস্টসেলার তালিকায় চলে আসে নাম। অনেক ভাষায় বইটা ইতোমধ্যে অনূদিত হয়েছে। বাংলায় মৌসুমি ভৌমিক ও চৈতী রহমান আলাদাভাবে বইটি অনুবাদ করেছেন। মূল জাপানিজ থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন ডরোথি ব্রিটন।
তেৎসুকো কুরোয়ানাগির স্কুলটির নাম অনেক মজার, ‘তোমোয়ে গাকুয়েন বিদ্যালয়’। এটি টোকিওর দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে ১৯৩৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু ১৯৪৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বোমা হামলায় ধ্বংস হয়ে যায়। স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান শিক্ষক ছিলেন সোশাকু কোবাইয়াশি। তার স্কুলঘরটি ছিলো আসলে রেলগাড়ির কামরা।
তোত্তোচান ছোট্ট একটি মেয়ে। সে অন্য শিশুদের থেকে আলাদা আর খুব চঞ্চল। তার মা তাকে খুব ভালোবাসেন যদিও সে মোটেও অন্যদের মতো নয়। তোত্তোচান অনেক কথা বলে, অনেক প্রশ্ন তার, সারাক্ষণ এটা-ওটা জানতে চায়।
তোত্তোচান পড়ে ক্লাস ওয়ানে। শিক্ষক যখন ক্লাসে পড়ায় সে তখন নিজের ধ্যানে খেলতে থাকে, বই-খাতা ফেলে জালালার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, খাতায় ছবি না এঁকে টেবিলে ছবি আঁকে, পাখিদের সঙ্গে গল্প করে, বাদক দলের কাছে গান শুনতে চায়।
কিন্তু এ নিয়ে তোত্তোর কোনো মাথাব্যথা নেই। সে থাকে তার খেয়ালে, বড় হয়ে নানাকিছু হতে চায় সে। বড় হয়ে একবার টিকেট চেকার হতে চায়, আবার কখনো চায় গুপ্তচর, কখনো হতে চায় বাদকদলের সদস্য। অবশেষে একটি স্কুল পাওয়া যায় যারা তোত্তোকে ভর্তি করাতে রাজি হয়।
স্কুলের ক্লাসরুমগুলো ছিল রেলগাড়ির কামরা। এটির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান শিক্ষক হলেন অসাধারণ এক ব্যক্তি। তার নাম সোশাকু কোবাইয়াশি। ‘আমি এ স্কুলটিকে ভালবাসি’, তোত্তো ও তার মা যখন সোশাকুর সঙ্গে স্কুলে সাক্ষাত্কার দিতে এসেছিল তখন তিনি একথা বলেছিলেন।
প্রধান শিক্ষক সোশাকু এ স্কুলের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তিনি তার বাচ্চাদের শিক্ষাদানের জন্য অনেক কিছু করেন। পড়ানোর জন্য অন্য স্কুল থেকে তার আলাদা পদ্ধতি রয়েছে। তিনি শিশুদের বাইরে প্রকৃতির ছোঁয়ায় খেলতে দেন। তিনি চান যে বাচ্চারা তাদের নিজ নিজ বৈশিষ্ট নিয়ে সাহসী হোক। অন্য শিশুদের মতো তাদেরও ভবিষ্যত রয়েছে।
কোবাইয়াশির স্কুলে গৎবাঁধা কোনো বিষয় পড়ার বাধ্যবাধকতা ছিল না। ক্লাসে ‘সাগরের কিছু আর পাহাড় থেকে কিছু’ দিয়ে টিফিন দেওয়া হতো। শিক্ষার্থীদের পুরনো কাপড় পড়ে আসতে বলা হতো যেন তারা কাদা মেখে আর লাফালাফি করে খেলতে পারে।
খেলাধুলার প্রতিযোগিতায় পুরস্কার হিসেবে রাখা হয় বিভিন্ন শাক-সবজি যাতে শিশুরা বাড়িতে গিয়ে গর্ব করে বলতে পারে, ‘আমার নিজের রোজগার!’ আবার মাঠ থেকে কৃষককে এনে শিশুদের জমিচাষের কলাকৌশল শেখানো হয়। এতে করে শিশুরা নিজ হাতে বোনা বীজ থেকে চারা গজানোর আনন্দ পায়।
শিক্ষক কিংবা শিক্ষা কাঠামো-পদ্ধতির সঙ্গে জড়িত যে কারও এ বইটি পাঠ্য হওয়া উচিত এবং সব পিতামাতার কাছেও এটি সুপারিশ করা যায়। বাধ্যবাধকতা, রুটিন এবং রূঢ় শৃঙ্খলার পরিবর্তে স্কুলকে মজাদার, স্বাধীন ও ভালোবাসার সঙ্গে জড়িয়ে রাখতে এ বইটি সহায়ক, আমাদের চিন্তার নতুন একটি স্রোত তৈরি করবে এ বইয়ের কাহিনি।
কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না! |