যে ঘরে অনেক বই থাকে

যে ঘরে অনেক বই থাকে তাকে আমরা বলি গ্রন্থাগার, পাঠাগার বা লাইব্রেরি।

কিডস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Dec 2017, 10:13 AM
Updated : 9 Dec 2017, 10:16 AM

‘গ্রন্থাগার’ শব্দটিকে সন্ধি বিচ্ছেদ করলে হয় গ্রন্থ+আগার। ‘আগার’ মানে হলো ঘর, ভবন বা জায়গা। গ্রন্থাগার মানে হলো যেখানে বই রাখা হয়।

তোমরা যারা বই পড়তে ভালোবাসো তারা নিশ্চয় পড়ার টেবিলে বই সাজিয়ে রাখো। পড়ার টেবিলে ও বইয়ের তাকে এভাবে বই রাখাও একটা গ্রন্থাগার। এটাকে বলা যায় ‘ব্যক্তিগত গ্রন্থাগার’।

এছাড়া আরও কয়েক রকম গ্রন্থাগার আছে। যেমন- গণগ্রন্থাগার, বিদ্যালয় গ্রন্থাগার, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার, গবেষণা গ্রন্থাগার, বিশেষ গ্রন্থাগার, সরকারি গ্রন্থাগার, ভ্রাম্যমাণ গ্রন্থাগার ও সামাজিক গ্রন্থাগার।

নিউ ইয়র্কের রাস্তায় পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট গ্রন্থাগার

সবচেয়ে বড় গ্রন্থাগার ‘লাইব্রেরি অব কংগ্রেস’

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার ‘লাইব্রেরি’ প্রবন্ধে লিখেন, “মহাসমুদ্রের শত বৎসরের কল্লোল কেহ যদি এমন করিয়া বাঁধিয়া রাখিতে পারিত যে, সে ঘুমাইয়া পড়া শিশুটির মতো চুপ করিয়া থাকিত, তবে সেই নীরব মহাশব্দের সহিত এই লাইব্রেরির তুলনা হইত।”

আজ আমরা গ্রন্থাগার নিয়ে কিছু তথ্য জানবো-

১. প্রাচীনকালে গ্রন্থাগার কেবল রাজবংশের লোক ও অভিজাতরা ব্যবহার করতো। সমাজের সব মানুষ তা করতে পারতো না। সময়ের বিবর্তন, মুদ্রণযন্ত্র ও কাগজ-কালির আবিষ্কারের পর গ্রন্থাগারের চর্চা সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়ে।

২. পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট গ্রন্থাগার আছে নিউ ইয়র্কের রাস্তায়। প্রায় ৩০ থেকে ৪০টি বইয়ের এ গ্রন্থাগারে কেবল একজন পাঠকের ঢোকার জায়গা আছে। একে বলা হয় ‘লিটল ফ্রি লাইব্রেরি’। যুক্তরাজ্যের লন্ডন কিংবা নেদারল্যান্ডসেও এমন ছোট গ্রন্থাগার দেখা যায়।

৩. পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গ্রন্থাগার হলো ‘লাইব্রেরি অব কংগ্রেস’। ১৮০০ সালে প্রতিষ্ঠিত এ গ্রন্থাগারে ১৫৮ মিলিয়ন প্রকারের বই রয়েছে। গ্রন্থাগারে বইয়ের তাকগুলো মোট ৮৩৮ কিলোমিটার দীর্ঘ।

৪. পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু গ্রন্থাগারটি আছে চীনের সাংহাইয়ের জেডাব্লিউ ম্যারিওট হোটেলে। হোটেলটির ৬০ তলায় এটি অবস্থিত। গিনেস বিশ্ব রেকর্ড বলছে মাটি থেকে এ গ্রন্থাগারের উচ্চতা ২৩০.৯ মিটার।

আলেকজান্দ্রিয়া রাজ গ্রন্থাগার, মিশর

ভেনিজুয়েলায় খচ্চরের পিঠে ভ্রাম্যমাণ গ্রন্থাগার

৫. পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো গ্রন্থাগার কোনটি তা এক বাক্যে বলা কঠিন। তবে পৃথিবীর প্রাচীনতম গ্রন্থাগারের কয়েকটি হলো- আলেকজান্দ্রিয়ার রাজ গ্রন্থাগার, ভ্যাটিকান অ্যাপস্টিক গ্রন্থাগার, নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার, সেইন্ট ক্যাথেরিন আশ্রম গ্রন্থাগার, চেক প্রজাতন্ত্রের জাতীয় গ্রন্থাগার ও অস্ট্রিয়ার জাতীয় গ্রন্থাগার ইত্যাদি।

৬. পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গাড়িতে করে ভ্রাম্যমাণ গ্রন্থাগার রয়েছে। এগুলো পাঠকের কাছে গিয়ে বই পৌঁছে দেয়। বাংলাদেশে এ কাজটি প্রথম চালু করে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র।

৭. ভেনিজুয়েলায় মমবয় বিশ্ববিদ্যালয় দুটো খচ্চরকে ভ্রাম্যমাণ গ্রন্থাগার হিসেবে ব্যবহার করে। এরা পাহাড়ি গ্রামে মানুষদের কাছে বই পৌঁছে দেয়। গ্রামের লোকেরা একে বলে ‘বিবলিউমুলা’, বাংলায় ‘বইয়ের খচ্চর’!

৮.  ১৮৫৪ সালে বর্তমান বাংলাদেশে চারটি গণগ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠিত হয়। এগুলো হলো- বগুড়া উডবার্ন গণগ্রন্থাগার, রংপুর গণগ্রন্থাগার, যশোর ইনস্টিটিউট গণগ্রন্থাগার ও বরিশাল গণগ্রন্থাগার।

৯. তাছাড়া আরও কিছু পুরনো গ্রন্থাগার হলো- ঢাকার রাজা রামমোহন রায় লাইব্রেরি (১৮৭১), নর্থব্রুক হল লাইব্রেরি (১৮৮২), সিরাজগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরি (১৮৮২), রাজশাহী সাধারণ গ্রন্থাগার (১৮৮৪), কুমিল্লা বীরচন্দ্র গণপাঠাগার (১৮৮৫), অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরি (১৮৯০), রাজশাহীর শাহ মখদুম ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরি (১৮৯১), নোয়াখালী টাউন হল ও পাবলিক লাইব্রেরি (১৮৯৬), খুলনার উমেশচন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরি (১৮৯৬), সিলেটের প্রাইজ মেমোরিয়াল লাইব্রেরি (১৮৯৭), নাটোরের ভিক্টোরিয়া পাবলিক লাইব্রেরি (১৯০১), চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যালিটি পাবলিক লাইব্রেরি (১৯০৪), ঢাকার রামমোহন পাবলিক লাইব্রেরি (১৯০৬) ও মুন্সিগঞ্জের হরেন্দ্রনাথ পাবলিক লাইব্রেরি (১৯০৮)।