পোড়াবাড়ির চমচমের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো ইতিহাস।
Published : 15 Jul 2023, 08:44 PM
শীতের ছুটিতে আমরা পুরো পরিবার টাঙ্গাইল বেড়াতে গিয়েছিলাম। টাঙ্গাইলে আমার মামা থাকেন, তার আমন্ত্রণেই আমরা সেখানে গিয়েছি।
খুব সকালে রওনা দিয়ে দুপুরের আগেই পৌঁছে গেলাম। প্রথমে আমরা মামার অফিসে গেলাম, সেখানে দেখলাম আমাদের জন্য নাস্তার বিশাল আয়োজন। নাস্তা করার পর মামা বললো, সবাই এবার একটু রেস্ট নাও। বিকেলে আমরা সরিষাক্ষেত দেখতে যাবো।
দুপুরে ভাত খেয়েই আমরা বেরিয়ে পড়লাম। কি যে সুন্দর! চারপাশে হলুদ আর হলুদ। আমরা সরিষাক্ষেতে নেমে অনেকদূর পর্যন্ত হাঁটলাম আর অনেক ছবি তুললাম। সন্ধ্যা হতে হতে মামা বললো, চলো এবার যাওয়া যাক।
ফেরার পথে মামা আমাদের নিয়ে একটা হোটেলে গেলো। অনেক খাবারের আইটেম ছিল, সঙ্গে ছিল টাঙ্গাইলের বিখ্যাত মিষ্টি ‘চমচম’। চমচম এর আগেও খেয়েছি, নামও জানতাম। কিন্তু কখনো এর ইতিহাস জানিনি। তখন মামা এর ইতিহাস বলতে লাগলো।
পোড়াবাড়ির চমচমের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে প্রায় ২০০ বছরের পুরনো ইতিহাস। ইতিহাস বলছে, দশরথ গৌড় নামে এক ব্যক্তি ব্রিটিশ শাসনামলে আসাম থেকে টাঙ্গাইলের যমুনা নদীর তীরবর্তী পোড়াবাড়িতে আসেন। তিনি যমুনার পানি ও গরুর খাঁটি দুধ দিয়ে প্রথমে চমচম তৈরি শুরু করেন। পরে সেখানেই মিষ্টির ব্যবসা শুরু করেন তিনি।
এর আগে ১৬০৮ সালে পোড়াবাড়ি গ্রামটিকে নদীবন্দর হিসেবে গড়ে তোলা হয়। সে সময়কালে ধলেশ্বরীর পশ্চিম তীরে গড়ে উঠেছিল জমজমাট ব্যবসাকেন্দ্র পোড়াবাড়ি বাজার। তখন পোড়াবাড়ি ঘাটে ভিড়তো বড় বড় সওদাগরি নৌকা, লঞ্চ ও স্টিমার। এ বাজারে যোগ হয় সুস্বাদু চমচম, গড়ে ওঠে মিষ্টির বাজার। ধীরে ধীরে পোড়াবাড়িতে চমচম তৈরির প্রায় অর্ধশত কারখানা গড়ে ওঠে।
চমচমের গড়ন অনেকটা লম্বাটে। হালকা আঁচে পোড়খাওয়া বলে রঙটা তার গাঢ় বাদামি। বাইরে থেকে দেখতে অনেকটা পোড়া ইটের মতো। বাইরেরটা একটু শক্ত হলেও এর ভেতরের অংশ একেবারে নরম আর রসে টইটম্বুর। লালচে গোলাপি আভাযুক্ত ভেতরের নরম অংশের প্রতিটি কোষ কড়া মিষ্টিতে পূর্ণ। ঘন রস আর টাটকা ছানার গন্ধমাখা এ মিষ্টির স্বাদ অতুলনীয়। সুস্বাদু চমচম তৈরির মূল উপাদান দুধ, চিনি, পানি, সামান্য ময়দা ও এলাচ দানা।
চমচমের ইতিহাস শুনছিলাম আর চমচম খাচ্ছিলাম। আসলেই অনেক মজার মিষ্টি। আমরা ঢাকায় ফেরার পথে আরো কয়েক প্যাকেট মিষ্টি নিয়ে আসলাম।
মুরসালীন আবদুল্লাহ: সপ্তম শ্রেণি, কসমোপলিটান স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা
[লেখাটি ২০২৩ সালে কিডজ ঈদ সংখ্যার ছাপা সংস্করণে প্রকাশিত]