চার্লি ও চকলেট কারখানা

এগারো বছরের বালক চার্লি বাকেট। বাবা মিস্টার বাকেট ও মা মিসেস বাকেটকে নিয়ে সে থাকে এক জরাজীর্ণ ছোট্ট বাড়িতে। তারা ছিলো সত্যিই খুব গরিব।

মাজহার সরকারমাজহার সরকার
Published : 26 August 2018, 09:57 AM
Updated : 26 August 2018, 09:57 AM

সাত সদস্যের ওই পরিবারে আরও আছেন চার্লির দাদাভাই জো, দাদিমা জোসেফিন, নানাভাই জর্জ ও নানিমা জর্জিনা। ছোট্ট বাড়িটাতে ছিলো একটামাত্র শোবার ঘর আর একটামাত্র খাট, চারজন বয়স্ক সারাদিন ওই খাটে শুয়ে থাকতো। চার্লি ও তার বাবা-মা ঘুমাতো মেঝেতে।

 

মিস্টার বাকেট কাজ করেন এক কারখানায়, তার সামান্য রোজগার দিয়েই পুরো সংসারের খরচ চলে। কিন্তু তাতে কুলোয় না। তাই তারা প্রায়ই শুকনো রুটি আর সবজির স্যুপ খেয়ে বেঁচে থাকে। প্রায়দিনই সবাই ক্ষুধার্ত থাকে, কিন্তু এ নিয়ে বালক চার্লির মনে কোনো দুঃখ ছিলো না।

 

চার্লিদের বাড়ির কাছেই ছিলো বিখ্যাত এক চকলেট কারখানা, এর মালিক হলেন উইলি অঙ্কা। অনেকদিন বন্ধ থাকার পর সেটা আবার চালু হয়েছে, চার্লির স্কুলে যাবার পথেই পরে বিশাল ওই কারখানা। সেই কারখানা থেকে চকলেটের সুবাস ভেসে আসে সবসময়, নাকে লাগামাত্র জিহ্বায় জল আসে। টেলে নেওয়া কোকো বীজের গুঁড়োর সঙ্গে দুধ-চিনি মিশিয়ে তৈরি সুস্বাদু চকলেটের ঘ্রাণ দূর থেকে পাওয়া যায়।

 

চার্লি চকলেট খুব ভালোবাসে। কিন্তু কারখানার বিশাল লোহার গেটটা সবসময় বন্ধ থাকে। কাউকে ঢুকতে দেখা যায় না, কাউকে বের হতেও দেখা যায়ও না। চার্লির দাদাভাই জো ওই ফ্যাক্টরিতেই একসময় কাজ করতেন।

 

অনেকদিন আগে উইলি অঙ্কার গোপন রেসিপি চুরি করে কিছু কর্মচারী তা বাইরে পাচার করে দেয়। ফলে চকলেট কারখানা বন্ধ হয়ে যায়, অন্যান্য কর্মীর সঙ্গে চার্লির দাদাভাইয়ের চাকরিও চলে যায়। এ গল্প চার্লি তার দাদাভাই জো এর কাছে শুনেছে।

 

কারখানা আবার চালু হওয়ার পর উইলি অঙ্কা একদিন ঘোষণা দেন যে, তার কারখানায় তৈরি অঙ্কা ক্যান্ডি বারের মধ্যে পাঁচটি সোনার টিকিট রয়েছে। পৃথিবীর যে কোনো দেশে যে পাঁচজন শিশু ওই পাঁচটি টিকিট পাবে, তাদের তিনি তার চকলেট কারখানা ঘুরে দেখার সুযোগ দেবেন, জানাবেন মজাদার চকোলেটের গোপন রেসিপি। এমনকি নৌকায় করে তাদের ঘুরানো হবে চকলেটের নদীতেও। আর সঙ্গে থাকবে দারুণ সব পুরস্কার ও রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যাওয়ার সুযোগ।

 

এভাবে পৃথিবীর চার দেশের চার শিশু চারটি সোনার টিকিট পেয়ে যায়, খবরগুলো বেশ ফলাও করে টেলিভিশনে প্রচার ও খবরের কাগজের পাতায় ছাপা হয়। চারজন বিজয়ী শিশু হলো জার্মান অতিলোভী বালক অগাস্টাস গ্লুপ, যুক্তরাজ্যের বজ্জাত মেয়ে ভেরুকা সল্ট, চুইংগাম খাওয়া মাইক টেভি এবং টেলিভিশন ও ভিডিও গেমস আসক্ত ভায়োলেট বেউইরগার্ড। ওই চার শিশুর প্রত্যেকেই অনেক ধনী পরিবারের সন্তান, ওই সোনার টিকিট পেতে তারা প্রচুর টাকা খরচ করে অনেক অঙ্কা চকলেট কিনেছে। এখন কেবল একজন বাকি, শেষ টিকিটটা কে পাবে তা নিয়েই সবার জল্পনা-কল্পনা।

 

দরিদ্র চার্লিরও খুব ইচ্ছে সে-ও একটি সোনার টিকিট পাবে। টিকেট পেতে তাকে অনেকগুলো চকোলেট কিনতে হবে, বারবার চেষ্টা করে দেখতে হবে। কিন্তু তার পরিবার এতো গরীব যে বছরে মাত্র একবারই জন্মদিনে সে অঙ্কা চকলেট খেতো। তারপরও তার বাবা-মা তাকে একটি অঙ্কা চকলেট কিনে দেন। কিন্তু চার্লি তার ভেতর সোনার টিকিট খুঁজে পায় না। এভাবে আরও আরও চকলেট কিনেও স্বপ্ন ভাঙে চার্লির।

হঠাৎ একদিন রাস্তায় বরফের চাঁইয়ের মধ্যে পনেরো পেনি কুড়িয়ে পায় চার্লি। সে পয়সা দিয়ে দোকান থেকে আরেকটি অঙ্কা ক্যান্ডি বার কিনে। প্যাকেট খুলেই তো চার্লি অবাক! নিজের চোখকে যেন বিশ্বাস করতে পারছে না সে। এই যে তার স্বপ্নের সোনার টিকিট! চার্লি তার নানাভাইকে কে নিয়ে অঙ্কার চকলেট কারখানা ঘুরতে বের হয়।

 

সেখানে তার অন্য চার কিশোর-কিশোরীর সঙ্গে দেখা হয়, তারা তাদের মা-বাবার সঙ্গে এসেছে। সেখানে তারা দেখা পায় ওম্পা-লোম্পাস লোকেদের সঙ্গে। ওম্পা-লোম্পাস হলো এক ধরনের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী যাদের দেশ হলো লোম্পাল্যান্ড। এই লোকেরা উইলি অঙ্কার কারখানায় কাজ করেন।

 

একে একে চার প্রতিযোগীই প্রতিযোগিতা থেকে বাদ পড়ে, টিকে থাকে শুধু চার্লি। চার্লিকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। কারখানার মালিক উইলি অঙ্কাকে তার হারানো পরিবার ও তার বাবাবে খুঁজে পেতে সাহায্য করে চার্লি। উইলির বাবা ছিলেন একজন খ্যাতনামা ডেন্টিস্ট, তিনি উইলিকে চকোলেট খেতে দিতেন না। কিন্তু উইলির খুব প্রিয় ছিলো চকোলেট, বাবার ওপর রাগ করে সে স্বপ্ন দেখে একটি চকোলেট কারখানা প্রতিষ্ঠা করার।

অনেক অনেক বছর পর বাবাকে খুঁজে পেয়ে উইলি দেখতে পায় বাবা তার বিশাল চকলেট কারখানা গড়ার সাফল্য ও চকোলেটের সুনাম নিয়ে ছাপানো খবর পত্রিকা কেটে সুন্দর করে সাজিয়ে রেখেছেন। উইলি ওঙ্কা ফিরে পায় তার বাবাকে। উইলি ওঙ্কা খুশি হয়ে চার্লিকে তার অঙ্কা চকলেট কারখানার উত্তরাধিকারী করে নেন।

বই: চার্লি অ্যান্ড দ্য চকলেট ফ্যাক্টরি, লেখক: রুয়াল দাল (১৯১৬-১৯৯০) যুক্তরাজ্য, অলঙ্করণ: জোসেফ শিন্ডেনম্যান, কুয়েন্টিন ব্লেইক, ধরণ: শিশু সাহিত্য- কাল্পনিক উপন্যাস, প্রকাশনি: আলফ্রেড অ্যা নফ, পেঙ্গুইন বুকস, প্রকাশকাল: ১৯৬৪

 

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!