হাত ধুয়ে বিজ্ঞান খেলি, পর্ব ৪

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বন্ধ হয়ে গেছে স্কুল। সময়টা এখন ঘরে থাকার। শিশুরা সবাই ঘরেই থাকো। কুড়ি সেকেন্ড ধরে সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নাও। এবার চলো, হাত ধুয়ে বিজ্ঞান খেলি। ঘরে থাকার সময়কে করি মজাদার।

শেখ আনোয়ারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 July 2020, 05:18 AM
Updated : 1 July 2020, 05:18 AM

মার্বেলের ম্যাজিক খেলা

দুটো একই মাপের কাচের বয়াম বা গ্লাস নাও। বয়াম বা গ্লাসের মধ্যে ছোট ছোট মার্বেল ফেলে বয়াম বা গ্লাসটা মার্বেল দিয়ে কানায় কানায় পরিপূর্ণ করো। অন্যদিকে অপর বয়ামের মধ্যে তুলনামূলক বড় মাপের মার্বেল ফেলে সেই বয়ামটাও কানায় কানায় পরিপূর্ণ করো।

এবার বলতে হবে কোন বয়াম বা গ্লাসে বেশি পরিমাণ ফাঁকা জায়গা বা খালি রয়েছে? কোনটাতে বেশি পানি ধরেবে? আসলে এমন কথার উত্তর বড় কঠিন। কারণ, শুধু চোখে দেখে অনুমান করে বলতে হবে। তুমি নিশ্চয় বলবে বড় মার্বেল দিয়ে পরিপূর্ণ গ্লাসটাতে বেশি পরিমাণ পানি রয়েছে। কারণ এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ফাঁকা জায়গা রয়েছে। কারণ আমাদের সবারই স্বভাবজাত ধারণা হচ্ছে, বড় মার্বেলে ভরা গ্লাসটার মধ্যে ফাঁকা অংশগুলো বড় বড় হয়ে থাকে। তাই সেখানকার জায়গার আয়তনও বেশি হয়ে থাকে। এটাই স্বাভাবিক। এবার এই খেলাটার মাধ্যমে পরীক্ষা করে দেখো তো, তোমার ধারণা আসলে কতটা সত্যি!

 

কেমন করে খেলতে হবে?

আগেই বলা হয়েছে, দুটো কাচের বয়াম বা গ্লাস নাও। তারপর গ্লাস দুটোতে মার্বেল দিয়ে ভরাও। এবার তোমার ইচ্ছে মতো যে কোন একটা মার্বেলের গ্লাসে পানি ঢেলে পরিপূর্ণ করো। এখন এক গ্লাসের পানি অন্য গ্লাসের মধ্যে সাবধানে ঢেলে দাও।

ব্যস। এবার লক্ষ্য করো এই খেলার আসল এবং মজার রহস্য। দেখা যাবে দুটো গ্লাসই সমান পরিমাণ পানি ধারণ করেছে। একটুও কম বা বেশি নয়। কিন্তু না। তোমার ধারণা ঠিক হলো না। প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে এমন কেন হয়?

এমন কেন হয়?

তোমরা এমনিতেই মনে করতে পারো, যে গ্লাসটার মধ্যে বড় বড় মার্বেল রয়েছে সেই গ্লাসের মার্বেলের মধ্যের ফাঁকা অংশটুকু বেশ বড় ও বেশি ফাঁকা থাকে, এটাই স্বাভাবিক। আর তাই সেই গ্লাসের মধ্যে ছোট ছোট অসংখ্য মার্বেল প্রতিস্থাপন করা সম্ভব। অন্যদিকে যে গ্লাসটার মধ্যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মার্বেল দিয়ে ভরা হয়েছে সেই গ্লাসের মধ্যে যে পরিমাণ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ফাঁকা জায়গা রয়েছে তার মধ্যে আরও অসংখ্য ক্ষুদে মার্বেল ভরা সম্ভব। কিন্তু এই ধারণা সঠিক নয়। এবার তা প্রমাণিত হলো।

আসলে তোমাদের মনে রাখতে হবে যে, দুটো গ্লাসের মধ্যে বড় মার্বেল বা ছোট মার্বেল যাই থাকুক না কেন গ্লাস দুটো সমান সাইজের হওয়ার কারণে ভেতরে ফাঁকা জায়গাও সমান হয়ে থাকে। তাই সমান সমান পরিমানেই পানি ধারণ করতে সক্ষম। আপাতত পানি কম বা বেশি পানি রয়েছে বলে মনে হলেও তা ঠিক নয়।

না ছুঁয়ে পানি কয়েন উঠাতে জানি

একটা পিরিচের মধ্যে কিছু পানি ঢালো। তারপর তার মধ্যে এক টাকার একটা ধাতব কয়েন ফেলে দাও। ব্যস। এবার হাত না ভিজিয়ে কিংবা গামলা থেকে পানি ঢেলে ফেলে না দিয়ে কীভাবে কয়েনটা পিরিচের পানি থেকে তোলা যাবে? কীভাবে কয়েনটা বের করা যাবে? কোন উপায় বলতে পারবে কি?

 

কাজটা একদম সহজ। এক টুকরো জ্বলন্ত কাগজ একটা কাচের স্বচ্ছ গ্লাসের মধ্যে রেখে গ্লাসটা উল্টিয়ে গামলার যেখানে কয়েন রাখা আছে সেখান থেকে একটু দূরে গ্লাস রাখো। দেখতে পাবে যে গ্লাসের ভেতর সুড়সুড় করে পানি ঢুকে যাচ্ছে। এক পর্যায়ে দেখতে পাবে সব পানিই গ্লাসে ঢুকে গেছে এবং কয়েনটা গামলার তলানিতে পড়ে রয়েছে।

এমন কেন হয়?

কাগজে রয়েছে কার্বন। মানে গ্লাসের ভেতরে কাগজের আগুন জ্বলার সময় তৈরি হয় কার্বন ডাই অক্সাইড এবং এর সঙ্গে মিশে থাকে অন্যান্য নানা পদার্থ। গ্লাসের ভেতরের বাতাস থেকে জ্বলন্ত কাগজ অক্সিজেন সংগ্রহ করে জ্বলে থাকে এবং সৃষ্টি করে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস। উল্টানো গ্লাসের ভেতরে এই গ্যাসের চাপ কমতে থাকে। কারণ আগুনের উত্তাপে গ্লাসের ভেতরের ঠান্ডা দেয়াল সংকোচনের কারণে ভেতরের বায়ুচাপও সংকোচিত হয়।

 

পরক্ষণেই আবার বাইরে থেকে প্রবল বায়ু চাপ পিরিচের পানিকে গ্লাসের ভেতরে ঠেলা দেয়। ক্ষেত্র বিশেষে এক পর্যায়ে পিরিচের সব পানি এভাবেই বায়ু চাপে গ্লাসে উঠে যায়। তখন পিরিচটি শুকিয়ে যায়। কয়েনটাও পানির সঙ্গে ঢুকে যায় গ্লাসে। কখনো আবার কয়েনটা পানিবিহীন শুকনো হয়ে বের হয়ে আসে। আর হ্যাঁ। খেলাটা খেলতে আগুনের ব্যবহারে সাবধান! এজন্য বড়দের কাউকে সঙ্গে রেখে, সহযোগিতা নিতে হবে।

লেখক পরিচিতি: শিশু-কিশোরদের মাঝে বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করার কাজে নিবেদিত শেখ আনোয়ার। শিশুদের জন্য বিজ্ঞান নিয়ে লেখালেখি করছেন প্রায় দেড় যুগ। পেয়েছেন অগ্রণী ব্যাংক-বাংলাদেশ শিশু অ্যাকাডেমি পুরস্কার, প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৬৪।

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!