এক আঙুলে দেশরক্ষা করেছিলো যে বালক

তানবীরা তালুকদারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Jan 2018, 12:40 PM
Updated : 12 Jan 2018, 12:41 PM

বই: হান্স ব্রিঙ্কার অর দ্যা সিলভার স্কেইটস, লেখক : মেরি মেপিজ ডজ, অলঙ্করণ : এফ. ও. সি. ডার্লে ও থমাস ন্যাস্ট, প্রকাশনি: জেমস ও’কেইন, প্রকাশকাল: ১৮৬৫

নেদারল্যান্ডসের ১৫ বছর বয়সী বালক হান্স ব্রিঙ্কার ও তার বোন গ্রিটেল ইয়ার্ন। তারা ডিসেম্বরে আইস স্কেটিং রেসে অংশ নিতে ইচ্ছুক।

তারা ছিলো গরীব, কাঠের তৈরি একটামাত্র স্কেইট বোর্ড ছিলো তাদের। কিন্তু দুই ভাই-বোন ছিলো অনেক পরিশ্রমী। প্রতিযোগিতার পুরস্কার ছিলো রূপার স্কেইট। সেটি পেতেই তারা স্বপ্ন দেখা শুরু করলো।

হ্যান্স ব্রিঙ্কার ও তার বোন গ্রিটেল ইয়ার্ন

হ্যান্সের বাবা হলেন র‍্যাফ ব্রিঙ্কার। তিনি ছিলেন অসুস্থ, বারবার স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলতেন। একটা দুর্ঘটনায় তার এমন হয়েছিলো আর তিনি হাঁটতেও পারতেন না। হ্যান্স, তার মা ও বোন সারাদিন কাজ করতো গরীব পরিবারের খরচ চালানোর জন্য।

হ্যান্স একদিন বিখ্যাত শৈল্যচিকিৎসক বোয়েকম্যানের দেখা পেয়ে গেলো আর তার বাবার চিকিৎসা করার অনুরোধ জানালো। কিন্তু বোয়েকম্যানের স্ত্রী মারা যাওয়া ও একমাত্র ছেলে নিখোঁজ হয়ে যাওয়ায় সেও ছিলো অনেক বিষণ্ণ। এছাড়া তার কাছে চিকিৎসা করাতে টাকাও লাগে অনেক বেশি।

শেষ পর্যন্ত অনেক কষ্টে হ্যান্স বোয়েকম্যানকে রাজি করালো তার বাবাকে পরীক্ষা করতে। বোয়েকম্যান হ্যান্সের বাবার মস্তিষ্কের চাপ মেপে জানালো এ রোগ ভালো হতে পারে। কিন্তু এ চিকিৎসায় অনেক টাকার প্রয়োজন এবং তা ঝুঁকিপূর্ণও।

বইটির একটি সংস্করণের প্রচ্ছদ

হ্যান্স ইস্পাতের স্কেইট কেনার জন্য কিছু টাকা জমিয়েছিলো। সে ওই টাকা চিকিৎসককে দিতে রাজি হলো। সে এখন শুধু একটা জিনিসই চায়, আর তা হলো তার বাবার সুস্থতা। বোয়েকম্যান হ্যান্সের কথা শুনে তার বাবার চিকিৎসা বিনামূল্যে করে দিতে রাজি হলো।

এবার জমানো টাকা দিয়ে হ্যান্স নিজের জন্য ও তার বোন গ্রিটেলের জন্য ইস্পাতের স্কেইট কিনলো। এবার তারা আইস স্কেটিং রেসে অংশ নিতে প্রস্তুত।

বালিকাদের দৌড়ে গ্রিটেল প্রথম হলো আর জিতে নিলো রূপার স্কেইট। কিন্তু বালকদের দৌড়ে হ্যান্স জেতার সুযোগ পেয়েও তা ছেড়ে দিলো।

কারণ স্কেটিং শুরু হওয়ার অনেকক্ষণ পর সে দেখতে পেলো নগররক্ষা বাঁধের একটি ছোট্ট ফুটো দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে। সে দৌড়ে সেখানে গিয়ে এক আঙুলে ফুটো চেপে ধরলো। ততক্ষণে অন্যান্য প্রতিযোগীরা তাকে ফেলে অনেক দূরে চলে গেছে।

নেদারল্যান্ডসের হারলিনজেনে হ্যান্স ব্রিঙ্কারের ভাস্কর্য

চারদিক ছিলো জনমানহীন। তুষারের কারণে ভালো দেখা যাচ্ছিলো না। প্রচণ্ড ঠাণ্ডার মধ্যে সারাদিন, দিন গিয়ে সারারাত হ্যান্স ফুটো ধরে রেখেছিলো যেন পানি এসে শহর তলিয়ে না দেয়।

পরদিন শহরের বয়স্ক লোকেরা এসে হ্যান্সকে দেখতে পেলো ও বাঁধের ফুটো ঠিক করে নিলো।

হ্যান্সের বাবার চিকিৎসা সফল হয়েছিলো। সে তার হারানো স্মৃতিশক্তি ফিরে পেলো। বোয়েকম্যানের সমস্যাও মিটে গেলো।

বোয়েকম্যান হ্যান্সকে মেডিক্যাল স্কুলে ভর্তি করে দিলো এবং সে হয়ে গেলো শহরের একজন সফল ডাক্তার। আর তার বোন গ্রিটেলও বড় হতে লাগলো।

লেখক: ব্লগার ও কথাসাহিত্যিক। প্রকাশিত গল্পের বই ‘পাহাড় আর নদীর গল্প’, উপন্যাস ‘একদিন অহনার অভিবাসন’