গেছো ভূতের ক্রিকেট খেলা

বই: ক্রিকেটপাগল গেছো ভূতের বাচ্চা, লেখক: নিশাত সুলতানা, প্রকাশনী: সময় প্রকাশন, প্রথম প্রকাশ: ২০১৯, পৃষ্ঠাসংখ্যা: ৪৬, মূল্য: ১০০ টাকা

সৈয়দ মনজুরুল ইসলামবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Nov 2019, 07:14 AM
Updated : 16 Nov 2019, 08:36 AM

নিশাত সুলতানা অনেকদিন থেকেই শিশু-কিশোরদের নিয়ে লিখছে। লিখতে লিখতে হাতটা এমন পাকিয়েছে যে, যে কোন বিষয় নিয়ে এখন তার লেখনি একটা চমৎকার কাহিনী তৈরি করে ফেলতে পারে।

নিশাতের এই প্রতিভাটি কিছুদিন হল আমার নজরে এসেছে বইমেলা ২০১৮ তে তার প্রকাশিত দু’একটি বই পড়ে। তার নতুন এক প্রকাশের সাথে পরিচয় হল গত বইমেলায় প্রকাশিত ’ক্রিকেটপাগল গেছো ভূতের বাচ্চা’ বইটি পড়ে।

কি সহজে সে ভূতদের টেনে নিয়ে গেল ক্রিকেটের স্টেডিয়ামে এবং আমাদের দেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর আনন্দের একটা জায়গায় নতুন কিছু আনন্দের সঞ্চার করল।

গল্পের কাহিনীটা সরল, যেরকম সরল হলে নিশাতের ক্ষুদে পাঠকেরা এর সঙ্গ ছাড়বে না। ‘ভুতু’ নামের এক বাচ্চা গেছো ভূতের শখ ক্রিকেট খেলার, কিন্তু ভূতের বাচ্চারা ক্রিকেট খেলে না। খেলতে না পেরে ভুতুর মন পড়ে থাকে ক্রিকেটের মাঠে আর ম্যাচে।

একদিন সে শুনল, ঢাকায় ক্রিকেট খেলা হবে আর সে খেলায় খেলবে গ্রামে বেড়াতে আসা শহরের ছেলে মন্টু। মন্টু ভাল খেলে, টি-টোয়েন্টিতে তার দল জেতার কথা। মন্টুর দাদু ঢাকা যাবে মন্টুর খেলা দেখতে। ভুতুর জেদ চাপল সে ঢাকা যাবে। মাকে অনেক চেষ্টায় রাজি করালো। মা চাননি, কিন্তু ভুতুর পীড়াপীড়িতে রাজি হলেন তাকে যেতে দিতে।

কিন্তু সঙ্গে একটা যাদুর আয়না দিলেন, যা ভূতেদের এন্ড্রোয়েড ফোনের মত, যাতে সে মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। ভুতু লাফিয়ে লাফিয়েই ঢাকা যেতে পারত, কিন্তু মন্টুর দাদুর সঙ্গে সে গেল বাসে। পথে নানান মজার ঘটনা ঘটল।

খেলার দিন ভুতুকে যখন শেষ বলে মন্টুকে জেতার জন্য চার মারতেই হবে, ভুতু তাকে সাহায্য করল। ভূতেদের যেহেতু দেখা যায় না, তাই এই কাণ্ড কেউ জানল না, মন্টুরা জিতে গেল। মাঠের উত্তেজনায় ভুতু অবশ্য জাদুর আয়নাটি হারিয়ে ফেলল। ফলে মন্টুর সঙ্গে বাড়ি ফিরে সে পড়ল মহাবিপদে।

এদিকে লুকিয়ে আইসক্রিম খেয়ে ভুতুর শরীর ভীষণ খারাপ। একসময় সে এমন হতাশ হয়ে পড়ল যে সে মন্টুর কাছে দৃশ্যমান হবার সিদ্ধান্ত নিল। মন্টু অবশ্য ভুতুকে দেখে ভয় পেল না; বরং একজন বন্ধুর মতই দেখতে শুরু করল। সে বুঝল ভুতুর জন্যই তার দল জিতেছে।

যাদুর আয়নার কথা উঠতেই মন্টু বলল, খেলার মাঠে সেটি পড়ে থাকতে দেখে সে তুলে নিয়ে এসেছে। ফলে ভুতুর সঙ্গে তার মায়ের যোগাযোগ হল। তিনি এসে ভুতুকে বাড়ি নিয়ে গেলেন।

মন্টুর সঙ্গে ভুতুর বন্ধুত্বটা স্থায়ী হল, ক্রিকেটের সঙ্গেও। নিশাত ভুতুকে ক্যাসপারের মত ’ফ্রেন্ডলি ঘোস্ট’ হিসেবে দেখিয়েছে। চমৎকারভাবে তার উপস্থাপনা করেছে। গল্পটা লিখেছে টানটান একটা উত্তেজনা বজায় রেখে, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের মতো।

আমার তো মনে হয় ’ক্রিকেটপাগল গেছো ভূতের বাচ্চা’ নিয়ে নিশাত একটা ছক্কা মেরেই বসল। আমি নিশ্চিত ক্ষুদে পাঠকেরা বইটা পড়ে হাততালি দেবে, আর ৪-৬ লেখা প্ল্যাকার্ড তুলে বলবে আরো ৬ চাই।

নিশাত সুলতানা যেন ব্যাট গুটিয়ে না রাখে, গ্লাভস তুলে না রাখে।

লেখক পরিচিতি: নিশাত সুলতানা পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে। কাজ করেন একটি উন্নয়ন সংস্থায়। তার লেখা আরও কিছু বই- ’নিপুর রঙিন একদিন’, ’পুটুর বদলে যাওয়া’ ও ’সবার বন্ধু পিকু’। শিশুসাহিত্যে অবদানের জন্য নিশাত সুলতানা পেয়েছেন ইউনিসেফ মীনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড ২০১৮ ও ২০১৯

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!