গলির ক্রিকেটপাগল ছেলেগুলো কোথায় গেলো!

জন্মের পর থেকেই আমি ঢাকার বাসাবো এলাকায় থাকি। সেই এলাকার সবুজবাগ থানার গলির একটা বাসায় ছিলাম অনেকদিন। এরপর বাসা পরিবর্তন করা হলেও করোনাকালের আগে সেই গলিতে নিয়মিত যেতাম।

রাফসান নিঝুমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 July 2020, 09:01 AM
Updated : 1 July 2020, 09:01 AM

ওই এলাকা বা গলিতে বড় হওয়ায় সবাই কম বেশি আমাকে চিনতো। তবে বাসা পরিবর্তনের পরও সেই গলিতে যাওয়ার পেছনে অবশ্য একটা কারণ ছিলো। কারণ হচ্ছে, সেখানকার বাচ্চাগুলা।

ওই গলিতে অনেকগুলো ছোট বাচ্চা ছিলো। বয়স আর কতই বা হবে? ৫ থেকে ১২ কি ১৩! যারা ওয়ান থেকে সিক্স-সেভেন পর্যন্ত বিভিন্ন ক্লাসে পড়তো এমন ১২-১৫ জনের দল ছিলো।

প্রতিদিন বিকেলের দিকে ওই এলাকায় গেলে বা এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় ওদের সঙ্গে দেখা হতো। পুরো গলি ধরে ওদের রাজত্ব চলতো। ওরা সবাই দল করে সেখানে ক্রিকেট বা ফুটবল খেলতো।

আমি যখন এলাকায় আসতাম, তখন সবাই আমাকে সালাম দিতো। সবাই এসে একে একে আমার সঙ্গে হ্যান্ডশেক করতো। আমিও বেশ মজা পেতাম। ছোট ছোট এসব বিষয়গুলো আমাকে খুব আনন্দ দিতো। অন্যরকম এক অনুভূতি হতো। ওদের কাছে পেয়ে নিজেকে বাচ্চা বাচ্চা লাগতো।

ওরা যখন ক্রিকেট খেলতো তখন আমাকে ডাকতো। আমাকে বলতো, নিঝুম ভাই, তুমি আম্পায়ার দাঁড়াও। চিটিং করবা না কিন্তু!

আমিও খুশি মনে ওদের আবদার রাখতাম। হয়ে যেতাম আম্পায়ার। কখনো কখনো আমি আবার চিট করতাম। আর ওরাও আমার কাছে এসে প্রতিবাদ করতো। ভাই, আপনে চিটিং করতেছেন কেন? এইটা তো আউট হইছে!

আমি মাঝে মাঝে তাদের সঙ্গে দুষ্টুমি করতাম। বোলারকে বলতাম, এভাবে বল করেন, ওয়াউড দিয়েন না। আবার ব্যাটসম্যানকে বলতাম, ব্যাটসম্যান ভয় পাইছে, খেলা পারে না!

ওরাও বিচ্ছু, অনেক বড় লাইন আপ নিয়ে বল করতো। মনে হতো বাইশ গজের ক্রিকেট পিচও ওদের কাছে কিছু না। ছোট গলি পুরো মাতিয়ে রাখতো। যদিও মাঝে মাঝে বকাও খেতো। ছোট গলি হওয়ায় দেখা যেতো, বল কোন দোকানে চলে গেছে অথবা কারও শরীরে লেগেছে।

আর এই দল যখন ফুটবল খেলতো তা ছিলো আরও মজাদার। মনে হতো ফুটবলই ওদের থেকে অনেক বড়। ধাক্কাধাক্কি করে, দৌড়াদোড়ি করে ফুটবলে লাথি দিতো! আবার গোল হওয়া না হওয়া নিয়ে আমার কাছে এসে বিচার চাইতো।

গতকাল অনেকদিন পর সেই এলাকার গলিতে গিয়েছিলাম। সেই গলি এখন পুরোপুরি ফাঁকা। কোন পিচ্চি বাচ্চা নেই, ওদের খেলাধুলাও নেই। কেমন যেন এক শূন্যতা।

কোভিড-১৯ এর কারণে হয়তো ওরা সবাই এখন বাসায় বন্দি।  মহামারীর প্রকোপ কাটিয়ে উঠে হয়তো এই বাচ্চাগুলা আবারও এলাকা মাতিয়ে রাখবে। আবারও ওদের সঙ্গে দেখা হবে। ওদের খেলায় আম্পায়ার, রেফারি হবো। সেই দিনেরই প্রত্যাশায়।

লেখক পরিচিতি: হ্যালো ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের শিশু সাংবাদিক এবং নেপালের জনপ্রিয় টিভি শো ‘কুইজ ম্যানিয়া’য় বাংলাদেশের মিডিয়া ও কমিউনিকেশন কো-অর্ডিনেটর।

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!