লেদু মিয়া দেখতে লিকলিকে লম্বা, নাকটা বোঁচা। তিনি গ্রামের চেয়ারম্যান বা মেম্বার কিছু নন। তবু এলাকাজুড়ে তার পরিচিতি, ঘরে-বাইরে তাকে নিয়ে আলোচনা। তার কথা বললেই লোকে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খায়। তার এতো পরিচিতি শুধু একটা কারণে। সে গাছে চড়তে পাকা। গাছে চড়তে তার জুড়ি মেলা ভার।
লেদু মিয়া খুবই দক্ষতার সঙ্গে গাছে চড়ে মানুষের আম, জাম, নারকেল, সুপারি পেড়ে দেয়। আমাদের গ্রামে বোধহয় এমন কোনো গাছ নেই যেখানে ওর পায়ের ছোঁয়া লাগেনি। সবার যখন গাছ থেকে কোনো কিছু পাড়ার দরকার পড়ে তখনি ডাক পড়ে লেদু মিয়ার।
লেদু মিয়াও নিমিষে হাজির হয় সেই ডাক শুনে। গুরগুর করে তার লম্বা লম্বা পায়ে কারিকুরি করে উঠে যায় ইয়া বড় বড় গাছে। যা দেখে সত্যি আমরাও অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি। মনে মনে ভাবি তার কি কোনো ডর ভয় নেই!
আমাদের গ্রামে একটা জাম বাগান আছে। গ্রীষ্মকাল এলে বাগানটির আশপাশে দস্যি ছেলেদের আনাগোনা বেড়ে যায় জামের লোভে। গ্রীষ্মের কোনো এক মাঝদুপুরে আমরা সবাই মানে দস্যি ছেলেদের দল দুপুরবেলা মা-বাবার চোখ ফাঁকি দিয়ে জামগাছের নিচে ঘুরঘুর করছি। কোনো এক ফাঁকে দেখি লেদু মিয়া বাগানের সবচেয়ে বড় জাম গাছটিতে উঠে জাম পাড়ছে।
সচরাচর ওই গাছটিতে কেউ উঠার সাহস দেখায় না। কেউ উঠে না বলেই হয়তো গাছটিতে পাকা জামের পরিমাণ একটু বেশিই থাকে। লেদু মিয়া জাম পাড়ছে আর আমরা চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে অনুনয় বিনয় করে তার কাছ থেকে জামের থোকা খুঁজছি।
লেদু মিয়া আমাদের কাচকলা দেখিয়ে জামগুলো তার লুঙ্গিতে ভরছেতো ভরছে। দুষ্টু ছেলেদের দল মহা ক্ষেপে গেল। ফন্দি আঁটতে লাগল তাকে কব্জা করার। মুহূর্তেই কেউ একজন বাগানের মালিককে ডেকে নিয়ে আসতে গেলো। লেদু মিয়া তা দেখে গাছের সেই উঁচু থেকে দিল লাফ!
সব নিস্তব্ধ। সবাই ভাবলো লেদু মিয়া মরেই গেছে। প্রচুর ভয়ে পেয়ে গেল সবাই। কিন্তু লেদু মিয়া সবাইকে অবাক করে দিয়ে মাটিতে পরার আগেই দুই পায়ে দাঁড়িয়ে গেল। শুধু দাঁড়িয়ে না, মালিকের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য লুঙ্গিভর্তি জাম নিয়ে দিল দৌড়।
সবাই বিস্ময়ভরা চোখে দেখছে আর হাসছে। আর অবাক হয়ে ঘটনাটি বলাবলি করছে। সেদিন এত উঁচু থেকে পড়ার পরও অলৌকিকভাবে লেদু মিয়ার কিছুই হয়নি। এমনকি এক ফোঁটা রক্তও পড়েনি। তাই বলে তোমরা আবার কোনো গাছে চড়ে বসো না। সাবধান।
লেখক পরিচিতি: শিক্ষার্থী, কক্সবাজার সরকারি কলেজ
কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না! |