ঢাকার ইতিহাস

স্কুল থেকে ফেরার পথে গোলাকার একটা জিনিস কুঁড়িয়ে পেল নিশু। দেখতে অনেকটা পয়সার মতো। তাতে খোদাই করে ইংরেজিতে লেখা ‘ঢাক্কা এক তোলা’।

অনার্য মুর্শিদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 March 2018, 12:34 PM
Updated : 28 March 2018, 12:48 PM

অদ্ভুত তো! জিনিসটা কী? জানার জন্য নিশু চাচ্চুর কাছে গেল। চাচ্চু সারা দিনই বই পড়েন। অনেক কিছু জানেন। তিনি জিনিসটা নেড়েচেড়ে বললেন, এটা একটা পরিমাপক। একসময় সোনারূপা বা অল্প ওজনের জিনিসপত্র পরিমাপ করতে ব্যবহার হতো। এখন তো ডিজিটাল মেশিনে ওজন করা হয়। তবে কোথাও কোথাও এর ব্যবহার আছে।

বুঝলাম। কিন্তু এটার গায়ে ‘ঢাক্কা’ লেখা কেন?

এখন স্কুল থেকে এসেছ। হাত-মুখ ধোও, খাওয়া-দাওয়া করে বিশ্রাম নাও। স্কুলের পড়া শেষ করে রাতে আমরা ঢাক্কার গল্প করব।

সন্ধ্যাবেলায় পড়তে বসে নিশু অভিধান দেখল। ‘ঢাক্কা’ সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায় কিনা। নাহ্, তেমন কিছু নেই। শুধু লেখা আছে, ঢাকাকে একসময় ইংরেজিতে ‘ঢাক্কা’ লেখা হতো। কিন্তু এই ঢাক্কাটা এল কোত্থেকে, সেটাই জানতে হবে।

স্কুলের পড়া শেষ করে নিশু চাচ্চুর কাছে গেল। চাচ্চু তাকে কালহানের লেখা ‘রাজতরঙ্গিনী’ নামে একটা বই দিলেন। বইয়ে লেখা, ‘ঢাক্কা’ অর্থ পাহারাকেন্দ্র। ঢাকার পাশেই বিক্রমপুর ও সোনারগাঁও একসময় রাজাদের রাজধানী পাহারাকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হতো। সেই ‘ঢাক্কা’’ থেকেই এর নাম হয় ঢাকা।

ভ্রু কুঁচকে নিশু বলল, এইভাবে কি একটা জায়গার নাম হয়! চাচ্চু বললেন, ঠিক এইভাবে হয় কিনা জানি না। তবে এ প্রসঙ্গে আরেকটা গল্প চালু আছে। মোগল গভর্নর ছিলেন শেখ আলাউদ্দিন ইসলাম খান। তিনি একবার ভবিষ্যৎ রাজধানীর জায়গা খুঁজতে ১৬০৮ সালে ৫০ হাজার সঙ্গী নিয়ে বজরায় চড়ে বের হলেন।

বর্তমান ঢাকার কাছে এসে জায়গাটা তার পছন্দ হলো। সমস্ত নৌকা ধোলাই নদের তীরে নোঙরের নির্দেশ দিলেন। ভালোমতো ঘুরে দেখতে ইসলাম খান যে জায়গায় নামলেন, সেই জায়গার নাম হয়ে গেল ইসলামপুর। এখনও জায়গাটা ইসলামপুর নামেই পরিচিত। পুরান ঢাকার খুব গুরুত্বপূর্ণ এলাকা এটা।

নিশু একটু অধৈর্য হয়ে ওঠে, তা না হয় বুঝলাম! ইসলাম খানের নাম থেকে ইসলামপুর হয়েছে। কিন্তু ঢাকা নামটা কীভাবে হলো?

চাচ্চু বলেন, আহ্ হা, ঘটনা তো শেষ হয়ে যায়নি এখনো! বজরা থেকে নামার পর ইসলাম খান সনাতন ধর্মের একদল ঢাকিকে ঢাক বাজিয়ে পূজা করতে দেখলেন। হঠাৎই তার মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে যায়। তিনি সব ঢোলককে একসঙ্গে ডেকে পাঠালেন। একটা নির্দিষ্ট স্থানে তাদের দাঁড় করিয়ে বললেন, ‘বাজাও ঢাক! যত জোরে পারো...!’।

ওদিকে তার চারজন লোককে চার দিকে পাঠিয়ে দিলেন। প্রত্যেকের কাছে দেওয়া হলো একটা করে লাঠি আর পতাকা। তাদের বলে দেওয়া হলো, ঢাকের শব্দ যদ্দূর শোনা যাবে, সেখানেই পতাকাসহ লাঠিটা পুঁতে দিবে। পতাকাই হবে শহরের সীমানার নিশানা।

ঢাক বাজানো হলো। সীমানাও নির্ধারণ হলো। মূলত এই ঢাকঢোল থেকেই এসেছে ঢাক্কা, আর সেই থেকে এল ঢাকা।

মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনছিল নিশু। গল্পটা একটু প্যাঁচালো হলেও তার কাছে বেশ মজার মনে হলো। কিন্তু খটকা লাগল আরেক জায়গায়। বই পড়ে সে জেনেছে, ঢাকার আদি নাম জাহাঙ্গীরনগর। নিশু প্রশ্ন করল, চাচ্চু তাহলে জাহাঙ্গীরনগরকে কেন ঢাকার আদি নাম বলা হয়? চাচ্চু পড়লেন মুশকিলে। উত্তর দেবেন কী, এই প্রশ্নের জবাব তো তিনি নিজেই জানেন না! বললেন, আমাকে বোধ হয় বিষয়টা আরেকটু দেখতে হবে। কাল তোমার প্রশ্নের জবাব দেব।

পরের দিন। চাচ্চু চিন্তিত মুখে বললেন, একটা গণ্ডগোল হয়ে গেছে। গতকাল যে গল্পটা শুনিয়েছি, সেটা বোধ হয় ভুল। কারণ ইসলাম খান শহরের নামকরণ করেছিলেন জাহাঙ্গীরনগর। এই যাহ্, ভালো বিপদ! এখন তাহলে আমি কোনটা সত্যি ধরে নেব? নিশু বলল।

চাচ্চু এবার একটা নতুন তথ্য দিলেন, আরেকটা বইয়ে পেয়েছি, ঢাকা নামটা এসেছে ‘ঢাক’ নামের একটা গাছ থেকে। এই এলাকায় ঢাক গাছ প্রচুর পাওয়া যেত। ঢাক থেকেই হলো ঢাকা।

নিশু এবার বিজ্ঞের মতো বলল, হুম্। এটাও না হয় মানলাম। কিন্তু সত্য তো একটাই হয়। কোনটা আসল সত্য? চাচ্চু পড়ল মহাবিপদে। কোনটা আসল সত্য, তিনিও জানেন না। একটু ভেবে তিনি বললেন, সত্যটা বোধ হয় এখনো ওভাবে আবিষ্কৃত হয়নি। অনেকের অনেক ধরনের মত আছে।

হয়তো একদিন সত্যটা আবিষ্কার হয়ে যাবে। বিভিন্ন বই পড়ে, গবেষণা করে এই সত্যটা তুমিও আবিষ্কার করতে পারো!