পাতার চশমা

ইমা ছাদের উপর দাঁড়িয়ে শহর দেখছে। নিচে দুই-একটা রিকশা যাচ্ছে, দূরে বড় রাস্তার বড় বড় গাড়ি, পাশের রাস্তাতে কতগুলো দোকান, দূর আকাশে চিল আর কাকেদের উড়াউড়ি সবই সে দেখছে।

শারমীন আসাদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Nov 2019, 07:43 AM
Updated : 22 Nov 2019, 07:43 AM

প্রতিদিনই সে দেখে, তবে আজ একটু বিশেষভাবে দেখছে। এবার নানুমণি তার বাসায় আসতে তার জন্য দুটো মজার জিনিস বানিয়ে এনেছে। একটা পাতার ঘড়ি আর একটা পাতার চশমা। সেই পাতার চশমা পড়ে সে সবকিছুই একটু বিশেষভাবে দেখছে।

নানুমণির বাড়িতে অনেক গাছ আছে, নারকেল গাছ ও আছে। সেই গাছের পাতা দিয়েই বানানো এগুলো। আর ইমা নানুমণির বাড়িতে বেড়াতে গেলে তো ভীষণ ব্যস্ত সময় কাটায়। তার সবচেয়ে পছন্দের সময় হচ্ছে পড়ন্ত দুপুরবেলা। কিন্তু মামণি এসময়টাতে ছাদে আসতে না দিয়ে শুধু ঘুমাতে বলে। তবে নানুমণি থাকলে সেদিন সে এই সময়টা খেলতে পারে।

আজও নানুমণি তার সাথে ছাদে এসেছে। একটা মাদুর পেতে বসে নানুমণি কুশিকাটার কাজ করছে, সে কখনো অলস বসে থাকে না। ইমা হাতে পাতার ঘড়িটা পরেছে আর চোখে পাতার চশমা। ছাদের এ কোণা থেকে ও কোণা সবখানে ঘুরে ঘুরে সে সব কিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে, যেন পাতার চশমা পড়ে সে অনেকটা বড়দের মতো বিচক্ষণ হয়ে উঠেছে। মাঝে মাঝে ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে, যেন খুব তাড়ার মাঝে আছে সে, তার প্রতিটি সময়ের মূল্য অনেক।

এবার ছুটিতে নানু বাড়ি গেলেই পাতার চশমা আর ঘড়ি বানানো শিখবে সে। স্কুলে গেলে বন্ধুদের বানিয়ে দেখাবে সেগুলো, ভারি মজা হবে। সে নিচে তাকাতেই দেখল রিকশা যাচ্ছে, কতগুলো দুষ্টু ছেলের দল রিকশার পিছনে উঠার জন্য পেছন পেছন দৌড়ে যাচ্ছে। পাশের বাড়ির ছাদে তাকাতেই দেখল এক ঝাক ফড়িং উড়ছে, কারণ ও বাড়ির ছাদ বাগানে হরেক রকম ফুল ফুটেছে। সামনের বাসার বারান্দার জলছাদে কতগুলি কবুতর বসে কত না গল্পে মেতে আছে।

সব কিছুই সে খুঁটিয়ে দেখতে দেখতে ইমার মনে হলো এই শহর তার ভাল লাগে, তবে ব্যস্ততার শহর নয়, যখন পড়ন্ত দুপুরে ব্যস্ত শহর ঝিমিয়ে পড়ে তখন তার এই শহরকে ভাল লাগে, মায়াবী মনে হয়।

হঠাৎ ওদের উপরের ছাদের কার্ণিশে চোখ যেতেই দেখল একা এক দোয়েল পাখি বসে ডেকে চলেছে  আপন মনে, ওদিকে চুপিসারে এগোতেই পাখি ফুরুৎ করে উড়াল দিল।

রোদ নেমে গেছে, দক্ষিণের বাতাস বইতে শুরু করেছে। বাতাসে ইমার চোখ জড়িয়ে ঘুম ঘুম আসছে। ইমা নানুমণির কাছে গিয়ে তার কোলে মাথা দিয়ে মাদুরে শুয়ে আকাশ দেখতে থাকল। বর্ষার আকাশ, সারা আকাশে সাদা মেঘের ছড়াছড়ি, বাতাসে মেঘগুলো ক্ষণে ক্ষণে আকৃতি পাল্টায়। সে পাতার চশমার ফাঁক দিয়ে মেঘ দেখে। দূর আকাশে তাকিয়ে দেখল মেঘের মাঝে একটা ড্রাগন মুখে আগুন ছড়াচ্ছে। সে হাত দিয়ে নানুমণিকে তা দেখাল। নানুমণি তাকে দেখাল একটা নেকড়ের মাথা, ওরা এমন মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে যেন নেকড়ে আর ড্রাগনের মাঝে লড়াই চলছে, টিকে থাকার লড়াই।

হঠাৎ সে খেয়াল করল অনেক দূর আকাশ থেকে কতগুলো হাতির মতো মেঘ কুচকাওয়াজ করতে করতে ড্রাগনটার দিকে আসতেই যেন সে হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। হাতিগুলো আরও এগোচ্ছে, নেকড়ের দিকে এগিয়ে যেতে দেখল নেকড়েটাও উধাও। হাতিরা আরও এগিয়ে আসল, একদম ওদের ছাদের উপর চলে এল। দেখতে দেখতে হাতির বিশাল বাহিনী এক এক করে ওদের ছাদে নেমে এল। এবার ইমা ভয় পেয়ে গেল।

যদি হাতিগুলো এভাবে তার গায়ের উপর দিয়ে উঠে যায় সে তো মারা পড়বে! সে উঠে পড়ার খুব চেষ্টা চালাচ্ছিল, কিন্তু পারছিল না। চিৎকার করে নানুমণিকে ডাক দেয়ার চেষ্টা করল। কিন্তু গলা দিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছে না, এদিকে হাতিদের এগিয়ে আসার কুচকাওয়াজের শব্দ বেড়েই চলছে। ইমা হাত বাড়িয়ে নানুমণিকে ধরার চেষ্টা করল, কিন্তু এবার তার কান্না পেয়ে গেল। কারণ নানুমণিও তাকে ছেড়ে চলে গেছে! সে কাঁদতে কাঁদতে দেখল হাতিগুলো এগিয়ে আসছে তার দিকে। কিন্তু আশ্চর্য হলেও সত্যি কাছে আসতেই হাতিগুলো বুদবুদ হয়ে উড়ে যেতে লাগলো! 

ইমা এত এত বুদবুদ দেখে অবাক হয়ে গেল, এক সময় বুদবুদ হাত দিয়ে ধরার জন্য হাত বাড়াতেই বাবার ডাক শুনে তার ঘুম ভেঙে গেল। দেখল সে আসলে ছাদে নয় বাসায় তার বিছানায় শুয়ে আছে! ছাদে নানুমণির কোলে শুয়ে সে ঘুমিয়ে পড়তেই নানু তাকে বাসায় নিয়ে এসেছে কোলে করে, আর হাতিগুলোর কুচকাওয়াজ ছিল তার স্বপ্ন। এদিকে বাবা বাড়ি ফিরতে তার জন্য একটা বুদবুদ তৈরির খেলনা এনেছে সেটা বাবা তাকে দেখানোর জন্যই ঘুম থেকে ডাকছিলো। ইমা ঘুম থেকে উঠে খুঁজতে লাগলো তার পাতার চশমা আর ঘড়ি। 

নানুমণি সেগুলো তার হাতে দিতে গিয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘আচ্ছা, নানুমণি তুমি ঘুমের মাঝে কাদছিলে কেন?’

ইমা এক নিশ্বাসে তার অদ্ভুত স্বপ্নের কথা বলল।

শুনে নানুমণি হাসতে হাসতে বলল, ‘ভারি মজার স্বপ্ন তো!’

মা বললেন, ‘এই জন্যই তো বলি সময়মত ঘুমাও,  সন্ধ্যাবেলা ঘুমালে তো এমন স্বপ্ন দেখবেই’।

ইমা ব্যস্ত ভাবে তার পাতার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আমার নাস্তার সময় চলে যাচ্ছে, সবাই নাস্তা খেতে চল, পড়তে বসতে হবে তো!’

লেখক পরিচিতি : সহকারী অধ্যাপক, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ

এই লেখকের আরও লেখা

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!