ক্লেয়ার বিশপের গল্প: পাঁচ চীনা ভাই

এককালে ছিলো পাঁচ চীনা ভাই। তারা ছিলো দেখতে একই রকম। তারা তাদের মায়ের সঙ্গে সমুদ্রের তীরে বাস করতো।

মাজহার সরকারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Nov 2017, 01:54 PM
Updated : 5 Nov 2017, 01:54 PM

পাঁচ ভাইয়ের আছে পাঁচটি বিশেষ গুণ। প্রথম চীনা ভাই সমুদ্র গিলে ফেলতে পারে, দ্বিতীয় চীনা

ভাইয়ের আছে লোহার গলা, তৃতীয় চীনা ভাই তার পা বড় করতে পারে, চতুর্থ চীনা ভাই আগুনে পুড়ে যায় না আর পঞ্চম চীনা ভাই তার শ্বাস অনেকক্ষণ ধরে রাখতে পারে।

প্রথম চীনা ভাইয়ের শখ হলো সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া। আবহাওয়া যতো খারাপই হোক না কেন, সে ঠিক গ্রামে ফিরে আসে। সমুদ্র থেকে মাছ ধরে এনে ভালো দামে বাজারে বেচে।

একদিন সে মাছ ধরতে যাবে আর গ্রামের এক ছোট্ট ছেলে গোঁ ধরলো তাকেও সঙ্গে নিতে হবে। প্রথম চীনা ভাই রাজি হলো না। কিন্তু ছোট্ট ছেলে যাবেই যাবে।

অবশেষে প্রথম চীনা ভাই বললো, “আচ্ছা, সঙ্গে নেবো। কিন্তু আমার কথা শোনতে হবে।” শর্তে রাজি হলো ছোট্ট ছেলেটি।

সমুদ্রে গিয়ে প্রথম চীনা ভাই সমুদ্রের সব পানি গিলে ফেললো। এতে সমুদ্রের সব মাছ আর লুকোনো সোনাদানা স্পষ্ট দেখা যেতে লাগলো। আর তা দেখতে পেয়ে ছোট্ট ছেলে আনন্দে সৈকত ধরে নাচতে নাচতে সমুদ্রের তলে নেমে গেলো।

যেতে যেতে সে পকেটে পুরতে লাগলো সুন্দর সুন্দর কাঁকড়া আর নানা রঙের পাথর। কিন্তু ততক্ষণে মুখের ভেতর বেশিক্ষণ পানি ধরে রাখতে পারছিলো না প্রথম চীনা ভাই।

সে ক্লান্ত হয়ে পড়ছে। এদিকে ছোট্ট ছেলেটাও তার কথা না মেনে ফিরে আসতে দেরি করছে।

প্রথম চীনা ভাই অবশেষে চিৎকার করে ওঠলো, “ফিরে আসো, ফিরে আসো”। এতে তার মুখ থেকে কিছু পানি গেলো বেরিয়ে। কিন্তু ছোট্ট ছেলে সমুদ্রের তলে আনন্দে দৌড়াচ্ছে আর দৌড়াচ্ছে। কে শোনে কার কথা! ডাক শোনে সে সমুদ্রের আরও ভেতরে যেতে লাগলো।  

এদিকে মুখের ভেতর সমুদ্রের সব পানি নিয়ে আরও ক্লান্ত হয়ে পড়লো প্রথম চীনা ভাই। সে যতই ডাকাডাকি করে ছোট্ট ছেলে তার কথা কোনভাবেই শুনছে না।

হঠাৎ প্রথম চীনা ভাইয়ের মুখ ফসকে সব পানি বেরিয়ে গেলো। শুকিয়ে যাওয়া সমুদ্র আবার ভরে গেলো পানিতে। চোখের পলকে সমুদ্রের তল পানিতে ভরে ওঠলো। কলকল শো শো গর্জন করে উঠলো বড় বড় ঢেউ। ঢেউয়ের তোড়ে পানির গভীরে অদৃশ্য হয়ে গেলো কথা না শোনা ছোট্ট ছেলে।

বিকেলে প্রথম চীনা ভাই একা গ্রামে ফিরে আসে। এরমধ্যে ছোট্ট ছেলে পানিতে ডুবে যাওয়ার খবর গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে। পুলিশ এসে গ্রেপ্তার করে প্রথম চীনা ভাইকে, নিয়ে যায় জেলে।

আদালতে বিচারক মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিলেন। তখন প্রথম চীনা ভাই বললো, “মহামান্য, ঘরে আমার মা আছেন। মায়ের সঙ্গে শেষবার দেখা করতে চাই।”

বিচারক বললেন, “আচ্ছা যাও, দেখা করে এসো।”

প্রথম চীনা ভাই বাড়িতে গেলো আর তার জায়গায় ফিরে এলো দ্বিতীয় চীনা ভাই যার আছে লোহার গলা।

মৃত্যুদণ্ডের দিন গ্রামের সব লোক জড়ো হলো। জল্লাদ তার তলোয়ার নিয়ে দ্বিতীয় চীনা ভাইয়ের গলায় আঘাত করলো। কিন্তু তার গলা লোহার তৈরি বলে মাথা কাটা গেলো না। তখন বিচারক সিদ্ধান্ত দিলেন, আসামিকে পানিয়ে ডুবিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে।

কিন্তু দ্বিতীয় চীনা ভাই উঠে দাঁড়ালো ও হাসলো। সে বিচারককে বললো, “মহামান্য, ঘরে আমার মা আছেন। মায়ের সঙ্গে শেষবার দেখা করতে চাই।”

বিচারক বললেন, “আচ্ছা যাও, দেখা করে এসো।”

দ্বিতীয় চীনা ভাই বাড়িতে গেলো আর তার জায়গায় ফিরে এলো তৃতীয় চীনা ভাই যে তার পা অনেক বড় করতে পারে।

মৃত্যুদণ্ডের দিন গ্রামের সব লোক জড়ো হলো। জল্লাদ তৃতীয় চীনা ভাইকে মাথায় তুলে ছুঁড়ে মারলো গভীর সমুদ্রে। কিন্তু সে তার পা বড় করতে পারে বলে ডুবে গেলো না। তখন বিচারক সিদ্ধান্ত দিলেন, আসামিকে আগুনে ফেলে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে।

কিন্তু তৃতীয় চীনা ভাই উঠে দাঁড়ালো ও হাসলো। সে বিচারককে বললো, “মহামান্য, ঘরে আমার মা আছেন। মায়ের সঙ্গে শেষবার দেখা করতে চাই।”

বিচারক বললেন, “আচ্ছা যাও, দেখা করে এসো।”

তৃতীয় চীনা ভাই বাড়িতে গেলো আর তার জায়গায় ফিরে এলো চতুর্থ চীনা ভাই যে আগুনে পোড়ে না।

মৃত্যুদণ্ডের দিন গ্রামের সব লোক জড়ো হলো। এবার গ্রামের লোকজন রেগে আছে। যে করেই হোক এমন অপরাধীর শাস্তি পেতেই হবে। তারা যে যেখানে পারে শুকনো লাকড়ি নিয়ে এলো, আগুন জ্বালালো।

জল্লাদ চতুর্থ চীনা ভাইকে মাথায় তুলে ছুঁড়ে মারলো লাল আগুনে। গ্রামের লোক বাইরে অপেক্ষা করতে লাগলো, কেউ ঘরে ফিরে যায়নি। সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করলো।

তারপর সকালে প্রায় নিভুনিভু আগুন থেকে চতুর্থ চীনা ভাই বের হয়ে হাই তুলে বললো, “বেশ ভালো একটা ঘুম হলো।”

তখন বিচারক সিদ্ধান্ত দিলেন, “আসামি নিশ্চয়ই নির্দোষ।”

চতুর্থ চীনা ভাই বললো, “আমরা আমাদের প্রত্যেকের গুণের মধ্যে মুক্তি পেতে চেষ্টা করেছি।”

জড়ো হওয়া গ্রামের মানুষ চিৎকার করে ওঠলো, “হ্যাঁ হ্যাঁ, তারা নির্দোষ। তারা নির্দোষ।”

তারপর পাঁচ চীনা ভাই ও তাদের মা আনন্দের সঙ্গে বসবাস করতে লাগলো।

অনুবাদকের কথা: ক্লেয়ার হুচেতে বিশপের ‘দ্যা ফাইভ চাইনিজ ব্রাদার্স’ শিরোনামে এ গল্পের বইটি ১৯৩৮ সালে ‘কুওয়ার্ড-ম্যাককেন’ থেকে প্রকাশিত হয়। বইটির অলঙ্করণ করেছেন কার্ট উইজি।