ইচ্ছা হয় আবার সেই সময়ে ফিরে যাই। ছুঁয়ে দেখি সেই আমাকে।
Published : 29 Mar 2025, 11:44 AM
জীবনে কিছু সময় থাকে যা কখনই ফিরে পাওয়া যায় না। হয়ত সেসব মুহূর্তকে সবসময় মনে পড়তেই থাকে। ইচ্ছা হয় আবার সেই সময়ে ফিরে যাই। ছুঁয়ে দেখি সেই আমাকে।
কিন্তু জীবনের নিষ্ঠুর সত্য এই যে সবসময় সব ইচ্ছা পূরণ হয় না। শহরের একঘেয়ে যে জীবনচক্র – স্কুল থেকে বাসা, বাসা থেকে স্কুল তার মাঝে যে সময়টুকু নিজের জন্য পাই, মাঝেমাঝে ফিরে যাই। ছোটবেলার কিছু অতীতে।
আমার মগজ তখন হয়ে উঠতে থাকে ছোটবেলার সেই আমার মতো, হাত পা সবই যেন সেই ছোটবেলার আমার মতো হয়ে উঠতে থাকে। ছোটবেলার সেইসব দুষ্টুমিতে আবার ফেরত চলে যাই কিছুক্ষণের জন্য।
আগুন – জিনিসটা যতটা উপকারী ততই ভয়ঙ্কর। ছোটবেলায় চুলার নীলাভ শিখার দিকে তাকিয়ে থাকতাম। ভাবতাম, কেন কিছু আগুনের স্পর্শে এলেই আগুন তাকে গ্রাস করে? যে কোনো কিছু আগুন কীভাবে কালো ছাইয়ে রূপান্তর করে? এসব নিয়ে চিন্তা করেই বেশ কিছুদিন কাটলো। একদিন হঠাৎ ভাবি এত চিন্তা করে কী লাভ? নিজেই একটু দেখি না!
পরে একদিন। রান্নাঘরে অবহেলায় বাতিটা জ্বলছিলো। চুলার উপর একটা পাত্র। চুলার আগুনের সাথে তার খুবই জীবনমরণ খেলা চলছে। এরই মধ্যে আমার আগমন। হাতে রান্নাঘর পরিষ্কার করার ন্যাকড়া ধরে মোক্ষম সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম। যখন আগুনের তেজ বাড়তে লাগলো, তখনই ন্যাকড়াটা আগুনে ছেড়ে দিই।
সেই মুহূর্তে আমার এক আপু রান্নাঘরে আপনমনে আসছিলেন। আগুনের সাথে পাঞ্জা লড়া সেই ন্যাকড়াটি দেখে চেঁচিয়ে চুলা বন্ধ করে কাপড়টি পানিতে ফেললেন।
এ তো গেল কেবল একটি ঘটনা। আরেকদিন রাস্তায় সম্ভবত বাবার সাথে বেরিয়েছি। এক মুরগি বিক্রেতা ‘এই মুরগি, এই মুরগি’ বলে হেঁকে যাচ্ছিলেন। আমি তখন তাকে অনুকরণ করে চেঁচিয়ে ‘এই খারগি’ বলে ডেকে বাসার দিকে দৌড় লাগাই। হয়তো উনি রাগ করেছিলেন। বা ছেলেমানুষি কাণ্ড দেখে মনে মনে খুব হেসেছিলেন।
ছোটবেলায় বাড়িটাই যেন আমার কাছে স্বর্গ। আমার বাসার প্রতিটা রুম তখন আমার কাছে খুব শান্তিপূর্ণ জায়গা ছিলো। খেলনা নিয়ে খেলে, টিভি দেখে আর বিভিন্ন দুষ্টুমির চিন্তা করেই সারাটাদিন কাটিয়ে দিতে বেশ লাগতো। তখনও জানতাম না কয়েকদিন পর আমার এই জীবনযাত্রায় বেশ বড় এক পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে।
সেই পরিবর্তনের নাম ছিলো স্কুল। প্রথম যেদিন বাবা-মার সাথে স্কুলে যাই, সেদিন মনে হলো জায়গাটা জানি কেমন। খুব বড়। চারদিকে শুধু অপরিচিত অজস্র মুখ। তারপর বাবা-মা আমাকে সেখানে রেখে অফিসে গেলেন। আমার কান্নাকাটির প্রথম পর্ব তখন শুরু হলো। তারপর পাশে থাকা শিক্ষকদের কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকলাম, ‘বাড়িতে যাবো।’ কখনো আবার বলি, ‘মাকে ফোন দাও। বাবাকে আসতে বলো।’
আরেকটি ঘটনা। আমার বাবা আমাকে স্কুলে নিয়ে গেছেন। স্কুলের গেটের সামনে যে রিকশা থেকে নামলাম, ভেতরে না ঢুকে উলটো রাস্তায় দৌড়ানো শুরু করলাম। বেশিদূর যেতে হলো না। একটু গিয়েই পড়ে গেলাম হোঁচট খেয়ে। দুই হাঁটু গেল ছিলে। তারপর সেই রাস্তায় বসেই কান্না শুরু করলাম।
আমার বাবা ততক্ষণে সেখানে হাজির। পরে অন্যান্যদের সাহায্যে আমার দুই হাঁটুতে ব্যান্ডেজ করে, বাসায় ফেরত নিয়ে এলেন।
এসবই আমার দুষ্টুমিভরা ছোটবেলা। জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময়ও ছিলো। এখন যদি সাত রাজার ধনও পাই, সেই তৃপ্তির ছোটবেলা কি আর ফিরে পাবো?