চিনুয়া আচেবের গল্প: বাঁশি

নাইজেরিয়ার কবি ও সাহিত্যিক চিনুয়া আচেবে। তার গল্প 'দ্য ফ্লুট’ প্রকাশিত হয় ১৯৭৭ সালে। এটি নাইজেরিয়ার নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী 'ইকবো' লোককাহিনি।

মাজহার সরকারমাজহার সরকারমূল: চিনুয়া আচেবে
Published : 7 Jan 2018, 10:27 AM
Updated : 23 August 2022, 12:43 PM

এক গ্রামে ছিলো এক কৃষক। তার দুটো স্ত্রী। প্রথম স্ত্রীর অনেক ছেলেমেয়ে, দ্বিতীয় স্ত্রীর একটি মাত্র ছেলে।

দ্বিতীয় স্ত্রী তার ছেলেকে নিয়ে গ্রাম থেকে অনেক দূরে সীমান্তের কাছাকাছি বসবাস করে, কাজ করে একটা খামারে। খামারের কাছেই আছে ভয়ানক প্রেতাত্মাদের জমি, ভুলেও কেউ ওদিকে পা বাড়ায় না।

রাত হলেই প্রেতাত্মারা কবর ও গুহা থেকে বের হয়ে আসে। তাই সন্ধ্যা হওয়ার আগেই মা ও তার একমাত্র ছেলে বাড়ি ফেরে।

একদিন বাড়ি ফিরে ছেলেটি দেখলো বনের মাঠে ভুল করে সে তার বাঁশি ফেলে এসেছে। বাঁশিটি সে নিজ হাতে তৈরি করেছিলো, তাই তার মন ছটফট করছে। কিন্তু তার মা-বাবা এখন বাইরে যেতে নিষেধ করলো।

তবুও ছেলেটি সেই সন্ধ্যায় খামারের দিকে রওয়ানা দিলো। সূর্য ডুবে ডুবে অবস্থা। চারদিক অন্ধকার থেকে আরও অন্ধকার হয়ে আসছে। খামারে পৌঁছে ছেলেটি দেখলো প্রেতাত্মারা ইতোমধ্যে বাইরে বেরিয়ে গেছে।

তাদের এক নেতা ছেলেটিকে দেখে বললো, ‘হুহু হা হা হা। এই ছেলে! কে তোমাকে এখানে পাঠিয়েছে? এখানে তুমি কী খুঁজছো? মাটিতে পোঁতা লাশের গন্ধে ঘুরঘুর করা মাছি কি তোমাকে বলেনি আমরা এসময় বের হই?’

ছেলেটি জানালো সে তার হারানো বাঁশি খুঁজে পেতে এখানে এসেছে। প্রেতাত্মা বললো, ‘তুমি কি তোমার হারানো বাঁশি দেখলে চিনতে পারবে?’ ছেলেটি বললো, ‘হ্যাঁ, কারণ সেটা আমি নিজ হাতে বানিয়েছি।’

প্রেতাত্মা একটা সোনার বাঁশি দেখালো ছেলেটিকে। ছেলেটি বললো, ‘না না। এটা আমার বাঁশি নয়।’ প্রেতাত্মা তখন বের করলো চকচকে একটা বাঁশি। ছেলেটি আবার বললো, ‘না, এটাও নয়।’

তখন প্রেতাত্মা বের করলো একটা বাঁশের বাঁশি। ছেলেটা ওটা দেখেই বললো, ‘হ্যাঁ এটাই আমার বাঁশি।’ এতে প্রেতাত্মারা খুশিতে গান গাইতে শুরু করে দিলো।

ছেলেটির সততায় প্রেতাত্মাদের নেতা খুব খুশি হলো। সে ছেলেটিকে কিছু উপহার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো। সামনে এনে রাখা হলো বিশেষ গুণের দুটো পাত্র, একটা আকারে বড়, আরেকটা ছোট।

পাত্র দুটো দেখিয়ে নেতা বললো, ‘বলো, কোনটা নিতে চাও?’ ছেলেটা ছোট পাত্র বেছে নিলো। এ ছোট পাত্রের গুণ হলো এটা তাদের পরিবারের জন্য খাদ্য ও সম্পদ এনে দেবে।

ছেলেটি যখন বাড়ি ফিরে এলো তার হাতে এমন উপহার দেখে কৃষকের প্রথম স্ত্রীর খুব হিংসে হলো। সব শুনে সেও তার বড় ছেলেকে বাঁশি দিয়ে পাঠালো খামারের পাশে ওই প্রেতাত্মার জমিতে।

কিন্তু আগের মতো প্রেতাত্মা নেতা যখন সোনার বাঁশি দেখালো, প্রথম স্ত্রীর বড় ছেলে বললো, ‘হ্যাঁ, এটাই আমার।’ এরপর যখন তার সামনে দুটো পাত্র রাখা হলো, সে বড় পাত্রটা বেছে নিলো।

সোনার বাঁশি ও বড় পাত্র নিয়ে বড় ছেলে বাড়ি ফিরে এলো। তার মা এগুলো পেয়েই কেউ যেন না দেখতে পায় তাই দরজা বন্ধ করে লুকিয়ে ফেললো।

কিন্তু বড় পাত্রটা ছিলো রোগ, শোক আর দুঃখের আধার। ঘরের চারদিকে কুষ্ঠসহ আরও ভয়ানক রোগ ছড়াতে লাগলো। এতে কৃষকের প্রথম স্ত্রীর সব ছেলেমেয়ে মারা গেলো।

পরদিন সকালে কুটিরের ভেতর কান্নাকাটি শুনে কৃষক তার দরজা বাইরে থেকে খুলে দিলো। আর তখনই সে ঘর থেকে পৃথিবীতে সব খারাপ রোগ আর মন্দ কাজ ছড়িয়ে গেলো।

কিডজ ম্যাগাজিনে বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!