রিনির রঙিন ছাতা

আজ মেঘলা দিন। বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। রিনি জানালার ধারে মন খারাপ করে বসে আছে। বৃষ্টির কারণে সে স্কুল যেতে পারে নি। সে গুণছে ২২,২৩,২৪...

শারমীন আসাদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Nov 2019, 08:47 AM
Updated : 11 Nov 2019, 10:02 AM

জানালার কার্ণিশ বেয়ে টুপটুপ করে বৃষ্টির পানি গড়িয়ে পড়া গুণছে। মা একটা জরুরি কাজে বাইরে গেছে। টমটম তার পোষা কুকুর, ঝিমুচ্ছে মাদুরে শুয়ে। দাদুমণি ঘুমোচ্ছে। বাবা তো রোজকার মতই সেই সক্কালে অফিসে চলে গেছে। সব মিলিয়ে মনটা খারাপ করে সে গুণছে ২৭,২৮...। সে গুণছে, মানুষও।

বৃষ্টিতে কেউ দৌড়ে যাচ্ছে, কেউ মাথায় রুমাল দিয়ে হনহন করে হেটে যাচ্ছে, কেউ রেইনকোট পড়েছে, আবার কেউবা ছাতা মাথায় ধীর পায়ে এগোচ্ছে।

ছাতা!!

তার বাবা এবার মেলায় তাকে একটা রঙিন ছাতা কিনে দিয়েছে। সেটা তো বেরই করা হয়নি। এক ছুটে আলমারি থেকে ছাতাটা বের করে নিয়ে বলল ‘চল টমটম, আমরা একটু ঘুরে আসি’।

টমটম লেজ নাড়তে নাড়তে রিনির পেছনে চলল। বাইরে এখন গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। রিনি আস্তে পা টিপে দরজা খুলল, সিড়ি দিয়ে নিচে নামল, সামনের উঠোন পেরুলো, মেইন গেট পেরুলো। এরপরই নামল একদম বড় রাস্তায়।

রিনি বড় রাস্তায় কখনই একা বের হয়নি। আজ তার বড় রাস্তা পেরিয়ে সামনের লেকের উপরে ছোট্ট ব্রিজ বেরিয়ে আসতে খুব ইচ্ছে হল। সে বড় রাস্তার দাঁড়িয়ে রইল। টুং টাং শব্দে রিকশা গেল, সাইকেল গেল, বিকট শব্দে ছোট্ট বাসও গেল। বাসের ঘরঘর শব্দে সে ভয় পেয়ে পিছিয়ে গেল।

টমটম তার কাপড় কামড়ে ধরল, ঘেউ ঘেউ শুরু করল। রিনি ওকে অভয় দিল, বলল ‘টমটম ভয় নেই, আমি তো আছি। আমরা ছোট্ট ব্রিজটা ঘুরেই বাড়ি ফিরব, মা ফেরার আগেই আর রাস্তা পার হওয়ার নিয়মটাও তো মা আমাকে শিখিয়ে দিয়েছেন।

সে লম্বা দম নিয়ে আরো বলল, ‘টমটম! মন দিয়ে শোন, রাস্তা পার হতে হলে চোখ-কান খোলা রাখতে হবে, যখন ডান দিক দিয়ে গাড়ি যাবে তখন প্রথমে ডানে, এরপর বামে, সবশেষে আবার ডানে তাকিয়ে রাস্তা ফাঁকা পেলেই পার হতে হবে’। এসব বলতে বলতেই যখন রাস্তা ফাঁকা হয়ে এলো তখন রিনি রাস্তা পার হতেই টমটম এক দৌড়ে ওপাড়ে চলে গেল।

রিনি ধমকের সুরে বলল ‘উহু, রাস্তা পার হতে দৌড়ান যাবে না, এরকমটি আর কখনো নয়’। টমটম মাথা নেড়ে সায় দেয় যেন খুব বুঝলো সব কথাগুলো, সে বাধ্য ছেলের মতো রিনির পিছুপিছু চলল।

ছাতা মাথায় বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে রিনির খুব আনন্দ হচ্ছিল। সে হাঁটতে হাঁটতে বড় রাস্তা পেরিয়ে ঠিক ব্রিজে পৌঁছে গেল। তার মনে হলো একদিনেই সে অনেকটা বড় হয়ে গেছে।

রিনি আর টমটম ব্রিজে দাঁড়িয়ে নিচের পানি দেখতে লাগল। টুপটুপ বৃষ্টি পড়ছে লেকের পানিতে। পানিতে যেখানেই বৃষ্টির ফোঁটা পড়ছে গোল গোল বৃত্ত তৈরি হচ্ছে। বৃত্তগুলো ছোট থেকে বড় হচ্ছে, আর সারা লেকে তা ছড়িয়ে পড়ছে। পুরো লেকে এক অদ্ভুত বৃত্ত বৃত্ত খেলা। ভারি মজার খেলা।

রিনির বাড়ি ফেরার কথা মনে হলো। সে ঘুরে দাঁড়াতে যাওয়ার আগেই দমকা এক বাতাসে ওর হাতের ছাতাটা পড়ে গেল লেকের পানিতে। রিনি ভয়ে আঁতকে উঠল। পানিতে পড়েই ছাতা বাতাসের তোড়ে ভেসে যেতে শুরু করল। রিনি বুঝে উঠতে পারল না সে কী করবে। তার খুব কান্না পাচ্ছে।

সে ব্রিজ থেকে নেমে লেকের ধারে চলে এলো, ছাতার পাশে পাশে হাঁটতে লাগল। রিনিকে লেকে নামতে দেখে টমটম ঘেউ ঘেউ শুরু করল, প্রথমে সে ব্রিজেই দাঁড়িয়ে রইল, রিনিকে বেশ কিছুদূর চলে যেতে সে একছুটে নেমে গেল। রিনি নিঃশব্দে কাঁদতে কাঁদতে ছাতার পিছু চলছে।

তা দেখে টমটম ঝাপিয়ে পানিতে নেমে ছাতাটা কামড়ে ধরে পাড়ে নিয়ে এলো, রিনি ছাতাটা ফিরে পেল আর সেইসঙ্গে টমটমকেও। আনন্দে সে টমটমকে জড়িয়ে ধরে আদর দিতে গিয়ে বলে উঠল ‘এ মা! টমটম! তুই তো একদম ভিজে গেছিস’।

রিনি আর টমটম বাড়ি ফিরে চলল। আর রিনি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল সে কখনই কাউকে না জানিয়ে এভাবে বাইরে বের হবে না।

লেখক পরিচিতি : সহকারী অধ্যাপক, ফার্মেসি বিভাগ, স্টেট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!