আলেকজান্ডার ও তার ঘোড়া

চারশো বছর আগের কথা। গ্রীস তখন ছোট ছোট অসংখ্য রাষ্ট্রে বিভক্ত। এমন একটি রাষ্ট্রের নাম  মেসিডোনিয়া, তার অধিপতি ছিলেন বীর ও সাহসী যোদ্ধা ফিলিপ। তিনি গড়ে তুললেন সুদক্ষ সৈন্যবাহিনী।

সায়রা হুজাইফাবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 July 2018, 11:46 AM
Updated : 17 July 2018, 11:46 AM

সেই সেনাবাহিনীর জন্য দরকার অনেক চৌকস ঘোড়ার। রাজার সৈন্যদের জন্য নতুন ঘোড়ার প্রয়োজন, সেটাই বাছাই হচ্ছিল। তাই ঘোড়া ব্যবসায়ীরা তাদের সেরা সেরা ঘোড়া বেচার জন্য মেসিডোনিয়ায় আসতো। এমনই একটা ঘোড়া নিয়ে এলো এক ব্যবসায়ী। প্রকাণ্ড কালো চকচকে ঘোড়াটি পাগলের মতো লাথি মারছিল। পেছনের দুপায়ে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়াচ্ছিল আর ঝাপাঝাপি করছিল। ভয়ে কেউই কাছে ঘেষার সাহস পাচ্ছিল না।

ফিলিপের লোকজন ঘোড়াটিকে মাঠে নিয়ে যেতেই হিংস্র হয়ে উঠল। যতবারই লোকেরা তার পিঠের উপর চড়তে যায়, ততবারই সে লাফিয়ে সবাইকে দূরে পাঠিয়ে দেয়। এ দৃশ্যে স্বাভাবিকভাবেই মেসিডোনিয়ার রাজা ফিলিপ রেগে গেলেন, চিৎকার করে বললেন, ‘নিয়ে যাও ওকে, একটা পাগলা ঘোড়া। ওকে দিয়ে কাজ হবে না। নিয়ে যাও।’

কিন্তু ঘোড়াটি দেখতে চমৎকার। যেমন সুন্দর তেমনি তেজি। নাম বুসিফেলাস। কিন্তু এরকম বদমেজাজি ঘোড়া সেনাবাহিনীর কোনো কাজেই লাগবে না। রাজা ফিলিপ সবেমাত্র চলে যাবার জন্য ঘুরে দাঁড়িয়েছেন এমন সময় তার ছোট ছেলে আলেকজান্ডার হঠাৎ দৌড়ে সামনে এসে দাঁড়াল।

আলেকজান্ডার খেয়াল করলো ঘোড়াটি তার ছায়া দেখে ভয় পাচ্ছে। তাই ঘোড়ার পাশে গিয়ে আস্তে আস্তে তার মুখটা সূর্যের দিকে ঘুরিয়ে দিলো। সে ঘোড়াটির গলায় ধীরে ধীরে কয়েকবার হাত বুলাল এবং খুব নরম সুরে ঘোড়াটির সঙ্গে কথা বললো। কিশোর যুবরাজ আলেকজান্ডার এক ঝটকায় ঘোড়ার ফিঠে উঠে বসলো এবং তীব্র গতিতে বেরিয়ে গেলো।

ঘোড়ার পিঠে আলেকজান্ডারকে এমন সুন্দর মানিয়ে গেলো যে মনে হচ্ছিল তারা যেন একে অন্যের জন্যেই তৈরি হয়েছে। রাজা ফিলিপ আনন্দিত হয়ে ঘোড়াটি কিনে আলেকজান্ডারকে উপহার দিলেন। সেই থেকে বুসিফেলাস আলেকজান্ডারের সঙ্গী হয়ে গেলো। এই জুটি একত্রে অনেক যুদ্ধে অংশ নিয়েছে।

রাজা ফিলিপ মারা গেলে আলেকজান্ডার মেসিডোনিয়ার রাজা হলো এবং বিশার এক সাম্রাজ্য স্থাপনের উদ্দেশ্যে দিগ্বিজয়ে বেরিয়ে পড়লো। এই প্রিয় ঘোড়ায় চড়ে আলেকজান্ডার তার সৈন্যবাহিনীকে মিশর ও ভারত পর্যন্ত নেতৃত্ব দিয়েছেন।

বুসিফেলাস ভারতেই মারা যায় খ্রিষ্টপূর্ব ৩২৬ অব্দে। আলেকজান্ডার ঘোড়াটি সমাহিত করেন এবং প্রিয় ঘোড়াটির প্রতি সম্মান ও কৃতজ্ঞতা প্রদর্শন করে ‘বুসিফেলাস’ নামে একটি নগরীর নামকরণ করেন।

তথ্যসূত্র:

১. কিশোর আনন্দ, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র

২. হিস্ট্রিঅবমেসিডোনিয়া ডট ওআরজি