মামা ভাগ্নের দুঃসাহসিক অভিযান

বই: আমার সাইন্টিস মামা, লেখক: মুহম্মদ জাফর ইকবাল, ধরণ: কিশোর উপন্যাস, প্রকাশক: জ্ঞানকোষ প্রকাশনী, প্রথম প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২০২০, মূল্য: ২৮০ টাকা

মো. ইয়াকুব আলীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Oct 2020, 08:27 AM
Updated : 30 Oct 2020, 08:37 AM

টোপনের মামা একজন বৈজ্ঞানিক, কিন্তু কারো সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে গেলে বৈজ্ঞানিক শব্দটা অনেক গুরুগম্ভীর হয়ে যায় বলে বলা হয় সায়েন্টিস্ট, যেটাকে সহজ করে উচ্চারণ করলে দাঁড়ায় ‘সাইন্টিস’।

তবে সাধারণ সাইন্টিসের সঙ্গে মামার তফাৎ হলো তিনি বয়সে তরুণ। মেজাজও সাধারণ সাইন্টিসের মতো গম্ভীর না, বরং সবাইকে নিয়ে হাসিখুশি থাকতে পছন্দ করেন। শুধু সাধারণ সাইন্টিসের মতো কোন একটা বিষয়ে কথা বলতে শুরু করলে আর থামতে চান না। মামা মোটেও ল্যাবরেটরির অন্ধকার ঘরে সারাদিন যন্ত্রপাতি নিয়ে বসে থাকেন না।

সম্প্রতি একটা প্রজেক্ট থেকে বেশকিছু টাকা পেয়ে মামা একটা নতুন মাইক্রোবাস কিনেছেন। তারপর সেই মাইক্রোবাসের শুধু সামনের দুটো সিট রেখে পিছনের সব সিট ফেলে দিয়ে সেখানে রাজ্যের যন্ত্রপাতি বসিয়ে সেটাকে মিনি ল্যাবরেটরি বানিয়ে ফেলেছেন। তার মধ্যে বসিয়েছেন একটা মাইক্রোওয়েভ, একটা ছোট টয়লেট আর আছে একটা ফোল্ডিং বিছানা। এই মাইক্রোবাসটা নিয়ে মামা সারা দেশ চষে বেড়িয়ে কিসের যেন গবেষণা করে বেড়ান।

মামা একবার বাইরে যাওয়ার সময় টোপন মামাকে বলে তাকে তার সহকারী হিসেবে নিয়ে যাওয়ার জন্য। মামা শুরুতে রাজি না হলেও শেষ পর্যন্ত রাজি হয়ে যান। আর পরীক্ষা শেষ হয়ে যাওয়াতে টোপনও তার বাবা-মাকে সহজে রাজি করিয়ে ফেলে। এরপর শুরু হয় মামা-ভাগ্নের বিজ্ঞান গবেষণার পথে রোমাঞ্চকর যাত্রা।

এ যাত্রাপথে বাংলাদেশের রাস্তাঘাটের চিরপরিচিত রূপটি উঠে এসেছে। রাস্তায় গাড়ি দুর্ঘটনা খুবই মামুলি ব্যাপার। আর সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে কেউই দুর্ঘটনায় পড়া মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসে না, পুলিশি ঝামেলা এড়ানোর জন্য। টোপন ও তার মামা রাস্তায় দুর্ঘটনায় পড়া এক দম্পতিকে সাহায্য করেন যারা পরবর্তিতে টোপনদের চরম বিপদের মুহূর্তে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন।

টোপনের সাইন্টিস মামা একটা জঙ্গলে গিয়ে অবস্থান করেন এবং সেখান থেকে তার গবেষণার স্যাম্পল সংগ্রহ করেন। টোপন তাকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে। সেখানে টোপনের সঙ্গে পরিচয় হয় গ্রামের ছেলে মাহবুবের যে নিউটনের সূত্রকে আপাতদৃষ্টিতে ভুল মনে করে আর অবসরে নদীতে নৌকা নিয়ে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে।

জঙ্গলের মাঝে দিয়ে বয়ে গেছে নদী। সেই নদীর অপর পারেই বিলাসবহুল হোটেল ‘মণিকাঞ্চন’। সেখানে সারাক্ষণ পাহারায় থাকে সশস্ত্র প্রহরী। সেই হোটেলেই বাবা-মায়ের সঙ্গে ছুটি কাটাতে এসেছে ডোরিন ও তার ভাই টনি। ঘটনাচক্রে তাদের সঙ্গেও পরিচয় হয় টোপন ও তার মামার। সেই হোটেলেই থাকেন বেশকজন বিদেশি ইঞ্জিনিয়ার, যারা বনের মধ্যে স্থাপন করতে চায় থ্রি স্টার সিমেন্ট কোম্পানি।

কিন্তু আসলেই কি তারা সিমেন্ট কোম্পানি স্থাপন করতে চায় নাকি এর পেছনে আছে অন্য কোন উদ্দেশ্য! টোপনরা কি জানতে পারে বিদেশিদের সেই আসল ইচ্ছে! আর জানতে পারলেই কি সেটা ঠেকিয়ে দিতে পারে! আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলো কি টোপন ও তার মামার সাহায্যে এগিয়ে আসে। টোপন একসময় আবিষ্কার করে তার মামার কাছে আছে একটা লাইসেন্স করা পিস্তল এবং আটটি গুলি ভরা একটা ম্যাগাজিন। শেষ মুহূর্তে কি মামাকে সেই পিস্তল ব্যবহার করতে হয়?

মুহম্মদ জাফর ইকবালের অন্যান্য কিশোর উপন্যাসের মতো এটা খুবই সুখপাঠ্য। স্থান ও ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা আছে, তাই যে কোন বয়সী পাঠক উপভোগ করবেন নিশ্চিত। অনেকদিন পর এ কিশোর উপন্যাসটা লেখকের প্রথম দিককার কিশোর উপন্যাস ‘রাজু ও আগুনালীর ভুত’ এর কথা মনে করিয়ে দেবে আপনাকে।

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!